২৩ জানুয়ারি, ২০১৯ ১২:৪০

জাতিসংঘে বাংলাদেশকে আরও গৌরবান্বিত করার অঙ্গীকার কূটনীতিকদের

এনআরবি নিউজ, নিউইয়র্ক থেকে :

জাতিসংঘে বাংলাদেশকে আরও গৌরবান্বিত করার অঙ্গীকার কূটনীতিকদের

নতুন বছরের কর্মসূচি আলোকে গণমাধ্যম কর্মীদের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময়কালে বক্তব্য দেন রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন।

‘নতুন বছরেও জাতিসংঘে রোহিঙ্গা ইস্যুতে আন্তর্জাতিক জনমত আরো সুসংহত করতে বাংলাদেশকে সোচ্চার থাকতে হবে। এটিই হচ্ছে এ বছরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি ইস্যু। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ অনুযায়ী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে এ মোমেনের সার্বিক তত্বাবধানে অর্থনৈতিক কূটনীতিতে সরব থাকবে বাংলাদেশ। বিগত দিনগুলোতে জাতিসংঘের বিভিন্ন ফোরামে বিচক্ষণতাপর্ণ কাজের মাধ্যমে বাংলাদেশ মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছে, সেটি আরো ঊর্ধ্বে উঠাতে বাংলাদেশ মিশন তার প্রয়াস অব্যাহত রাখবে’-এসব কথা বলেন জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন।
 
প্রতি বছরের ন্যায় এবারও জাতিসংঘে বাংলাদেশ মিশনের বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে নতুন বছর-২০১৯ কে স্বাগত জানিয়ে গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় স্থানীয় সাংবাদিকদের সাথে শুভেচ্ছা ও মতবিনিময় অনুষ্ঠানের আয়োজন করে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশন। সে সময়েই রাষ্ট্রদূত মাসুদ তার স্বাগত বক্তব্যে জাতিসংঘে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ এবং সাফল্যের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। বহুপাক্ষিক ফোরাম এবং দ্বিপাক্ষিক ফোরামে কাজের ধরণ, ভিন্নতা এবং সাফল্য অর্জনের মাপকাঠির বিষয়েও তিনি বিষদ ব্যাখ্যা দেন। জাতিসংঘের মত আন্তর্জাতিক ফোরামে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের অংশগ্রহণের বিষয়গুলো অত্যন্ত সহজভাবে সারাবছর প্রবাসী বাঙালিসহ দেশের জনগণের মাঝে সংবাদের মাধ্যমে উপস্থাপনের জন্য সাংবাদিকদের ধন্যবাদ জানান স্থায়ী প্রতিনিধি। 
 
রাষ্ট্রদূত মাসুদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে এবং বিচক্ষণ কূটনৈতিক প্রজ্ঞায় জাতিসংঘের সাথে বাংলাদেশ অত্যন্ত ঘনিষ্ট সম্পর্ক বজায় রেখে চলেছে। এই সম্পর্ক উত্তরোত্তর বৃদ্ধি এবং বাংলাদেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোর আরও সাফল্যের সাথে জাতিসংঘে তুলে ধরতে স্থায়ী মিশন নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। 
 
নতুন বছর ২০১৯ সালে জাতিসংঘে বাংলাদেশের যে সকল বিষয় বিশেষভাবে গুরুত্ব পাবে এবং যে সকল চ্যালেঞ্জ রয়েছে সে সমন্ধে আলোকপাত করেন রাষ্ট্রদূত মাসুদ। এক্ষেত্রে তিনি রোহিঙ্গা ইস্যু, এসডিজি বাস্তবায়ন, বৈশ্বিক স্বাস্থ্য, বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের কথা উল্লেখ করেন।
 
বাংলাদেশ মিশনের উপ-স্থায়ী প্রতিনিধি তারেক মো. আরিফুল ইসলাম ২০১৮ সালের গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম ও অর্জনের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য সাংবাদিকদের সামনে উপস্থাপন করেন।
 
রোহিঙ্গা ইস্যুতে উপ-স্থায়ী প্রতিনিধি বলেন, ‘সাধারণ অধিবেশন ও নিরাপত্তা পরিষদে আমাদের এ নিরন্তর, কৌশলী ও দ্বিমুখী আউটরিচ শুধু নিউইয়র্কেই সীমাবদ্ধ ছিল না। আমরা বাংলাদেশে অবস্থিত বিদেশী দূতাবাসসমূহ এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থিত আমাদের মিশনগুলোকে এ জন্য কাজে লাগিয়েছি। জেনেভাতে মানবাধিকার কাউন্সিলে মিয়ানমারের উপর একটি রেজ্যুলেশন বিপুল ভোটে গৃহীত হয়েছে। জেনেভাতে আমাদের স্থায়ী মিশন এ বিষয়ে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। এজন্যই রোহিঙ্গা সমস্যা জাতিসংঘে এবার এতটাই আলোচিত হয়েছে।’ 
 
‘এ সবই সম্ভব হয়েছে আমাদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টার পাশাপাশি ওআইসি, সৌদিআরব, তুরস্ক এবং জাতিসংঘ মহাসচিবের জোরালো সমর্থনের কারণে। গত বছরও আপনাদের বলেছিলাম, এ বছরও বলছি এ পর্যন্ত যে সাফল্য আমরা পেয়েছি তা অত্যন্ত আশাপ্রদ ও গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু যথেষ্ট নয়। জাতিসংঘের ও আন্তর্জাতিক মহলের সজাগ নজর ও সহানুভূতি আমরা এ সমস্যার উপর বজায় রাখতে এ পর্যন্ত আমরা সফল হয়েছি। কিন্তু চূড়ান্ত সফলতা আসবে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের মধ্য দিয়ে। সে লক্ষ্যে আমাদের প্রচেষ্টা নতুন বছরেও চলমান থাকবে’প্রত্যাশা উপ-স্থায়ী প্রতিনিধির। 
 
জাতিসংঘে বাংলাদেশের গুরুত্ব আলোকে তারেক মো. আরিফুল ইসলাম উল্লেখ করেন, ‘জাতিসংঘের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ নেগোসিয়েশন সমূহ পরিচালনার মাধ্যমে সহমত আনয়ন বহুপাক্ষিক কুটনীতির একটি অন্যতম মর্যাদাকর কিন্তু কঠিন কাজ। প্রতিবছর অল্প কিছুসংখ্যক দেশকে জাতিসংঘে তাঁদের কার্যক্রমের ভিত্তিতে সাধারণ পরিষদ বা ইকোসক -এর প্রেসিডেন্ট এ দায়িত্ব প্রদান করে। এটিকে জাতিসংঘের ভাষায় ‘ফ্যাসিলিটেশন’ বলে। আমরা এবছর এরকম তিনটি রেজুল্যুশন/ঘোষণাপত্র ফ্যাসিলিটেশন এর দায়িত্ব পেয়েছি এবং সফলতার সঙ্গে সম্পন্ন করেছি। এটি জাতিসংঘে আমাদের দক্ষতাপূর্ণ কার্যক্রমের স্বীকৃতি স্বরুপ।’
 
বাংলাদেশ গত বছর জাতিসংঘের চারটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্থায় নির্বাচিত হয়েছে : হিউম্যান রাইটস কাউন্সিল এ ২০১৯-২০২১ মেয়াদে: কমিশন অব স্টাটাস অব উইমেন -এ ২০১৯-২০২২ মেয়াদে; এবং ইউনিসেফ ও ইউএন উইমেন এর নির্বাহী বোর্ড এ ২০১৯-২০২১ মেয়াদে। এটি বহুপাক্ষিক কূটনীতিতে একটি দায়িত্ববান দেশ হিসেবে বাংলাদেশের উপর বিশ্ব সম্প্রদায়ের আস্থারই প্রতিফলন-উল্লেখ করেন এই কর্মকর্তা।
 
আন্তর্জাতিক এ ফোরামে বাংলাদেশের গণ-কূটনীতির আলোকে উপ-স্থায়ী প্রতিনিধি বলেন, ‘বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন বিশ্ববাসীর নিকট তুলে ধরার জন্য এবং আমাদের জাতীয় স্বার্থ সমুন্নত রাখতে আমরা বছরব্যাপী জাতিসংঘে আমাদের বিভিন্ন প্রাধিকার বিষয় যেমন: অভিবাসন, অটিজম, গনহত্যা, এসডিজি বাস্তবায়ন, তথ্যে প্রবেশাধিকার, সৃজনশীল সরকারি সেবা প্রদান সমুদ্র সম্পদের সংরক্ষণ ও টেকসই ব্যবহার নিয়ে জাতিসংঘের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং খ্যাতনামা থিঙ্ক ট্যাঙ্কদের সঙ্গে নিয়ে বিভিন্ন ইভেন্ট আয়োজন করেছি। নিউইয়র্কভিত্তিক বিভিন্ন থিঙ্ক ট্যাঙ্ক এবং যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যাল গুলোর সঙ্গেও আমরা আমাদের যোগাযোগ বৃদ্ধি করেছি এবং যৌথ অনুষ্ঠান করেছি।’
 
এবারের এই শুভেচ্ছা সমাবেশে নতুন মাত্রা যোগ করেন নিউইয়র্কের বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেলের কনসাল জেনারেল সাদিয়া ফয়জুননেসা। পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে কনস্যুলেটের সেবার সার্বিক বিষয়গুলো উপস্থাপন করেন তিনি। সাদিয়া গতবছরে প্রবাসী বাংলাদেশীদের স্বার্থ রক্ষার যে সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন তা উল্লেখ করেন। কনস্যুলেটের স্থায়ী ভবন তথা বঙ্গবন্ধু ভবন ক্রয়ের জন্যে নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে এ মোমেনের সর্বশেষ তাগিদের উদ্ধৃতি দিয়ে সাদিয়া বলেন, বহুজাতিক এ সমাজ তথা বিশ্বের রাজধানী হিসেবে পরিচিত নিউইয়র্ক সিটিতে বাংলাদেশ ডে প্যারেড করার পরিকল্পনা রয়েছে। আর এভাবেই সমৃদ্ধির পথে ধাবমান বাংলাদেশকে মার্কিন সমাজে আরো সমাদৃত করার লক্ষ্যে নতুন বছরে রয়েছে বিভিন্ন কর্মসূচি।
 
‘জাতিরজনকের স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি অসাম্প্রদায়িক ও উন্নত দেশ গঠনে নিরলসভাবে কাজ করছেন। তারই ধারাবাহিকতায় ডায়াসপোরা ডিপ্লোম্যাসীর মাধ্যমে উন্নত বাংলাদেশ গঠনের অভিষ্ঠ সেই লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য নিউইয়র্ক কন্স্যুলেট সচেষ্ট রয়েছে’-বলেন সাদিয়া। 
 
বিভিন্ন ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথাও উল্লেখ করেন কনসাল জেনারেল। তিনি বিশেষভাবে উল্লেখ করেন, গত এক বছরে ফি’র বিনিময়ে ৩০ হাজার প্রবাসীকে বিভিন্ন ধরনের সার্ভিস দিয়েছেন। এ খাতে আয় হয়েছে ২০ কোটি টাকা। এর বাইরেও শত শত সার্ভিস দেয়া হয় কোন ধরনের ফি ছাড়াই। 
 
অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের ফুল দিয়ে স্বাগত জানানোর পাশাপাশি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রকাশিত নতুন বছরের ডায়েরি ও ক্যালেন্ডার এবং স্থায়ী মিশন প্রকাশিত ২০১৮ সালের প্রেস রিলিজ সংকলন প্রদান করা হয়। 
 
ডিনারের মাধ্যমে সমাপ্ত এই শুভেচ্ছা বিনিময় কর্মসূচির সঞ্চালনা করেন মিশনের ফার্স্ট সেক্রেটারি নূরএলাহি মিনা।  মিশন ও কন্স্যুলেটের কর্মকর্তাগণের মধ্যে আরো ছিলেন এম মনোয়ার হোসেন, সঞ্চিতা হক, নিরুপম দেবনাথ, তৌফিকুর রহমান, ইকবাল আব্দুল হারুন, নূর ই আলম, হুমায়ূন কবীর, আসিফ রহমান, আয়েশা হক এবং শামীম হোসেন। 
 
বিডি-প্রতিদিন/২৩ জানুয়ারি, ২০১৯/মাহবুব

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর