৩ জানুয়ারি, ২০১৮ ১৩:০০

কুয়েতে একটি বাংলা স্কুল জরুরি প্রয়োজন

মঈন উদ্দিন সরকার সুমন:

কুয়েতে একটি বাংলা স্কুল জরুরি প্রয়োজন

২০১৬ সালের পহেলা জানুয়ারী কুয়েতে বাংলাদেশ দূতাবাসে বই উৎসব

প্রতি বছরের শুরুতেই প্রথম দিনে বাংলাদেশের সব শিক্ষার্থীর হাতে নতুন বই তুলে দিয়ে বিশ্বের ইতিহাসে এক বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে বাংলাদেশ। বাংলা এবং বাঙ্গালি জাতি বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে, এক অনন্য দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করবে আমাদের প্রিয় জন্মভূমি। একটি শিক্ষিত জাতি হিসেবে পৃথিবীর সর্বত্র সমানভাবে দাঁড়াবে বাংলাদেশের মানুষ, এই দিন অতি নিকটে। আজ বছরের প্রথম দিন বাংলাদেশের সাথে তাল মিলিয়ে বিদেশেও বিভিন্ন দূতাবাস কর্তৃক প্রবাসে বেড়ে উঠা বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দিয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের প্রায় দেশে আছে বাংলাদেশী স্কুল। সেই সুবাদেই বাংলা শিক্ষা ও বাংলা বই সহজেই পেয়ে থাকে। 

বিগত কয়েক বছর কুয়েতে প্রবাসী বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা বিদেশের বিভিন্ন স্কুলে পড়লেও বছরের শুরুতে তাদের হাতে নতুন বই তুলে দিতেন বাংলাদেশ দূতাবাস কর্তৃপক্ষ। নতুন বছরের প্রথম প্রহর এক মিলন মেলায় পরিণত হত দূতাবাস প্রাঙ্গণে। ২০১৮ নতুন বছরে চারদিন কুয়েতে সরকারি ছুটি থাকায় সঠিক সময়ে না পৌঁছানোর কারণে বছরের প্রথম দিনে নতুন বই কুয়েত প্রবাসী বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দিতে পারেননি দূতাবাস কর্তৃপক্ষ। দূতাবাসে বই পৌঁছানোর সাথে সাথে শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন দূতাবাস কর্তৃপক্ষ। এবছর সমাপনী পরীক্ষায় কুয়েতে ১৬ শিক্ষার্থী অংশ নিয়ে শতভাগ পাস করেছে।

মধ্যপ্রাচ্যের অধিকাংশ দেশই বাংলাদেশি স্কুল থাকলেও পিছিয়ে আছে কুয়েত প্রবাসী বাংলাদেশিরা। এখানে নেই কোন বাংলা স্কুল। স্কুল না থাকলেও মাতৃভাষার শিক্ষা দিতে অভিভাবকরা আপ্রাণ চেষ্টা করছেন। কুয়েত প্রবাসীদের কতিপয় শিক্ষানুরাগী ব্যক্তি সংগঠন ভিত্তিক বাংলা শিক্ষার ব্যবস্থা করে আসছেন। এখানে বিভিন্ন সময়ে অনেকেই চেষ্টা করে স্কুল প্রতিষ্ঠায় সফল হতে পারেননি। এর কয়েকটি কারণের মধ্যে অন্যতম কারণ আর্থিক সংকট। এই আর্থিক সমস্যা সমাধানের চেষ্টায় অনেকটা সফলতার দ্বার প্রান্তে পৌঁছাতে পারলেও শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়েছেন। এখানে বাংলাদেশ কমিউনিটির মধ্যে দ্বিধা বিভক্তির কারণে স্কুল প্রতিষ্ঠার নামে ফান্ড কালেকশন করা হয়েছে একাধিকবার। এতে কমিউনিটির অনেক অর্থবিত্তবানরা স্বতঃস্ফূর্ত সারা দিয়েছিলেন। কোন্দলের কারণে নামেই সীমাবদ্ধ বাংলাদেশ স্কুল। 

বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশ থেকে আগত কুয়েতে সফরকারী অনেক উচ্চপর্যায়ের মন্ত্রীদের কাছেও প্রবাসীরা দাবি জানিয়ে আসছিলেন। অনেকে (রাজনৈতিক) আশ্বাস দিয়ে গেছেন কোটি টাকার। সেই আশ্বাস এখনো আশ্বাসের মধ্যে রয়ে গেলেও বিশ্বাসে পরিণত হতে পারেনি। কুয়েত প্রবাসীদের অতি প্রয়োজনীয় এই দাবিটি বর্তমানে কুয়েতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এস.এম আবুল কালাম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পৌঁছিয়েছেন বলে প্রবাসীদের আশ্বস্ত করেছেন। এবার অনেকের আত্মবিশ্বাস, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি পরবে তিন লক্ষ কুয়েত প্রবাসী বাংলাদেশিদের উপর। 

কুয়েত প্রবাসী বাংলাদেশিদের নতুন প্রজন্ম বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সম্পর্কে সঠিকভাবে শিখতে পারবে। ভাষা শহীদদের আত্মত্যাগ বৃথা যাবে না বাংলাদেশের প্রত্যেকটি মানুষের মুখে বাংলা ভাষায় কথা শুনে। আমাদের মাতৃভাষা যে আন্তর্জাতিক ভাষা দিবস হিসেবে পালিত হয় এর ইতিহাস জানাতে পৃথিবীর সর্বত্র যেখানে বাংলাদেশের মানুষ তাদের সন্তানদের নিয়ে বসবাস করছেন সেখানে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করার প্রত্যাশা করি।

লেখক: প্রবাসী সাংবাদিক

বিডি প্রতিদিন/৩ জানুয়ারি ২০১৮/হিমেল

সর্বশেষ খবর