৬ জুলাই, ২০২০ ০৯:২৯

করোনার পর আর্থিক কারণে বহু আমেরিকান বিষন্নতায় আক্রান্ত

লাবলু আনসার, যুক্তরাষ্ট্র

করোনার পর আর্থিক কারণে বহু আমেরিকান বিষন্নতায় আক্রান্ত

শুধু করোনাভাইরাসের তাণ্ডবে নয়, আর্থিক পরিস্থিতি, বর্ণবিদ্বেষমূলক আচরণ ইত্যাদি কারণেও বহু আমেরিকান বিষন্নতায় ভুগছেন। এক ধরনের মানসিক পীড়ায় আক্রান্ত হয়ে পড়েছেন অনেকে। এমন পরিস্থিতি গোটা সমাজ ব্যবস্থায় বিরূপ প্রভাব ফেলছে। বেশ কয়েকমাস লকডাউনে থাকায় প্রতিটি মানুষই অস্বাভাবিক একটি পরিবেশে দিনাতিপাত করতে বাধ্য হয়েছে। আর এ অবস্থায় স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে অনেকেই নানাবিধ সমস্যা অনুভব করছেন। যা আগে কখনো অনুভূত হয়নি।

২৩ এপ্রিল থেকে ৫ মে পর্যন্ত পরিচালিত এক জরিপে দেখা যায় যে, ২৩.৫% আমেরিকানই এক ধরনের মানসিক যন্ত্রণায় নিপতিত হয়েছেন। ন্যাশনাল সেন্টার ফর হেলথ স্ট্যাটিসটিক্স এবং ইউএস সেনসাস ব্যুরো যৌথভাবে এ জরিপ চালায়।

একই সংস্থা কর্তৃক জুনের ১১ থেকে ১৬ তারিখের মধ্যে পরিচালিত অনুরূপ জরিপে দেখা গেছে, মানসিক যন্ত্রণায় আক্রান্তের হার বেড়ে ২৫.১% হয়েছে। গত বছরের জানুয়ারি থেকে জুনের মধ্যে পরিচালিত একই ধরনের জরিপে মাত্র ৬.৬% আমেরিকান মানসিক যন্ত্রণায় ছিল বলে উল্লেখ করেছিলেন।

আটলান্টার ‘সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল এ্যান্ড প্রিভেনশন’ তথা সিডিসির একজন চিকিৎসা-বিজ্ঞানী এ প্রসঙ্গে বলেছেন, আমার মনে হয় এ নিয়ে কারোরই দ্বিধা নেই যে, বহুকাল পরে বড় ধরনের একটি মানসিক স্বাস্থ্য সংকটে পড়েছেন আমেরিকানরা।

ব্রঙ্কসের মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ ড. ডোনা ডিমেত্রী ফ্রাইডম্যান বলেন, চলতি সময়ে নানা ধরনের ভীতি গ্রাস করেছে সকলকে। এটি হতে পারে করোনাভাইরাস অথবা আর্থিক পরিস্থিতি কিংবা শারীরিক বা আবেগজনিত ব্যাপার। তবে সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে কৃষ্ণাঙ্গদের সাথে বর্বরোচিত আচরণের ব্যাপারটি। পুলিশ অথবা অন্য কোন বর্ণের মানুষেরা কৃষ্ণাঙ্গদের সাথে যে আচরণ করছে তা সভ্য সমাজের পরিপন্থি বলে অনেকেই হতাশ।

জরিপে অংশগ্রহণকারিদের মধ্যে ২৫.৬% কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকান বলেছেন যে, তারা খুবই অস্থিরতায় ভোগছেন। সবসময় ভীতি তাড়া করছে। এরপর জুনের ১১ থেকে ১৬ তারিখে একই প্রশ্নের জবাবে এই কৃষ্ণাঙ্গদের ২৮.৩% বলেছেন যে, তারা রাতে ঠিকমত ঘুমাতে পারেন না। সবসময় মনে হয় যে, এই বুঝি কেউ হামলা করলো। পুলিশ দেখলেই ভয়ে পথ চলেন। স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন না একাকী চলতেও।

এমন অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে নিউইয়র্কে ইমোশনাল সাপোর্ট হটলাইন (৮৪৪-৮৬৩-৯৩১৪ ) চালু করা হয়েছে মানসিক বিপর্যয়ে পড়াদের কাউন্সেলিংয়ের জন্যে। এটি করা হচ্ছে বিনামূল্যে। ‘মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা যেভাবে পরামর্শ দেবেন, তা নিজে থেকে কেউই পারবেন না। এজন্যে সকলেরই উচিত এই হটলাইনে যোগাযোগ করা অথবা নিজ নিজ চিকিৎসকের মাধ্যমে মানসিক চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া’-এ কথা বলেছেন কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির সাইকিয়াট্রিস্ট ড. ফারনান্দো ট্যাভারেস।

উল্লেখ্য, করোনা পরবর্তী সময়ে বেশ কিছু দেশে মানসিকভাবে বিপর্যস্তদের জন্যে কাউন্সেলিং সেন্টার খোলা হয়েছে।

জানা গেছে, করোনায় আক্রান্ত হবার পর যারা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন তারাই অধিক হারে মানসিক যন্ত্রণাবোধ করছেন। ৪৯% বলেছেন যে, তারা পুনরায় আক্রান্ত হবার ভীতিতে রয়েছেন। ২৫% বলেছেন যে, তারা কোনভাবেই স্বাভাবিক হতে পারছেন না। ২০% বলেছেন যে, এক ধরনের মনোকষ্ট সবসময় তাড়া করছে। ৮% বলেছেন, নিজেকে একাকী লাগে। 

একইধরনের আরেকটি পর্যবেক্ষণ জরিপ সিঙ্গাপুরের হেলথকেয়ার কর্মীদের মধ্যে পরিচালনা করা হয়েছিল। সেখানকার মাত্র ১৫% বলেছেন যে, তারা মনোকষ্টে ভুগছেন। ৯% কে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে বিষন্নতায় আক্রান্ত হয়ে পড়ায়। অস্বস্তিতে রয়েছেন ৮%। 

বিডি প্রতিদিন/ফারজানা

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর