৯ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০১:১৭

রাঙ্গামাটির রঙে চোখ জুড়ালো...

মো. সাজিদ আহসান

রাঙ্গামাটির রঙে চোখ জুড়ালো...

দেখতে দেখতে এসে গেল শীতকাল। অনেকেই হয়ত মাথার মধ্যে ভ্রমণ পরিকল্পনা সাজাচ্ছেন। কিন্তু কোথায় যাবেন? প্রাকৃতিক নৈসর্গের এ দেশে ঘুরে বেড়ানোর জায়গার কমতি নেই। এদেশে আছে বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত। আছে ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন। আছে হাওড়-বাওড়, পাহাড়, সমুদ্র, চিরহরিৎ বন, প্রাচীন ঐতিহ্য- কতকিছু। এতকিছুর মধ্যে আপনি অনায়াসে বেঁছে নিতে পারেন রাঙ্গামাটি জেলাকে। কেন? এখানে পাবেন একইসঙ্গে হৃদ আর পাহাড়ের অপূর্ব মিতালি। পাবেন আদিবাসী সংস্কৃতি। আছে ঝর্ণা, ঝুলন্ত সেতু; রাতের ঝিঝি পোকার ডাক। রাঙ্গামাটির অপরূপ প্রাকৃতিক নৈস্বর্গ আপনাকে শুধু মোহিত করবে না, আনমনেই হয়ত কণ্ঠে বেজে উঠবে গান- রাঙ্গামাটির রঙে চোখ জুড়ালো.....অথবা গ্রাম ছাড়া ওই রাঙ্গামাটির পথ...।


আগেই জানিয়ে রাখি, এই রাঙ্গামাটি কিন্তু বাংলাদেশের একমাত্র জেলাশহর যেখানে কোনো  রিক্সা চলে না। উঁচু নীচু পাহাড়ি পথ সমগ্র শহর জুড়ে। আমরা আমাদের  বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭ জনের একটি দল মিলে ঘুরতে গিয়েছিলাম প্রকৃতির সেই অপূর্ব মেলবন্ধনের জেলা রাঙ্গামাটিতে।

ঢাকা থেকে রাতের গাড়িতে করে রওয়ানা দেই। গল্প করে, মোবাইলে গান শুনতে শুনতে কখন যে রাত পার হয়ে গেছে টেরই পাইনি। ভোরেই পৌঁছে যাই রাঙ্গামাটি। নেমেই বুক ভরে স্নিগ্ধ বাতাসে নিঃশ্বাস নেই। ঢাকার মতো সিসাযুক্ত ভারী বাতাস রাঙ্গামাটিতে নেই। ভোরের রাঙ্গামাটি জেলার সৌন্দর্য্য অবর্নণীয়। সবুজ পাহাড়গুলো ঢেকে আছে সাদা কুয়াশার চাঁদরে। সেখানে পৌঁছেই আমরা আগে থেকে কথা বলে রাখা গেস্ট হাউসে গিয়ে উঠি। নাম বনরূপা। শহরের মধ্যেই। ভেবেছিলাম ঘণ্টা দুই ঘুমিয়ে নেব। কিন্তু নির্ঘুম রাতের ক্লান্তি নিমিষেই মুছে গেল পাহাড়ের হাতছানিতে। একটু ফ্রেশ হয়েই বেরিয়ে পড়ি। সেখান থেকে সি এন জি করে আমরা রিজার্ভ বাজার চলে যাই। রিজার্ভ বাজার থেকেই ইঞ্জিন চালিত নৌকা করে লেকে ঘুরে বেড়ানো যায়। নৌকা ভাড়াও সাধ্যের মধ্যে, সারাদিন ঘুরে ঘুরে দেখাতে ১২০০-১৫০০ টাকা নেয়। নৌকার চালকের সাথে দরদাম করে নিলে ভাড়াটা কমিয়ে আনা যায়, লেকের সবগুলো পয়েন্টেও ঘোরা যায়। ইঞ্জিনচালিত নৌকাতে করে শুভলং ঝর্ণা, শুভলং বাজার, বরকল উপজেলা ঘুরে দেখা যায়।

লেকের ভিতরে একেকটা ছোট দ্বীপের মতো খাবারের দোকান। দ্বীপগুলোর নামেও বেশ পাহাড়ি ভাব আছে- টুক টুক ইকো ভিলেজ, গরবা, চাংপাং, পেদা টিং টিং। এগুলো সবসময় প্রস্তুত থাকে; চাইলে যাবার পথেই অর্ডার করে রাখা যায় অথবা ফিরে আসার পথে অর্ডার করে একটু বিশ্রাম নিয়ে খাওয়া যায়। খাবার প্রস্তুত করতে ৩০ মিনিটের মত সময় লাগে। খরচ তুলনামূলক একটু বেশি হলেও খাবারগুলো স্থানীয় রীতি অনুযায়ী প্রস্তুত করা হয় এবং অনেক সুস্বাদু। আমরা খেয়েছিলাম গরবাতে।

লেক ঘুরে বিকালের দিকে রাঙ্গামাটির ঝুলন্ত ব্রীজে ঘুরতে গিয়েছিলাম নোকা করেই। চাইলে ওখান থেকে নৌকা ছেড়ে দিয়ে ঘুরেফিরে সিএনজিতে করেও যাওয়া যায়। হাতে সময় কম, তাই ওইদিনই সন্ধ্যা নামার পূর্বে রিজার্ভ বাজার থেকে সিএনজি নিয়ে গিয়েছিলাম রাজবন বিহারে। প্রাচীন সভ্যতার এক অপূর্ব নিদর্শন এই রাজবন বিহার। রাতে ফিরে আসি গেস্ট হাউজে। গল্প, আড্ডার পর বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই রাজ্যের ঘুম এসে ভীড় করে চোখের পাতায়। ভোরে ঘুম থেকে উঠেই বেরিয়ে পড়ি আবার। সিএনজিতে করে আমরা কাপ্তাই উপজেলার পথে রওয়ানা দেই।

রাঙ্গামাটি থেকে কাপ্তাই যাবার পথে লেকের পাড় ঘেঁষে একেবেঁকে চলে যাওয়া পাহাড়ি রাস্তাটি এক অনিন্দসুন্দর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়।

একদিকে পাহাড়, আরেক দিকে কাপ্তাই লেকের বিস্তীর্ণ জলরাশি। সেই লেকের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে ছোট-মাঝারি পাহাড়। পূর্বানুমতি সাপেক্ষে আমরা কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ প্রকল্পটি ঘুরে দেখে আসি। কাপ্তাইতে কর্ণফুলি পেপার মিলটিও ঘুরে দেখে আসতে পারেন।

আগেই বলেছি, আমাদের হাতে সময় ছিল কম। আসতে মন চাইছিল না, তবুও ফেরার পথ ধরতে হলো।

আমরা কাপ্তাই থেকে লোকাল গাড়িতে করে চট্টগ্রাম শহরে চলে আসি। সময়ের অভাবে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা, আনোয়ারাটা ঘোরা হয়ে ওঠেনি। চট্টগ্রামে কয়েক ঘণ্টা কাটিয়ে রাতে ঢাকার বাস ধরি। ভোরে পা রাখি যানজট, ধোঁয়া-ধুলোর কর্মব্যস্ত সেই প্রিয় ঢাকায়। স্মৃতিতে নিয়ে আসি একগাদা পাহাড়ি স্বপ্ন। আপনারাও চাইলে কর্মব্যস্ত জীবনকে পেছনে ফেলে দু’টো দিন কাটিয়ে আসতে পারেন প্রকৃতির প্রেমময় পাহাড়ি জনপদ রাঙ্গামাটিতে।


কিভাবে যাবেন ?
ঢাকা হতে: ঢাকার ফকিরাপুল মোড় / সায়দাবাদ জনপদের মোড়ে রাঙ্গামাটিগামী অসংখ্য বাস কাউন্টারের অবস্থান। সকল বাসই সকাল ৮.০০ হতে ৯.০০ টা এবং রাত ৮.৩০ হতে ১১.০০ এর মধ্যে ঢাকা ছাড়ে। ভাড়া ঢাকা-রাঙ্গামাটি এসি ৯০০ টাকা (শ্যামলী),  বিআরটিসি এসি ৭০০ টাকা, নন এসি সকল বাস- ৬২০ টাকা।


চট্টগ্রাম হতে: চট্টগ্রামের অক্সিজেন মোড়ে রাঙ্গামাটিগামী বাস কাউন্টারগুলোর অবস্থান। এখানে লোকাল ও ডাইরেক্ট দুই রকমের বাস পাওয়া যায়। ভাড়া সামান্য বেশি হলেও ডাইরেক্ট বাসে উঠাই বুদ্ধিমানের কাজ। ভাড়া ১২০ টাকা (ডাইরেক্ট)।


কোথায় থাকবেন?
(১) রংধনু গেস্ট হাউজ: ভাড়া ফ্যামিলি বেড ৬৫০ টাকা, কাপল বেড ৫০০ টাকা, ফোন: ০১৮১৬৭১২৬২২, ০১৭১২৩৯২৪৩০


(২) পর্যটন মোটেল: রাঙ্গামাটি ঝুলন্ত ব্রিজের পাশেই অবস্থিত। ভাড়া নন এসি টুইন বেড ১২০০ টাকা, এসি তিন বেড- ২০০০ টাকা। ফোন- ০৩৫১-৬৩১২৬


 ৩) হোটেল গ্রিন ক্যাসেল: রিজার্ভ বাজারে অবস্থিত। ভাড়া নন এসি সিঙ্গেল বেড-৮০০ টাকা, কাপল বেড- ১০০০ টাকা, ট্রিপল বেড ১২০০ টাকা। এসি কাপল বেড ১৬০০ টাকা, ট্রিপল বেড ২০০০ টাকা। ফোন: ০৩৫১-৬১২০


এছাড়া আছে শাইনিং হিল গেস্ট হাউজ, পাহাড়ে আদিবাসীদের তৈরী ছোট ছোট কটেজ। সেখানেও থাকতে পারেন।

লেখক পরিচিতি: লেভেল-৩, সেমিস্টার-১, কৃষি অনুষদ, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়।

সর্বশেষ খবর