সোমবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০১৪ ০০:০০ টা

বরাবর শৈত্যপ্রবাহ

ইকবাল খন্দকার

আমার এক বড় ভাইকে খুবই মনমরা অবস্থায় পাওয়া গেল। জিজ্ঞেস করলাম কী হয়েছে। উত্তর পাওয়া গেল না। আবার একই প্রশ্ন করলাম। এবার তিনি খানিকটা ঠোঁট নাড়ালেন। বোঝা গেল কিছু একটা বলতে যাচ্ছেন। কিন্তু বলতে যাচ্ছেন যাচ্ছেন করেও মিনিটখানেক কাটিয়ে দিলেন। বাধ্য হয়েই একই প্রশ্ন তৃতীয়বার করতে হলো। বড় ভাই এবার বললেন, মন সাংঘাতিক খারাপ রে। কথা বলতে ইচ্ছভ করছে না। আমি সহানুভূতির সুরে বললাম, কেন ভাই, কী হয়েছে? কোনো সমস্যা? ভাই বললেন, সমস্যা তো বটেই। প্রায় ৫০ হাজার টাকা লস। আমি অাঁতকে উঠলাম, এত টাকা লস হলো কীভাবে? আপনি তো শেয়ারের ব্যবসাও করেন না। তাহলে? বড় ভাই বললেন, আমি ৫০ হাজার টাকা লস খেয়েছি শীতের কারণে। আমি বললাম, ও, এইবার বুঝতে পেরেছি। আপনি মনে হয় এসি, ফ্যানের ব্যবসা দিয়েছিলেন। হঠাৎ শীত পড়ে যাওয়ায় এখন আর ফ্যান এসি কেউ কিনছে না, তাই লস খেয়েছেন। বড় ভাই বললেন, বেকুবের মতো কথা বলিস না তো! আমি ফ্যান এসির ব্যবসা দিয়ে লস খাইনি। লস খেয়েছি অন্যভাবে। এক মাস আগে ৫০ হাজার টাকা দিয়ে ডায়মন্ডের আংটি কিনেছিলাম। ভেবেছিলাম সবাইকে দেখিয়ে বেড়াব। কিন্তু এখন শীতের কারণে না পারছি পকেট থেকে হাত বের করতে, না পারছি হাত থেকে হাতমোজা খুলতে। ফলে কেউ আমার দামি আংটিটা দেখতে পাচ্ছে না। ৫০ হাজার টাকা পুরো পানিতে না? পানির প্রসঙ্গ যেহেতু চলেই এলো, অতএব পানি নিয়ে খানিকক্ষণ বাৎচিত করা যাক। আমার এক বন্ধু ব্যাপক ঘাড়ত্যাড়া। একদমই বউয়ের কথা শুনতে চায় না। বউ তাকে উত্তরে যেতে বললে সে যাবে দক্ষিণে। আর দক্ষিণে যেতে বললে কোনোদিকেই যাবে না। সেই বন্ধুর প্রশংসায়ই পঞ্চমুখ হলো স্বয়ং তার বউ। বলল সে নাকি এখন তার সব কথা শোনে। নিয়মিত বাজার করে, শপিংয়ে নিয়ে যায়, শাড়ি কিনে দেয় ইত্যাদি ইত্যাদি। আমি বললাম, আমার ঘাড়ত্যাড়া বন্ধুর ঘাড় আপনি কীভাবে সোজা করলেন ভাবী? আপনি এই কাজ কীভাবে করলেন? ভাবী বললেন, আমাকে এই অসম্ভব কাজ সম্ভব করতে সাহায্য করেছে এক বালতি ঠাণ্ডা পানি। আমি আপনার ভাইয়ের সামনে বালতি ভর্তি ঠাণ্ডা পানি এনে বলেছি অমুক কাজটা কর, নইলে এই ঠাণ্ডা পানিয়ে দিয়ে গোসল করতে হবে। আপনার ভাই কনকনে শীতে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে গোসল করার ভয়ে আমার সব কাজ করে দিচ্ছে। ভাবছি তার নামে যে ফ্ল্যাটটা আছে, সেটাও নিজের নামে লিখিয়ে নেব ঠাণ্ডা পানির ভয় দেখিয়ে।' শীতকালে সবাই চেষ্টা করে ঘরে থাকতে। বাইরে ঠাণ্ডা বাতাস থাকায় কেউ পারতপক্ষে বাইরে বের হতে চায় না। কিন্তু আশ্চর্যজনক হলেও সত্য, আমার এক চাচা শীতকালে একদমই ঘরে থাকতে চান না। সারাদিন বাইরে বাইরে থাকেন, রাতে শুধু এসে ঘুমান। একদিন তাকে জিজ্ঞাসা করলাম- আচ্ছা চাচা, এই কনকনে শীতের মধ্যে বাইরে বের না হলে হয় না? চাচা বললেন, বেক্কল কোনহানের। আরে বেডা, কনকনের শীত দেইখাই তো বাইরে যাই। জিনিসপত্রের যা দাম! জিনিসপত্রের এই অতিরিক্ত দামের জন্য বাজার সবসময়ই গরম থাহে। তাই ঠাণ্ডা থেইকা বাঁচার লাইগা বাজারে গিয়া বইয়া থাহি। গতকাল আমার এক ছোট ভাই ফোন করল। তার গলা শুনেই বুঝলাম তার মন ভালো নেই। জিজ্ঞাসা করলাম কী হয়েছে। ছোট ভাই বলল, ভাই, গত এক সপ্তাহ ধরে ফেসবুকে নতুন ছবি আপলোড করতে পারছি না, কুয়াশার জন্য সূর্য উঠতে পারছে না। সূর্যের আলো না থাকলে ছবি ভালো আসে, বলেন!

সর্বশেষ খবর