১৬ ডিসেম্বর, ২০১৬ ১৫:৫৬

আমি যুদ্ধ দেখেছি

এ. গোলাপ

আমি যুদ্ধ দেখেছি

ফাইল ছবি

আমি যুদ্ধ দেখেছি-৭১-এ বাংলায়,
আমি সেদিন সহস্র বাঙ্গালীর লাশ ভাসতে দেখেছি পদ্মায়।
আমি হিংস্র পাক-সেনাদের ধ্বংস-যজ্ঞ দেখেছি,
শুনেছি সেদিন ইজ্জত হারানো নারীর বুক ফাঁটা চিৎকার।
আমি  তাজা খুনরে রক্তরে লালিমা দেখেছি,
শুনেছি সেদিন সন্তানহারা বিধবা মায়ের হৃদয় বিদারী হাহাকার।
আমি খান-পাঞ্জাবী সেনাদের অস্ত্ররে ঝংকার দেখেছি,
শুনেছি সেদিন দম্ভ-ক্রোধে হাঁকা জালিমের হুংকার।
আমি গ্রামের পর গ্রামে বসত বাড়ীতে আগুনরে লেলিহান দেখেছি,
দেখেছি সেদিন কৃষক-মজুর-শ্রমিকের সারিবদ্ধ প্রাণের সংহার।
আমি মৃত মায়ের বক্ষে দুগ্ধ পানরত অবুঝ শিশুকে দেখেছি,
দেখেছি ভাগাড়ে লেজ নেড়ে-নেড়ে কুকুর-শকুনকে মানবের মাংস করতে ভক্ষণ।
আমি অনেক সনাতন মাতৃ-বধুর সিঁথির সিঁদুর মুছতে দেখেছি,
দেখেছি সেদিন সত্যতা যাচাইয়ে করতে কত নরের বস্ত্র হরণ।
আমি প্রাণ হাতে সহস্র বাঙ্গালী শরণার্থীর সারি দেখেছি,
দেখেছি সেদিন পরবাসে লক্ষ বাঙ্গালীর হাহাকার নিদারুন।

আমি শুধুই এ গুলো দেখিনি ! আরো দেখেছি !!
নিরীহ বাঙ্গালীকে বীর হতে !!!
যে বালক চোখে-চোখ রেখে কথা বলতো না,
তাকে দেখেছি অস্ত্র হাতে যুদ্ধে যেতে।
যে অবোধ বালিকা গান জানতো না,
তাকে দেখেছি গলা ছেড়ে জাগরণের গান গেতে।
যে বধূ অবধি ছিলো অবলা,
তাকে স্বেচ্ছায় আত্মঘাতী-বিরঙ্গনা হতে দেখেছি আমি।
আমি নিরীহ কৃষককে দেখেছি হতে ক্যাপ্টেন,
শ্রমিককে হতে দেখেছি কর্নেল।
আমি বৃদ্ধকে দেখেছি মশাল হাতে,
অদম্য তারুণ্যকে দেখেছি হতে গেরিলা।
আমি একজনের আহার পাঁচজনকে খেতে দেখেছি,
অশ্রু নয়নে সেদিন দেখেছি বাঙ্গালীর প্রাণের মমতা্।
আমি ঢাকার রাজপথে পাক-জানোয়ারদের সকরুণ আত্মসমর্পণ দেখেছি,
দেখেছি সেদিন বাঙ্গালীর ক্ষমা করার অসীম ক্ষমতা।
আমি যুদ্ধ দেখেছি! জয় দেখেছি!!
দেখেছি বাংলার রাজপথে উড়িতে লাল-সবুজের পতাকা!!!

কিন্তু…………………!!!
আজ তোমরা যারা বলো প্রেমের কবিতা লিখতে!
বলি ভাই!! সে মৌসুম এখনো আসেনি!!!
এখনো শীতলক্ষ্মায় ভাসে আমার ধর্ষিতা বধূর লাশ!
প্রেস-ক্লাবের সামনে বুক থাবড়ে মরে আমার সন্তানহারা মা!!
ইজ্জত হারানোর ভয়ে পুণঃপুণ কেঁপে ওঠে আমার কন্যা!!!
শোনো! তোমরা যারা প্রেমের কবিতা লেখো এবং পড়ো!
জেনে রেখো তোমরা হয়তো মনুষত্বহীন-অন্ধ না হয় সচেতন চাটুকর!!!
এখনো ৭৪-এর ন্যায় নোঙ্গর খানায় লাইনে রিলিফের চালের জন্য
কাঙ্গালের মত দাঁড়াতে হয় আমার শীর্ণ বাবাকে।
একমুঠো অন্নের জন্য দ্বারে-দ্বারে ভিক্ষা করতে হয় আমার বৃদ্ধ মাকে।
এখনো অহর-নিশি খেটে মাঠে সোনার ফসল ফলিয়েও
“কামলার বাচ্চা” গালি শুনে অভুক্ত থাকতে হয় আমার ভাইকে।
একখানা যাকাতের কাপড়ের জন্য পদ-দলিত হয়ে
প্রাণ হারাতে হয় আমার বিধবা বোনকে।
শোনো বন্ধুরা…………….!!!
এখনো দেশে বর্গী আছে, ব্রিটিশ আছে, খান আছে!
শোষক জালিম শাহীর নানা ছদ্মরূপ আছে!!
আছে পাঞ্জাবী বেলুচের হিংস্র কসাই!!!
কিন্তু বাংলার একাত্তরের সেই
কৃষক-মজুর–শ্রমিক মুক্তি সেনারা আজ কোথায়???
বন্ধুরা এখনো প্রেমের কবিতা লেখার মৌসুম আসেনি!
তোমরা যারা প্রেমের কবিতা লেখো এবং পড়ো!!
জেনে রেখো তোমরা হয়তো মনুষত্বহীন-অন্ধ না হয় সচেতন চাটুকর!!!

লেখক: সাবেক শিক্ষার্থী, সরকার ও রাজনীতি বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।


বিডি প্রতিদিন/১৬ ডিসেম্বর ২০১৬/হিমেল

সর্বশেষ খবর