২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ১৩:২১
আন্তর্জাতিক গণআদালতে রায়

মানবতা বিরোধী অপরাধে দোষী সাব্যস্ত সু চি-সেনাপ্রধান

জহিরুল ইসলাম হিরন, মালয়েশিয়া:

মানবতা বিরোধী অপরাধে দোষী সাব্যস্ত সু চি-সেনাপ্রধান

ফাইল ছবি

মিয়ানমারে নিরীহ রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে 'গণহত্যা' চালানোর অভিযোগে অং সান সু চি সরকার ও তার সেনাবাহিনীকে দোষী সাব্যস্ত করে রায় দিয়েছে মালয়েশিয়ার আন্তর্জাতিক গণআদালত। 

শুক্রবার আন্তর্জাতিক অপরাধ তদন্তে যুক্ত বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও আইনজীবীদের সমন্বয়ে গঠিত সাত সদস্যের বিচারক প্যানেল রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতন ও গণহত্যার অন্তত ২০০ সুস্পষ্ট প্রমাণের ভিত্তিতে মিয়ানমার সরকারকে দোষী সাব্যস্ত করে এ রায় ঘোষণা করেন।আদালত এসময় রায়ের আলোকে ১৭টি সুপারিশও করেছেন।

আদালতে যুক্তরাষ্ট্রের জর্জ মাসন বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনোসাইড স্ট্যাডিজ অ্যান্ড প্রিভেনশনের গবেষক অধ্যাপক গ্রেগরি স্ট্যানটনও জবানবন্দি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যার দায়ে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী, পুলিশ, অন্যান্য বৌদ্ধ মিলিশিয়া এবং দেশটির বর্তমান বেসামরিক সরকার অভিযুক্ত। রোহিঙ্গা ইস্যুতে তিনি বলেন, তারা মিয়ানমারের সর্বস্তরে বঞ্চনা ও বৈষম্যের শিকার।

সাত সদস্যের প্যানেলে ছিলেন- ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব জেনোসাইড স্কলারসের সাবেক প্রেসিডেন্ট ও আর্জেন্টিনায় সেন্টার ফর জেনোসাইডের প্রতিষ্ঠাতা দানিয়েল ফিয়েরেস্তেইন, গান্ধী ইন্টারন্যাশনাল পিস অ্যাওয়ার্ড বিজয়ী আয়ারল্যান্ডের ডেনিস হেলিডে, ইসরায়েলের যুদ্ধাপরাধ তদন্ত-প্রক্রিয়ায় যুক্ত থাকা মালয়েশিয়ার জুলাইহা ইসমাইল, বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধ বিষয়ে কাজ করা পিপিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট কম্বোডীয় আইনবিদ হেলেন, অস্ট্রেলিয়ার সিডনির মেকুইয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সাবেক প্রধান গিল এইচ বোয়েরিঙ্গার, ইন্দোনেশিয়ার মানবাধিকার আইনজীবী নুরসিয়াবানি কাতজাসুংকানা, ইরানের মানবাধিকার আইনজীবী সাদি সদর এবং ইতালির সুপ্রিমকোর্ট অব ক্যাসেসনের বর্তমান সলিসিটর জেনারেল নিলও রেসি।

এছাড়া, বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হকও শুনানিতে অংশ নেন।

ট্রাইব্যুনালে মিয়ানমারে মুসলিম নিপীড়ন বিষয়ে সাক্ষ্যপ্রমাণ উপস্থাপন করা হয়। পরে প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে সমাপনী বক্তব্য শেষে বিবাদী পক্ষ বক্তব্য রাখেন। আর বৃহস্পতিবার দিনভর বিচারকমণ্ডলীর সদস্যরা তাদের বক্তব্য পেশ করেন।

এ ব্যাপারে পিপিটি মালয়েশীয় শাখার সাংগঠনিক কমিটির সভাপতি চন্দ্র মোজাফফর বলেছেন, পাঁচ দিনের অধিবেশনে বিচারকরা প্রসিকিউশনের যুক্তিতর্ক, বিশেষজ্ঞ সাক্ষীদের মতামত, ভুক্তভোগীদের জবানবন্দি বিচার বিশ্লেষণ করে এ রায় দেন।

এর আগে, ১৮ সেপ্টেম্বর মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে পার্মানেন্ট পিপলস ট্রাইব্যুনাল (পিপিটি) নামে ওই বিচারিক প্রক্রিয়া শুরু হয়। শুনানিতে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বিশেষজ্ঞদের একটি প্যানেল অংশ নেয়।

গণআদালতের এ রায় জেনেভায় জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠন ও গোষ্ঠীর কাছে পাঠানো হবে।

প্রসঙ্গত, আন্তর্জাতিক গণআদালত ১৯৭৯ সালে ইতালিতে প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে এর আন্তর্জাতিক সদস্য সংখ্যা ৬৬। প্রতিষ্ঠার পর থেকে  এ পর্যন্ত ট্রাইব্যুনালে মানবাধিকার ও গণহত্যা সংক্রান্ত ৪৩টি সেশন অনুষ্ঠিত হয়েছে। 

বিডি-প্রতিদিন/২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৭/ওয়াসিফ/ইমরান জাহান

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর