১ জানুয়ারি, ২০১৮ ২১:৪৮

বেকারত্ব দূরকরণে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ গড়ে তোলার বিকল্প নেই

সাবরিনা শুভ্রা

বেকারত্ব দূরকরণে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ গড়ে তোলার বিকল্প নেই

দেশে বেকারত্বের হার বাড়ছে। বিশেষ করে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বৃদ্ধি আশঙ্কার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশে শিক্ষিতের হার দ্রুত বৃদ্ধি পেলেও সে তুলনায় কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়নি। বেকারত্ব বৃদ্ধির বিষয়টি বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য-উপাত্তেও স্বীকার করা হয়েছে। তাদের মতে, গত এক দশকে বেকারত্ব বেড়েছে এক দশমিক ছয় শতাংশ। নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির হার কমেছে দুই শতাংশ।

বাংলাদেশে প্রতিবছর শ্রমবাজারে ঢুকছে ২৭ লাখ মানুষ। সরকারি বা বেসরকারি খাতে তাদের মধ্যে এক লাখ ৮৬ হাজার মানুষকে কাজ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। বাদবাকিদের জন্য বেকারত্ব অনিবার্য হয়ে উঠছে। বাংলাদেশে বেকারত্বের হার বৃদ্ধি এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ কমে যাওয়া যে কোনো বিবেচনায় দুর্ভাগ্যজনক। কারণ বাংলাদেশকে বলা হয় অমিত সম্ভাবনার দেশ। শ্রমের দাম কম হওয়ায় এবং ১৬ কোটি মানুষের একটি বিশাল বাজার থাকায় বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশ সম্পর্কে আগ্রহী। কিন্তু তারপরও বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগের হার কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে পৌঁছাচ্ছে না। অবকাঠামোগত সমস্যা, গ্যাস-বিদ্যুতের সংকট ও রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে দেশি বিনিয়োগকারীরাও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আস্থা রাখতে পারছেন না। দেশি বিনিয়োগকারীদের আস্থার ঘাটতি থাকায় বিদেশি বিনিয়োগকারীরাও প্রভাবিত হচ্ছে। তারা বাংলাদেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন।
কর্মসৃজনের প্রধান উৎস বেসরকারি বিনিয়োগ। আমাদের অর্থনীতি ও বেকারত্বের বিবেচনায় যে ধরনের প্রযুক্তিমুখী বিনিয়োগ হওয়া দরকার, তা হচ্ছে না। বরং কাঠামোগত সীমাবদ্ধতার কারণে, আধুনিক প্রযুক্তি প্রয়োগের কারণে নতুন কর্মসংস্থান না হয়ে চলমান কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রকেও সঙ্কুচিত করে ফেলছে। যেখানে কর্মসৃজন কম হয়, অতি মুনাফার প্রত্যাশায় দেখা গেছে সেখানেই বেসরকারি বিনিয়োগ সর্বোচ্চ আকৃষ্ট হচ্ছে।
মূলত এটি দেখার দায়িত্ব সার্বিক অর্থেই পরিকল্পনা কমিশনের। কিন্তু তারা সেটি করছে না। ফলে আমাদের শিল্পনীতি রয়েছে। বাণিজ্যনীতি রয়েছে। কিন্তু বিনিয়োগ নীতি নেই। প্রযুক্তির বিকাশকে কোন পর্যন্ত আমরা টেনে নিয়ে যেতে পারব সে সম্পর্কে জাতীয় নীতি থাকা দরকার। সেই সঙ্গে আমাদের গণতান্ত্রিক শাসন পদ্ধতিও দায়িত্বশীল হওয়া দরকার। রাজনীতি যদি সহিংস হয়, দেশে যদি সাংবাৎসরিক অস্থিতিশীলতা বিরাজ করে তাহলে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ হবে কেন। আর এ বিনিয়োগ প্রত্যাশিত না হলে কর্মসৃজন হবে কীভাবে? এ প্রশ্নগুলোরই উত্তর আমাদের জাতীয় পর্যায়ে খোঁজা দরকার। এ সমস্যার সমাধান করা দরকার।
বেকারত্বের হার বৃদ্ধি বাংলাদেশের জন্য নানা আশঙ্কা সৃষ্টি করছে। স্থিতিশীলতার জন্য এটিকে প্রত্যক্ষ হুমকি হিসেবে ভাবা হচ্ছে। এ হুমকির মোকাবিলায় বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ গড়ে তোলার উদ্যোগ নিতে হবে। বেকারত্ব থেকে রেহাই পাওয়ার এটিই প্রকৃষ্ট পথ।

লেখক: গবেষক, কলামিস্ট, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক।
[email protected]

(পাঠক কলাম বিভাগে প্রকাশিত মতামত একান্তই পাঠকের, তার জন্য কৃর্তপক্ষ দায়ী নয়)

বিডি-প্রতিদিন/ সালাহ উদ্দীন

সর্বশেষ খবর