৫ জুন, ২০১৮ ১৪:৩৯

শৈশব আছে, শৈশবে নেই

তারিকুল সুমন

শৈশব আছে, শৈশবে নেই

কয়েক শ' বর্গফুটের ফ্ল্যাট। জন্ম থেকে সেখানেই বেড়ে ওঠা। টাইলসের মেঝেতে হামাগুড়ি থেকে দাঁড়ানোর পর প্রথম হাঁটতে শেখা। সেখানেই দৌড় থেকে খেলাধুলার অব্যহত প্রচেষ্টা। পুরো শৈশব-কৈশোর যেন শেষ হয় দেয়াল ঘেরা এই  ছোট ফ্ল্যাটেই। কিন্তু শৈশবের যে ছোটাছুটি, দিগন্ত জুড়ে সবুজের দেখা, বিস্তর খেলার মাঠে লুটোপুটি এবং মাটি ও প্রকৃতির সংস্পর্শের যে জীবন শহুরে শিশুদের জীবনে সেটির উপস্থিতি কোথায়?

জীবন পরিচালনার জন্য উপরের উপকরণগুলো কি শুধুই বিনোদন কিংবা জীবনকে অলংকরণের কাজে আসে? নাকি জীবন গঠনে এগুলোর উপস্থিতি আসলেই দরকার?

যুক্তরাষ্ট্রের ডালাসে অনুষ্ঠিত আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের এক সম্মেলনে গবেষকেরা এ বিষয়ে কিছুটা চিন্তার খোরাক জুগিয়েছেন। তারা জানিয়েছেন, আজকের যুগে শিশুরা তাদের মা-বাবার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারে না। শারীরিক সুস্থতা বা সামর্থ্য বিবেচনায় তারা মা-বাবার শৈশবকালীন অবস্থার তুলনায় পিছিয়ে রয়েছে। বিশ্বজুড়ে ১৯৭৫ সাল থেকে প্রতি দশকে নয় থেকে ১৭ বছর বয়সী শিশুদের হৃৎপিণ্ড সংক্রান্ত শারীরিক সামর্থ্য কমেছে ৫ শতাংশ। গবেষকদের মতে, ৩০ বছর আগে এক মাইল দৌড়াতে মা-বাবার যে সময় লাগত, তাদের শিশুসন্তান একই দূরত্ব দৌড়াতে এখন সময় নিচ্ছে গড়ে ৯০ সেকেন্ড বেশি।

যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ স্টিফেন ড্যানিয়েলস বলেছেন, আমাদের শিশুরা এখন আগেকার শিশুদের তুনায় কম সক্রিয়। এটি নিশ্চয়ই একটি ভাবনার ব্যাপার। জীবনযাত্রার ধরণের কারণেই শিশুরা এখন সারা দিনে শারীরিক পরিশ্রমের সুযোগ তেমন একটা পাচ্ছে না। অনেক বিদ্যালয়েই এখন শারীরিক শিক্ষার ব্যবস্থা রাখা হয় না।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ৫ থেকে ১০ বছর বয়সী প্রতিটি শিশুর জন্য দিনে অন্তত এক ঘণ্টা বাইরে খেলাধুলা করার পরামর্শ দিচ্ছে। এর মাধ্যমে একটি শিশুর মানসিক, দৈহিক ও সামাজিক উন্নতি সাধিত হয়। ঢাকা শহরের মাত্র ২ শতাংশ শিশু খেলার মাঠে গিয়ে খেলার সুযোগ পায়। ২০ শতাংশ কিশোর ছেলের মধ্যে হতাশার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে এবং ২৯ শতাংশ কিশোরীর মধ্যে হতাশার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। শিশুরা খেলার সুযোগ পাচ্ছে না, বিশেষ করে মেয়েশিশুরা আরও বেশি সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এসব কারণে শিশুরা যে কেবল বিনোদন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে তা নয়, বরং শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমে যাচ্ছে। এর কারণে অল্প বয়সেই নানা ধরনের রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শহুরে শিশুরা।

এ সমস্যা সমাধানেরও উপায় বলে দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। উদ্যমী ও পরিশ্রমী জীবন গড়ে তুলতে তিনটি কার্যকর পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এগুলোর মূল কথা হচ্ছে-শিশুদের শারিরীক কার্যক্রমে যুক্ত করতে হবে। প্রথমত সন্তানকে পরিশ্রমী হতে শিখাতে হবে। দরকার হলে অভিভাবকরাও সন্তানের বিভিন্ন খেলাধুলায় সহযোগিতা কিংবা অংশগ্রহণ করতে পারেন। সকালে তাকে নিয়ে হালকা দৌড়-ঝাঁপ করারও পরামর্শ দিয়েছেন তারা। দৌড় অথবা পরিশ্রম হয় এমন খেলায় উৎসাহ দেওয়া- কেবল একটি-দুটি বিষয়ে নয়, তাকে যাবতীয় খেলাধুলায় অনুপ্রেরণা জোগান। স্কুলের ফুটবল দলে নাম লিখিয়ে দিন। বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশ বাধ্যতামূলক করে দিন। তারা  সাঁতার কাটবে, ক্রিকেট খেলবে, দৌড়ে অংশ নেবে, হাই জাম্প বা লং জাম্প প্রতিযোগিতায় নাম লেখাবে। যদিও এতে আঘাত পাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। কিন্তু মৌলিক শিক্ষা পেলে তারা সয়ে উঠবে। দুর্ঘটনা এড়িয়ে চলার শিক্ষাও নিশ্চিত করতে হবে।

স্কুল এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানকে শিশুকে মাঠে খেলতে দেওয়ার পরামর্শ দিতে হবে যাতে শিশুরা খেলার সুযোগ পায়। এজন্য দরকার পরিপূর্ণ পুষ্টি এবং তা নিশ্চিত করতে শিশুটিকে নিয়মিত খাবারের বাইরেও বিভিন্ন ধরনের বাড়তি খাবার দেওয়া যেতে পারে। 

আজকের শিশুটি যখন আগামীর ভবিষ্যৎ, তখন তাকে সবদিক দিয়ে সুস্থ ও সবল করে তুলতে হবে। তা না হলে একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যত বিনির্মাণের ক্ষেত্রে হয়তো বা পিছিয়ে পড়তে হবে।

(পাঠক কলাম বিভাগে প্রকাশিত মতামত একান্তই পাঠকের, তার জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়) 
 
বিডি প্রতিদিন/ফারজানা

সর্বশেষ খবর