১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ১২:১২

ভিনদেশি রমণীর শ্রেষ্ঠ উপহার

তৌহিদুল ইসলাম

ভিনদেশি রমণীর শ্রেষ্ঠ উপহার

মেয়েটি বাংলা জানেন না, বলতেও পারেন না । কিন্তু বাংলার প্রতি, বাঙালির প্রতি তার এই ভালবাসা আমাকে একটু চিন্তিতই করে রেখেছে। ইউরোপিয়ান কমিশনের ইরাসমাস স্কলারশীপে হাঙ্গেরিতে সাম্প্রতি ইউথ লিডারশীপ প্রোগ্রামের এক স্টুডেন্ট। প্রোগ্রামে যারা অংশ নিয়েছেন তাদের প্রত্যেকেরই একজন করে সিক্রেট বন্ধু থাকেন, একটা বক্স থাকে, বক্সে সবার নাম থাকে টোকেন সিস্টেমে। এই টোকেন না দেখেই বক্স থেকে নিতে হয় প্রোগ্রামের প্রথম দিন। অর্থাৎ যার ভাগ্যে যেটা ঠিক সেটাই নিতে হবে।
কে কার বন্ধু হবেন প্রোগ্রামের প্রথম দিন এটা জানা খুবই কঠিন, টোকেনের নাম অনুসারে আমি কাকে গিফট দিব এটা জানতে পারব বাট আমাকে কে গিফট দিবে সেটা জানতে পারবোনা এই সিস্টেমে।
প্রত্যেকে তার সিক্রেট বন্ধুকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য বাধ্যতামূলকভাবে গিফট দিয়ে থাকেন  প্রথমে ব্যাপারটা কেমন জানি ইন্টারেস্টিং মনে হল ভাবনাটাও অনেকাংশে বেড়ে যায় আমার। পরবর্তীতে ভাবলাম, দ্যুর... আমি যাকে দিব সেতো জানবেনা কে তাকে এত দামী গিফটটা দিল...! যাহোক আমি কাকে দিলাম সেটা হয়ত নাইবা বলি... ব্যাপারটা সিক্রেট বলে কথা ।  
আমাকে কে দিল সেটা শুনুন ......
৪ দিনব্যাপী প্রোগ্রামের শেষ দিন রাতেই আরেকটা বিশেষ আয়োজনের মাধ্যমে জানা যাবে কে কার বন্ধু ছিল। ভাগ্যক্রমেই আমার নামের টোকেন পেলেন এক ইউরোপিয়ান রমণী। আর সে আমাকে দিল আমার সবচেয়ে দামী গিফটাই। তার নিজের হাতের লিখা “বাংলা” এই শব্দটি।
ভিনদেশী এই রমণীকে জিজ্ঞেস করলাম তুমি কি ভাবে এত নিপুন করে বাংলা শব্দটি লিখলে ? সে জানাল, আমার ল্যাঙ্গুয়েজ (বাংলা) দেখতে নাকি অনেকটা আর্টের মত। গুগুল থেকে সাহায্য নিয়ে অনেক প্রচেষ্টা করে “বাংলা” শব্দটি আর্ট করল। আর এটাই আমার জন্য তার দেওয়া উপহার। পরবর্তীতে আমাদের গ্রুপের সবাইকে নিয়ে বাংলা ভাষা, ভাষা আন্দোলন এবং ২১শে ফেব্রুয়ারি ইউনেস্কো কর্তৃক বাংলা ভাষাকে স্বীকৃতি দেওয়ার মাধমে এই ভাষার অর্জন সম্পর্কে  দীর্ঘ আলোচনা হয়েছিল। তাদেরকে আসস্থ করতে পেরেছি যে আমরাই একমাত্র জাতি “যারা তাদের নিজের ভাষা প্রতিষ্ঠিত করার জন্য রক্ত দিয়েছি” ।

ভিনদেশে সাধারণত সবাই সবার নামের পরে যে শব্দটি বলে নিজেদেরকে পরিচয় দিয়ে থাকেন সেটা হল তিনি কোন দেশের নাগরিক তা উল্লেখের মাধ্যমে ।  
পৃথিবীর প্রথম সারির ৮টি ভাষার মধ্যে বাংলা ভাষার অবস্থান অষ্টম। বালাদেশ ও ভারতসহ সমগ্র বিশ্বে প্রায় ৩০ কোটি মানুষের মাতৃভাষা বাংলা। জীবিকার অন্বেষণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রতি বছর ছড়িয়ে পড়েছে  প্রচুর বাংলাভাষী। ওইসব দেশে বড় বড় বাঙালী সমাজ গড়ে ওঠলেও বাংলা ভাষা শিক্ষার প্রতিষ্ঠানের অভাবে সেখানকার বাঙালী শিশুরা মাতৃভাষা শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এ যেন শিকড় থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার এক বড় হুমকি।

খুবই দুঃখজনক হলো সত্য, আমাদের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ প্রবাসীদের সমর্থন ও অনুদানের ওপর যতটা নির্ভরশীল, প্রবাসীদের কল্যাণে তাদের অবদান ততটাই স্বল্প। মাতৃভাষা দিবসে প্রভাত ফেরী ও শহীদ মিনারে ফুলেল শ্রদ্ধাঞ্জলীর মধ্যেই বাংলা ভাষার প্রতি আমার দায়িত্ব সীমিত হয়ে পড়েছে। এ ধরনের লৌকিক শ্রদ্ধা বাংলা ভাষার অস্তিত্ব রক্ষায় ভবিষ্যতে তেমন কোন অবদান রাখতে সক্ষম হবেনা। মাতৃভাষার জন্য আমাদের গৌরবোজ্জল আত্মদান আজ বিশ্ব সভায় শুধু স্বীকৃতিই পায়নি, বিশ্বের সকল মাতৃভাষাকেও মহিমান্বিত করেছে। আজ আমাদের একটাই পরিচয় আমরা বাংলাদেশি। পরবাসে আমরা বাঙালি বলে যেভাবে পরিচয় দিয়ে থাকি তেমনি ভাবে এই বাংলা ভাষাকে নিয়ে গর্ববোধও করে থাকি।   

বুদাপেস্ট, হাঙ্গেরি।

বিডি প্রতিদিন/ সালাহ উদ্দীন

সর্বশেষ খবর