৭ এপ্রিল, ২০১৮ ১৪:৪৪

জননিরাপত্তা সচিবের গোয়েন্দা নজরদারি

তসলিম বেগম

জননিরাপত্তা সচিবের গোয়েন্দা নজরদারি

তিনি চাইলেই প্রোটকল নিতে পারেন। কিন্তু নেন না। ভ্রমণের সময় তার অধীনস্থ বিভাগের অফিসারদের ভ্রমণের তথ্য দিতে পারেন। কিন্তু কোনো তথ্য দেন না। তথ্য দিয়ে এয়ারপোর্টে জুনিয়র অফিসারদের দাঁড় করিয়ে সর্বোচ্চ সম্মান নিতে পারেন। কিন্তু তিনি তা করেন না।

তাহলে জননিরাপত্তা সচিব কী করেন? একটি গোয়েন্দা নজরদারি ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তা বলি, তিনি যাবেন ঢাকা থেকে চট্রগ্রামে। এয়ারপোর্টে কোনো তথ্য না দিয়েই আসলেন। ঠিক সাধারণ যাত্রীর মতো লাইনে দাঁড়ালেন। নিজের লাগেজ দিলেন স্ক্যান মেশিনে। আর লাইনে দাঁড়িয়ে তিনি আর্চওয়ের ভেতর দিয়ে আসলেন। স্ক্যানে ধরা পড়ল লাগেজে একটা কাঁচি আছে।

দায়িত্বরত আনসার সদস্য বললেন, লাগেজটি খুলতে হবে। আপনার লাগেজে অস্ত্র আছে। তিনি নিজের পরিচয় না দিয়ে বললেন, এটাতো হল তিন সে.মি. মাপের একটা কাঁচি, আইন অনুযায়ী বিমানে ছয় সে.মি. মাপের কাঁচি এলাও।

আনসার সদস্য মানতে নারাজ। তিনি বললেন, এসব হবে না। লাগেজ খুলতে হবে। তিনি বুঝাতে চেষ্টা করলেন। বিমানের রুলসের কথা বার বার বললেন। এবার আনসার সদস্য অভদ্র আচরণ করে বললেন... ব্যাগ খুলেন, এসব বলে লাভ নেই। তখন তিনি পরিচয় দিলেন, আমি হোম সেক্রেটারি। 

আনসার সদস্য তাতেও কর্ণপাত করেননি। বরং পাশে থাকা অন্য একজন আনসার সদস্য তাতে যোগ দিয়ে দুইজন মিলে অসৌজন্য আচরণ করতে থাকলেন।

হোম সেক্রেটারি পরিচয় দেয়ার পরও তাদের পক্ষ থেকে কোনো সৌজন্য আচরণ পাওয়া গেল না। শুধু পরিচয় দিলে হবে নাকি! সাথে তো কাউকে স্যার স্যার করে ফেনা তুলতে দেখা যায় না। আনসার সদস্য হয়তো ভাবছেন, বড়ো কোনো কর্তা হলে সাথে থাকতো প্রোটকল দেওয়ার লোকজন। কিন্তু তা তো নেই। সিভিল পোশাকে একজন সাধারণ যাত্রীর মতোই তিনি...

এই গল্প আমরা শুনে থাকি উন্নত দেশের লোকজনের মুখে। বাংলাদেশ কী তাহলে উন্নত দেশ হয়ে গেল? আর না হয় জননিরাপত্তা সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দীন কেন একজন সাধারণ মানুষের মতোই এয়ারপোর্ট দিয়ে যাতায়াত করবেন?

শুধু কি তাই? জানা যায়, তিনি সাধারণ গ্যালারিতে দর্শক সারিতে বসেছিলেন সেদিন। ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহার করেননি। আসলে উন্নত মনমানসিকতার মানুষ বলেই এসব সম্ভব হয়েছে।

৩০ মার্চ সকালে এই ঘটনায় দুই আনসার সদস্য জহিরুল ইসলাম ও সেন্টু রহমানকে সাময়িকভাবে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে নেয়া হয়। কী অপরাধ ছিল তাদের? আমরা অনুসন্ধান করলে পাই-

১. এয়ার নীতি অনুযায়ী ছয় সে.মি. কাঁচি এলাও। এটা দায়িত্বরত আনসার সদস্যরা জানেন না। জানলেও হয়তো যাত্রী হয়রানি করার উদ্দেশ্যে লাগেজ খোলার ভয় দেখানো হয়েছে।

২. লাগেজ খোলার ভয় দেখানোর পেছনে কারণ হতে পারে 'টু-পাইস' হাতিয়ে নেয়া। কারণ, যে কোনো যাত্রী, বিশেষ করে বিমানে চলাচলকারী যাত্রীরা বেশি সংকোচে থাকেন। চিন্তায় থাকেন নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছানোর। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে ভয় দেখানো হতে পারে, যদি আবার অবৈধ কিছু আয় করা যায়।

৩. একটা গ্রুপিংয়ের মতো বিষয় দেখা গেছে এখানে। একজন বিষয়টা দেখছিল। হঠাৎ করে আরো একজন এসে জড়িত হয়েছে।

৪.  নিজেকে হোম সেক্রেটারি পরিচয় দেয়ার পরও নাম ঠিকানা সংক্রান্ত তথ্য দেননি।

৫. অনেক দামি স্ক্যান মেশিন বসানো হয়েছে, যাতে লাগেজ বা ব্যাগে কাঁচির সাইজ কতো হবে তা সহজে অনুমেয় হয়। এজন্য লাগেজ বা ব্যাগ খোলার প্রয়োজন হয় না। 

আমরা এ রকম একজনকেই চাই। যিনি প্রশাসনের সর্বোচ্চ দায়িত্বে থেকেও সাধারণ মানুষ হয়ে সাধারণ কাতারে আসেন। আপনি নিভৃতে নীরবে এসে যাত্রীরা সেবা পান কিনা দেখে থাকেন। আপনার মতো চৌকস ও দক্ষ অফিসার সাধারণ মানুষের কাম্য। আপনার মতো এরকম গোয়েন্দা মনোবৃত্তিই দেশ ও জাতীর কল্যাণ বয়ে আনবে। সম্মান আপনাকে...।

(পাঠক কলাম বিভাগে প্রকাশিত মতামত একান্তই পাঠকের, তার জন্য কৃর্তপক্ষ দায়ী নয়)
 
বিডি-প্রতিদিন/০৭ এপ্রিল, ২০১৮/মাহবুব

সর্বশেষ খবর