সোমবার, ২৪ নভেম্বর, ২০১৪ ০০:০০ টা

ব্যাপারটা অল রাবিশ

ছোটখাটো দোষ-ত্রুটি করেই আজকাল অনেকে 'রাবিশ' খেতাব পেয়ে যাচ্ছে। সেই হিসেবে যারা ছাত্র হয়েও পড়াশোনা করে না, বড় বড় রামদা নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করে, তারা তো 'রাবিশ' খেতাবটা পেতেই পারে। পেতেই পারে বলতে পাওয়াটা তাদের অধিকার। এই অধিকার থেকে তাদের বঞ্চিত করা কোনোভাবেই উচিত হবে না। গতকাল আমার এক কাকা বিস্ময় প্রকাশ করলেন। তিনি অবশ্য খেলাধুলার খুব ভক্ত। তো চাচা বলছিলেন-বাংলাদেশ ক্রিকেট টিম এখন ধারাবাহিকভাবে ভালো খেলছে। সারা দেশ এখন ক্রিকেটের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। ক্রিকেটের এই সুসময়ে তারা কীভাবে অন্য খেলার দিকে মনোনিবেশ করে? তাও তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের কি এটুকু ক্রিকেটপ্রীতি থাকা উচিত না? অন্য খেলার প্রতি তারা প্রেম কীভাবে দেখায়? আমি মিনমিনিয়ে জিজ্ঞেস করলাম-অন্য খেলা বলতে আপনি কোন খেলার কথা বলছেন? চাচা বললেন- হকি খেলা। তাদের টিভিতে হকিস্টিক নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করতে দেখলাম। তুই বল, এই ক্রিকেটের যুগে হকি খেলা নিয়ে এত মাতামাতি করা কি তাদের উচিত হচ্ছে? আমার এক প্রতিবেশী শোনাল ভিন্ন কথা। তিনি তার পানসে মুখ আরও বিরস বানিয়ে বলছিলেন- ভাইরে, ছাত্র নামের কলঙ্করা মারামারি করে শুধু আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই বিশৃঙ্খলা করে না। আমাদের সংসারেও অশান্তি বাড়ায়। আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম- সংসারে কীভাবে অশান্তি বাড়ায় বলেন তো? প্রতিবেশী বললেন- তাহলে সম্প্রতি যে মারামারিটা তারা করল, সেটা দিয়েই উদাহরণ দিই। এই মারামারিতে তারা বড় বড় দা নিয়ে ছোটাছুটি করছিল। তাদের হাতে এমন বড় আর ধারালো দা দেখে আপনার ভাবি শুরু করল ঘ্যানর ঘ্যানর- তোমার কাছে আমার কথার কোনো দাম নেই, তাই না? কতদিন ধরে বলছি মাছ কাটার জন্য ভালো একটা দা আনতে। তুমি খালি বলো ভালো দা নাকি পাওয়া যায় না। পাওয়া না গেলে ওরা কোত্থেকে পেল! তুমি ওদের কারও ফোন নম্বর নিয়ে জিজ্ঞেস করো এই মডেলের দা কই পাওয়া যায়। আমার আরেক প্রতিবেশী বলল- এসব সন্ত্রাসীর জ্বালায় তো আর টেকা গেল না রে ভাই। একজন জিজ্ঞেস করল- আচ্ছা ভাই, একজন ছাত্রের তো একটা রুমের চার ভাগের এক ভাগ জায়গা হলেই চলে। এটুকু জায়গার মধ্যেই ঘুমানো যায়, পড়াশোনা করা যায়। তাহলে তারা হল দখল করে কেন? এত জায়গা কেন তাদের লাগে? আমি উত্তর দেওয়ার আগেই পাশ থেকে আরেকজন উত্তর দিয়ে ফেলল- আপনার বোধ হয় ভার্সিটি এলাকায় যাতায়াত নেই। আর যাতায়াত থাকলেও ভার্সিটির হল সম্পর্কে ধারণা নেই। যদি থাকত, তাহলে এমন বেকুবের মতো কথা বলতেন না। শোনেন মিয়া, ভার্সিটির যে কোনো রুমেই কিন্তু থাকা যায় না। কারণ এখানে প্রচুর ছারপোকার বসবাস। তাই তারা পুরো হল দখল করতে চায়। যাতে এক রুমে ছারপোকায় কামড়ালে আরেক রুমে গিয়ে ঘুমাতে পারে। এ ছাড়া রামদাগুলো রাখার জন্যও তো একটা স্টোর রুম লাগে, নাকি! যেখানে-সেখানে রাখলে মরিচা পড়ে ধার কমে যাবে না? চা-স্টলে সাম্প্রতিক বিষয়-আশয় নিয়ে আলোচনা হবে, এটা খুবই স্বাভাবিক। এই স্বাভাবিকতার সূত্র ধরেই একজন বললেন- ছাত্রদের আসল কাজ হচ্ছে লেখাপড়া করা। তারা এই আসল কাজটা না করে অস্ত্র নিয়ে দৌড়ঝাঁপ করে। কেন, লেখাপড়া করলে কী হয়! পাশে বসেই চা খাচ্ছিলেন আমাদের বরকত ভাই। তিনি চায়ে লম্বা একটা চুমুক দিয়ে কাপটা খালি করে বললেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের যে অবস্থান, এই অবস্থানই ছাত্রদের লেখাপড়ার প্রতি অনাগ্রহী করে তুলেছে। কর্তৃপক্ষ যদি হলগুলো একটা পরিকল্পনা করে নির্মাণ করতেন, তাহলে ছাত্ররা মারামারি বাদ দিয়ে কেবল লেখাপড়াই করত। বরকত ভাইয়ের কথার মর্মার্থ বুঝতে না পেরে আমরা একে অন্যের মুখের দিকে তাকাচ্ছিলাম। বরকত ভাই ব্যাপারটা খেয়াল করলেন এবং মর্মার্থ খোলাসা করলেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো বানানো হয়েছে ক্লাসরুমের একদম নিকটবর্তী জায়গায়। তাই ক্লাসে যেতে হলে ছাত্রদের গাড়িতে চড়তে হয় না। ঘোড়াতে তো না-ই। যদি হলগুলো ক্লাসরুম থেকে দূরে বানানো হতো আর গাড়ি ঘোড়ায় চড়ে ক্লাসে যেতে হতো, তাহলে ছাত্ররা লেখাপড়ার প্রতি মনোযোগী হতো শুধু আরামে গাড়িতে চড়ার জন্য। গাড়িতে ভালো একটা সিট পাওয়ার জন্য। কারণ কবি বলেছেন- লেখাপড়া করে যে, গাড়ি ঘোড়া চড়ে সে।

সর্বশেষ খবর