১৪ জানুয়ারি, ২০১৬ ২১:০৫

নিখুঁত কোণের সক্রিয় আগ্নেয়গিরি

মুরাদুল ইসলাম, ফিলিপাইন থেকে:

নিখুঁত কোণের সক্রিয় আগ্নেয়গিরি

পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট সক্রিয় আগ্নেয়গিরি 'তাল'

ফিলিপাইনে অনেকগুলো আগ্নেয়গিরি আছে। এর মধ্যে বেশ কিছু জীবিত বা সক্রিয় আগ্নেয়গিরি। এই সক্রিয় আগ্নেয়গিরির মধ্যে 'তাল' এবং 'মায়ান' গিনিজ ওয়ার্ল্ড রেকর্ড বুকে নাম লিখিয়েছে। তাল সবচেয়ে ছোট সক্রিয় আগ্নেয়গিরি আর মায়ানের আছে পারফেক্ট বা নিখুঁত কোণ। তাল আগ্নেয়গিরিটি পাহাড়ী শহর তাগাইতাইতে অবস্থিত। আর এই তাগাইতাই আমার কর্ম এলাকার মধ্যে হওয়ায় প্রায় যাওয়া হয়।

মায়ান আগ্নেয়গিরি বিকোল প্রদেশে। সেখানে আমার কর্মরত ব্যাংকের একটি শাখা খোলা হবে আর এই উপলক্ষে সুযোগ এল পৃথিবীর নিখুঁত কোনের অধিকারী 'মায়ান আগ্নেয়গিরি' দেখার।

সড়ক পথে বিকোল প্রদেশে যেতে রাজধানী শহর ম্যানিলা থেকে প্রায় ১২ ঘন্টা লাগবে। তাই বিমান পথ বেছে নেওয়া। মাত্র ৪৫ মিনিটের দূরত্ব।

বিমান অবতরণ করবে নাগা বিমান বন্দরে। আমাদের অফিসও নাগা শহরে। বিমান বন্দর থেকে প্রথমে গেলাম অফিসে। সেখানে দুই দিনের কাজ শেষে মায়ান ভ্রমন।

নাগা থেকে ২ ঘণ্টার সড়ক পথের দূরত্ব আলাবাই শহরের, আর এই আলাবাই শহরের পাদদেশে অবস্থিত মায়ান। সুন্দর ঝকঝকে সবুজ প্রকৃতিতে ঘেরা রাস্তা।

এই অঞ্চলের বিশেষ বিশেষত্ব, এখানকার জনগণ ঝাল খাবারে অভ্যস্ত, যেখানে অবশিষ্ট ফিলিপাইনের অধিবাসি ঝাল খাবার তেমন পছন্দ করে না। এই ঝাল খাবারপ্রীতির স্বীকৃতি স্বরূপ রাস্তার পাশে একটি বিশাল বড় মরিচের যাত্রী ছাওনি চোখে পড়বে।

নাগা থেকে এক ঘন্টার পথ পেরুলেই মাঝে মাঝে চোখে পড়বে ধোঁয়াসে মায়ান।

এলাকাবাসী এক কৌতুকপূর্ণ মিথে বিশ্বাস করে। যারা মায়ান দেখতে যান তাদের সাথে যদি কুমারী মেয়ে বা ছেলে থাকে তবেই তারা মায়ানের নিখুঁত কোনের চূড়া দেখতে পাবে। যদিও এর কোন সত্যতা নেই।

আগ্নেয়গিরিটি ২৪৬২ মিটার উঁচু হওয়ায় চূড়াটি অনেক সময় মেঘে ঢেকে থাকে। দুপুরের একটু আগে আমরা পৌঁছলাম কাগছাওয়া নামক গ্রামে। এখানে এক পুরাতন ভাঙ্গা গির্জার পাশ থেকে আগ্নেয়গিরিটি ভালভাবে দেখা যায়, আর তাই এখানে পর্যটনের পসরা সাজিয়ে রেখেছে পর্যটন কতৃপক্ষ।

এই আগ্নেয়গিরি থেকে মাঝে মাঝেই অগ্ন্যুৎপাত হয়, তাই খুব কাছে যাওয়া নিরাপদ নয়। নিরাপদ দূরত্ব পর্যন্ত যাবার জন্য আছে স্থানীয় গাইড। আমরাও এক গাইডের শরণাপন্ন হলাম। তার কাছে শুনলাম কিছু তথ্য।

১৮১৪ সালে হয়েছিল ভয়াবহ অগ্ন্যুৎপাত, প্রায় ১২০০ মানুষ মারা গিয়েছিল, ধ্বংস হয়েছিল বেশ কিছু জনপদ। শেষ অগ্ন্যুৎপাত হয়েছিল ২০১৪ সালের আগস্ট মাসে। সরকার সে সময় প্রায় এক মাসের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার জনগণকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিয়েছিল।

স্থানীয় অনেক জনগণের আয়ের ব্যবস্থা হয়েছে এই আগ্নেয়গিরিকে ঘিরে।

অনেকে এখানে দোকান দিয়েছে। অনেকে গাইডের কাজ করছে, অনেকে আবার দর্শনার্থীদের ছবি তুলে দিয়ে আয় করছে।

এরা মজা দেবার জন্য বেশ কিছু কৌশলে ছবি তুলে দেয়। দেখে মনে হবে হয়তো এডিট করা, কিন্তু শুধু মোবাইল ফোন বা ক্যামেরা দিয়ে কিছু কৌশল করে তোলা হয় সেই ছবি।

আমরাও কিছু ছবি তুললাম। তারপর কয়েকটি দোকান ঘুরে কিছু কেনাকাটা করে রওনা হলাম ফেরার পথে।

লেখক: প্রবাসী বাংলাদেশি

ইমেইল: [email protected]

বিডি-প্রতিদিন/১৪ জানুয়ারি ২০১৬/এস আহমেদ

সর্বশেষ খবর