১০ ডিসেম্বর, ২০১৭ ০৬:৪১

পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন ও নৈতিকতা

মো. আব্দুল হাই:

পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন ও নৈতিকতা

প্রতীকী ছবি

সাম্প্রতিক সময়ে প্রশ্ন-ফাঁস ও পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন এক ধরনের ব্যাধিতে রূপান্তরিত হয়েছে। শিক্ষার্থী, অভিভাবক এমনকি অনেক অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীর রেজাল্ট যে কোন উপায়ে ভাল করতে চান। 

এই যেকোন উপায়ের' মধ্যে অসদুপায়ও চলে আসে যেখানে নৈতিকতার বিষয়টি আড়ালে পড়ে যায়। পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনের পেছনে প্রত্যক্ষ না হলেও অনেক কারণসমূহের মধ্যে এটিও একটি গুরুত্বপূর্ণ ও সুদূরপ্রসারী কারণ বলে মনে হয়।

শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা নেওয়ার মূল উদ্দেশ্য কী? সহজভাবে বললে, শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার গতিপথ বোঝা। তাদের পড়াশুনার অগ্রগতি সম্মন্ধে ধারণা পাওয়া। শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবক সকলে যাতে শিক্ষার্থীর পড়ালেখা কিভাবে কতটুকু এগুচ্ছে, সমস্যা কোথায় তা বুঝে সে অনুযায়ী সমাধানের পথ খুঁজতে পারে। অর্থাৎ, পরীক্ষার মূল উদ্দেশ্য যাচাই বা মূল্যায়ন।

বেশিরভাগ পরীক্ষার্থী পাশ্ববর্তী জনের খাতা দেখে বা তার কাছ থেকে জেনে লিখার চেষ্টা করে। (অনেকসময় এটা জেনেও যে সে পরীক্ষায় ফেল করলেও তার তেমন কোন পানিশমেন্ট হবে না)। প্রায় সকল পরীক্ষার্থীই প্রত্যবেক্ষকের অনুপস্থিতিতে পরীক্ষা-কক্ষে কথা বলে বা প্রশ্নের উত্তর জানায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে। অর্থাৎ, পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন করাকে অপরাধ মনে করা হয় না। 

ব্যপারটা এমন যেন প্রত্যবেক্ষক একজন পাহারাদার যিনি কোন কিছু চুরি বা ছিনতাই থেকে রক্ষা করতে বসেছেন। কিন্তু, এমন কি হওয়ার কথা ছিল? বরং এটা উচিত ছিল যে, পরীক্ষার্থীরা যা পারে তা লিখে দিবে অন্য কারোটা সে দেখবে না এবং অন্যকে দেখাবে না। এতে দুটো ব্যাপার স্পষ্ট হত। এক. শিক্ষার্থীর প্রকৃত মূল্যায়ন, দুই. শিক্ষার্থীর নৈতিকতা।

কেন একজন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অসদুপায় করে বা করার চেষ্টা করে? আমার কাছে মনে হয় আমরা শিক্ষার্থীদের সবসময় একটা প্রতিযোগীতার মধ্যে ফেলে দিয়েছি। ছোটবেলা থেকেই পরীক্ষায় প্রথম হতে হবে, ভাল মার্কস পেতে হবে, এ+ পেতে হবে এসব বিষয়গুলো এমনভাবে তাদের মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়েছি। যে তারা যেকোনও উপায়ে তা অর্জন করতে চায়। 

ভাল মানুষ হওয়ার কথা কম বলে আমরা ভাল রেজাল্টধারী হওয়ার কথা বেশি বলি। ফলে, একটু বেশি নম্বর পেতে শিক্ষার্থীদের নৈতিকতার বিষয়টি মাথায় আসে না। সবসময়, একটু বেশি নম্বর পাওয়ার নেশায় তার বুদ হয়ে থাকে। কারণ, আমরাও তো সেটাই চাই! 

এর সমাধান কী হতে পারে? সবকিছুতে প্রতিযোগীতামূলক মনোভাব শিক্ষার্থীদের চরমভাবে ব্যক্তিকেন্দ্রিক করে গড়ে তুলে। ফলে তারা নিজ স্বার্থ ছাড়া আর কিছু ভাবতে পারে না। অভিভাবক ও শিক্ষকদের উচিত সবসময় ভাল রেজাল্ট, ভাল মার্কসের কথা না বলে ভাল মানুষ হওয়া, অপরকে সাহায্য করা, পরীক্ষাই সব এ ধারণা থেকে বের হওয়ার জন্য মোটিভেশন করা। 

এর ফলে দীর্ঘমেয়াদে কিছু মানবিকতাসম্পন্ন, পরপোকারী ও নৈতিকবোধসম্পন্ন মানুষ পাওয়া যাবে যারা আমাদের সমাজকে ইতিবাচকভাবে বিনির্মাণ করতে পারে।

লেখক- প্রভাষক, সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজ।

(পাঠক কলাম বিভাগে প্রকাশিত মতামত একান্তই পাঠকের, তার জন্য কৃর্তপক্ষ দায়ী নয়)

বিডি প্রতিদিন/ ১০ ডিসেম্বর, ২০১৭/ ই জাহান

সর্বশেষ খবর