সোমবার, ২৪ নভেম্বর, ২০১৪ ০০:০০ টা
পাঠকের লেখা

পৌষ মাস নাকি সর্বনাশ

পৌষ মাস নাকি সর্বনাশ

তোতা ভাইয়ের মনটা আজ খুব খারাপ। কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করতেই আবেগের ভাষায় বলে ফেললেন, তোরা আমারে মাইরালাসনা ক্যা?

: তোতা ভাই কি হয়েছে খুলে বলবেন তো?

: আচ্ছা তুই বল..

: এই শীতে এসি ...ফ্যান এগুলো চালানোর কোনো মানে আছে?

: না, তোতা ভাই এই শীতে আবার এগুলো চালায় কে?

: হ্যাঁ। আছে একজন, দুনিয়ার মানুষের গায়ে শীত লাগলেও তোর ভাবির গায়ে এখনো শীত লাগেনি! কাল সারা রাত যে শীত গেছে, এই হাড় কাঁপানো শীতের মধ্যেও তোর ভাবি ফুল স্পিডে ফ্যান চালাবে! আমি যতবার বন্ধ করে কম্বল গায়ে দিয়ে শুয়েছি সে ততবারই ফুল স্পিডে ফ্যান চালিয়ে আমার বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে। শেষমেশ রাত একটার দিকে তো ভীষণ যুদ্ধ! ঘুষোঘুষি করে আমার নাকটা ফাটিয়ে দিয়েছে তোর ভাবি। কি আর করব তাই সারা রাত কিচেন রুমে শুয়ে ঘুমিয়ে ছিলাম।

তোতা ভাইয়ের এমন দুঃখের কথা শুনতে শুনতে হঠাৎ আমার এক আংকেলের ফোন

: হ্যালো ভাতিজা, তোমার সাথে কিছু জরুরি কথা ছিল। তুমি কি হোস্টেলেই আছ?

: হ্যাঁ আঙ্কেল আমি হোস্টেলে আছি।

: আচ্ছা তুমি তাহলে রুমেই থেকো আমি অফিসে যাওয়ার আগে তোমার সাথে দেখা করে তবেই সব খুলে বলছি।

: ওকে আংকেল।

এক ঘণ্টা পর আংকেল এলেন।

: আচ্ছা ভাতিজা তোমার বন্ধু গত বছর যে একটা বডি স্প্রে এনেছিল সেটার নাম যেন কি ছিল?

: আংকেল আপনি এই শীতের দিনে বডি স্প্রে দিয়ে কি করবেন?

: আর ভাতিজা বলো না। তুমি তো জানো শীত আমার একদম সহ্য না! আজ ১০ দিন হলো গোসল করি না! এত ঠাণ্ডা পানি। আমি তো মরেই যাব এত ঠাণ্ডা পানিতে গোসল দিলে! এদিকে আমার শরীরের সুবাস থাকায় তোমার আন্টির আজ লাস্ট ওয়ার্নিং, আজ গোসল না করলে আর শরীরের দুর্গন্ধ দূর না করলে আমাকে আর আস্ত রাখবে না। তাই ভাবছি সেই কড়া সেন্ট এর বডি স্প্রেটা দিয়ে কাজ চালিয়ে দেব। আর তোমার আন্টিকে বলে দেব অফিসে গোসল করে নিয়েছি।

আংকেলকে নিয়ে বডি স্প্রে কিনে দিয়ে আসার পথে আমার এক বন্ধুর সাথে দেখা।

: কিরে দোস্ত, এতো শীতের কাপড় নিয়ে কই যাস নতুন কোনো শোরুম খুলে ব্যবসা শুরু করলি নাকি?

: আরে না কি যে বলিস তুই? এগুলো আমি কিনলাম!

: শীত এসেছে না? তাই বলে এত?

: আরে দোস্ত রাতে তো দেখিস কি শীত পড়ে? তাই ঘুমানোর আগে ১০-১৫টা পোশাক আর পাঁচ-সাত কম্বল গায়ে দিয়ে ঘুমাব যেন শীতের চৌদ্দগুষ্টি কাছে আসতে না পারে!

এবার একটু নিজের রুমে ফিরে আসি।

আমার রুমমেট জুবায়ের। মশার কামড় কে ভীষণ রকম ভয় পায়। শীত এলে যেমন মশার উপদ্রব বেড়ে যায় তেমনি কানের কাছে এসে প্যান প্যান করে। মেজাজটাও গরম করে দেয়। গতকাল মশারি ধুয়ে মেলে দিলেও রোদ না থাকায় শুকায়নি। কি আর করা, বেচারা সারা রুমেই অ্যারসোল মেরে অবশেষে কম্বল দিয়ে সারা গা এবং মাথা ঢেকে যেই না শুয়েছে তখনই চিৎকার দিয়ে বলে উঠল-

: শালার মশা... তোর জ্বালা-যন্ত্রণা থেকে বাঁচার জন্য আমি এতো কিছু করে অবশেষে কম্বল দিয়ে মাথা ঢেকে শুয়ে পড়লাম আর তুই আমারে এখানেও অন্ধকারে টর্চলাইট দিয়ে খুঁজতেছিস কামড় মারার জন্য?

পরে দেখতে পেলাম, ওর কম্বলের মধ্যে ছিল একটি জোনাকি পোকা!

- সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজ

 

 

সর্বশেষ খবর