৫ আগস্ট, ২০১৭ ১৪:৪২

প্রবাসী বাংলাদেশিদের নামে কুৎসা : যে পদক্ষেপে হতে পারে পরিবর্তন

মঈন উদ্দিন সরকার সুমন

প্রবাসী বাংলাদেশিদের নামে কুৎসা : যে পদক্ষেপে হতে পারে পরিবর্তন

বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তির যুগ। তাই পত্রিকার পাতা নিয়ে এখন আর কাড়াকাড়ির প্রয়োজন পড়ে না। সকালে অফিসে অন্যদের চেয়ে একটু আগেই আসি। এসেই চা নাস্তা করতে করতে কুয়েতের স্থানীয় পত্রিকার লোকাল খবর আর অপরাধের পাতার দিকে নজর দেই। বলতে গেলে এটি অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। কুয়েতে কয়েকটি ইংরেজি পত্রিকার মধ্যে আরব টাইমস এবং কুয়েত টাইমস দুটিতেই এক নজর না দিলে দিনের শুরুটা যেন অপূর্ণ রয়ে যায়।  

পত্রিকাগুলোতে আমাদের (বাংলাদেশি প্রবাসীদের) ভালো দিকগুলো সহজে না আসলেও ক্ষুদ্রতম কোনো অপরাধের গন্ধ পত্রিকায় শিরোনাম বানিয়ে ফেলেন মহান পেশার 'দক্ষ কারিগররা'। তারা অবশ্য বিভিন্ন আরবি পত্রিকা থেকে খুঁজে বাংলাদেশিদের অপরাধের খবরগুলো বের করে শিরোনাম করে। যদিও গড়ে হিসাব করলে ৫ ভাগ অপরাধ বাংলাদেশিদের দ্বারা হয় কিনা সন্দেহ আছে।

আরেকটি কথা, অন্য দেশীরা এতটাই অপরাধ করেন যার কারণে ওরা দেশের নাম না দিয়ে সে ক্ষেত্রে এশিয়ান বলে চালিয়ে দেয়। বেশ কিছুদিন ধরে স্থানীয় পত্রিকার অপরাধের পাতার শিরোনামগুলোর দিকে দৃষ্টি দিয়ে নিশ্চিত হতে পেরেছি শুধু বাংলাদেশিদের কোন অপরাধের খবর শিরোনাম বাংলাদেশি লেখা হয়। আর পার্শ্ববর্তী দেশসমূহের ক্ষেত্রে এশিয়ান।

গত বছর ২০১৬ সালে নভেম্বর মাসে স্থানীয় পত্রিকায় এক পরিসংখ্যানে বাংলাদেশের অপরাধী ৫০২ জনের তালিকা প্রকাশ করে যা কুয়েতে মোট বাংলাদেশিদের তুলনায় ০.০০১৭ ভাগ মাত্র। ভাল করে খোঁজ নিলে দেখা যাবে অন্য দেশের মতো আমাদের দেশের মানুষ তেমন অপরাধের সাথে জড়িত নয়। 

বাংলাদেশের মানুষ কিছু বাড়তি আয়ের আশায় ও অক্ষতার কারণে নিম্ন মানের কাজ করতে পারে। একান্তই বিপদে পড়লে কর্মস্থলে স্থানীয় জনগণের কাছে হাত পাতে। আমাদের দেশের মানষ যা কিছুই করুক আত্মসম্মান সবার আছে। তারা কিন্তু অন্যদের বেহিসেবী জীবনযাপন করে না। মাতাল হয়ে রাস্তাঘাটে ঘোরাঘুরি খবর পাওয়া যায় না। হঠাৎ বড়লোক হওয়ার আশায় মাদক ব্যবসা বেছে নেয় না। রমজান মাসে পরিবারের মুরব্বিদেরকে ভিজিট ভিসা দিয়ে কুয়েতে এনে ভিক্ষা করানোর মন মানসিকতা বাংলাদেশিদের নেই। 

গুরুতর অপরাধে বাংলাদেশিদের শিরোনামে খুঁজে পাওয়া দুস্কর। সেখানে এশিয়ানরা প্রতিনিয়তই শিরোনামে আসছেন। শিরোনাম দেখে মনে হয় অপরাধীরা দেশের নাম পাল্টে এশিয়ান রেখেছে। আমার এই মতামতের সাথে কুয়েত প্রবাসী অনেকে একমত পোষণ করবেন। অন্তত তারা যারা স্থানীয় পত্রপত্রিকার কিছুটা খবর রাখেন। 

বাংলাদেশি হিসেবে নিজেকে নিয়ে গর্ব করি। বছর তিন আগের কথা কুয়েতে সুক সার্কে মাছ মার্কেটে মারামারি করার অপরাধে এক বাংলাদেশিকে আটক করে বলে স্থানীয় পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। সেই মার্কেটে অনেক বাংলাদেশি ব্যবসা করেন। তাদের একজন রুবেল। সে ফোন করে আমাকে জানাল খবরটি। ওই ঘটনার সাথে কোন বাংলাদেশি জড়িতই ছিল না। পত্রিকার কাটিংসহ তখনকার শ্রম কাউন্সিলর আলী রেজাকে বিষয়টি অবগত করি। তিনি দেরি না করে রাষ্ট্রদূতকে জানিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে লিখিত অভিযোগ করেন এবং ভুল সংবাদ প্রকাশের প্রতিবাদ করেন। পরের দিন সংবাদের সংশোধনীসহ ভুল সংবাদ প্রকাশের জন্য দুঃখ প্রকাশ করে।

কুয়েতে প্রায় তিন লাখ বাংলাদেশি আছেন। কুয়েতে বাংলাদেশ দূতাবাসে রাষ্ট্রদূতসহ চারজন কর্মকর্তা দিয়ে সকল কাজ চলছে। এখানে নেই কোন প্রেস উইং। প্রবাসীদের বিভিন্ন সমস্যা আর কূটনৈতিক কর্মকাণ্ড সামাল দিতে যেখানে তারা রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে। সেখানে অন্য বিষয়ে খোঁজ খবর রাখাটা দুস্কর বটে। স্থানীয় গণমাধ্যমে বাংলাদেশিদের নিয়ে কুৎসা বন্ধ করতে কুয়েতে বাংলাদেশ দূতাবাসে প্রেস উইং চালুসহ স্থানীয় গণমাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে দক্ষ সাংবাদিকদের কাজের সুযোগ করে দিতে দূতাবাসসহ সরকারের প্রতি আহবান প্রবাসীদের। 

(লেখক কুয়েত প্রবাসী সাংবাদিক)


বিডি প্রতিদিন/৫ আগস্ট, ২০১৭/ফারজানা

সর্বশেষ খবর