সোমবার, ২ মার্চ, ২০১৫ ০০:০০ টা

আমি যখন র‌্যাম্প মডেল

আলিম আল রাজি

আমি যখন র‌্যাম্প মডেল

আমি অল্পতেই নার্ভাস হয়ে যাই। ৫ জন মানুষের সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলতে গেলে গা দিয়ে দরদর করে ঘাম বের হয়, হাঁটু কাঁপতে থাকে। সে আমি র‌্যাম্প মডেলিংয়ে নামব, এক হাজার মানুষের সামনে অাঁকাবাঁকা হয়ে হাঁটব এটা কখনোই ভাবিনি।

কিন্তু সেটাই হলো।

আমি মোটেও নিজের ইচ্ছায় র‌্যাম্প মডেল হতে যাইনি। এর পেছনে সব অবদান এবং হুমকি হচ্ছে তানিয়া নামের এক মেয়ের। মেয়ে আমার বান্ধবী। উচ্চতা ছয় ফুটের কাছাকাছি। মেধাবী এবং স্টাইলিস্ট। তার অনেক গুণ। তবে সবচেয়ে বড় গুণ হচ্ছে, সে মার্শাল আর্ট শিখেছে। এ কারণে মেয়েকে আমি কিছুটা ভয় পাই।

তানিয়া একদিন আমাকে ফোন দিল।

: তুই কই?

: বাসায়।

: তোকে হাঁটতে হবে।

: নো প্রবলেম। হাঁটব।

: গাধা, তোকে আমার সঙ্গে হাঁটতে হবে।

: সমস্যা নেই।

: তোকে ফ্যাশন শোতে হাঁটতে হবে। নবীন বরণের অনুষ্ঠানে।

আমি ফোন রেখে দিলাম। আবার ফোন দেওয়ার আগে ফোন বন্ধও করে দিলাম। মাথাটা কেমন জানি ঘুরাল। আমি কিছুদিন আগে রক্ত দিয়েছি। শরীরটাও বেশ দুর্বল তাই অল্পতেই মাথা ঘুরায়।

প্রেশার নেওয়া ঠিক হবে না। ঘুমিয়ে গেলাম।

ঘুম ভাঙল কলিং বেলের শব্দে। তানিয়া আমার বাসায় এসে হাজির।

সে একই আবদার। আমাকে ফ্যাশন শোতে হাঁটতে হবে। আমি তাকে বোঝালাম, আমাকে নেওয়ার কী দরকার। আমি রক্ত দিয়েছি মাত্র তার ওপর দুর্বল শরীর। ক্লাসে তো আরও অনেকে আছে। তানিয়া আমাকে যুক্তি দেখাল। সে ক্লাসের সবচেয়ে লম্বা মেয়ে। ফ্যাশন শোতে অন্য যেসব ছেলে যেতে ইচ্ছুক তারা সবাই তার চেয়ে খাটো। সে খাটো ছেলেদের সঙ্গে হাঁটবে না। তার ইমেজ সংকট হবে। আমি তার চেয়ে লম্বা। অতএব আমাকেই হাঁটতে হবে। যুক্তি ভালো। কিন্তু আমি রাজি হলাম না। তানিয়া আমাকে ইমোশনাল ডায়ালগ দিলো-

: তুই আমার বন্ধু না? এত করে বলছি, না করিস না। আমি বললাম, না... হবে না। সে এবার কঠিন ডায়ালগ দিলো, একজন মেয়ের কথা তুই রাখবি না, এটাই স্বাভাবিক। হতাশ হলাম।

আমার মন গলল না। বললাম, হাঁটব না।

কিছুতে কাজ না হয়ে তানিয়া আমাকের হুমকি দিল-

: না হাঁটলে তোকে 'হুগুসিনি শট' দেব। এটা মার্শাল আর্টের একটা বিশেষ আঘাত। যেটা খেলে খবর হয়ে যাবে।

হুমকি খেয়ে দমে গেলাম। এই মেয়ের ওপর বিশ্বাস নেই। যে কোনো সময় কিছু করে ফেলতে পারে।

'হুগুসিনি শট' কী চিনিনা, তবে সাংঘাতিক কিছু এটা বুঝতে পারি। টানা ১ সপ্তাহ রিহার্সেল চলল। হাঁটাহাঁটির যে এত কায়দা আছে ফ্যাশন শোর লাইনে না নামলে জানাই হতো না।

এরপর একদিন এলো সেই কাঙ্ক্ষিত দিন। প্রায় এক হাজার মানুষ, মঞ্চ প্রস্তুত। আমার মাথা ঘুরতে থাকল। এক সপ্তায় যা একটু শিখেছিলাম, সব ভুলে যাওয়ার অবস্থা হলো।

তানিয়া আর আমি ব্যাক স্টেজ থেকে ধীরে ধীরে মঞ্চে উঠলাম। হাঁটতে হাঁটতে মাঝখানে গেলাম। স্পিকারে হেভি বিটের গান চলছে, স্মোক মেশিন থেকে

ধোঁয়া বের হচ্ছে, দর্শক হাততালি দিচ্ছে, আমার মাথা ঘুরাচ্ছে। আমরা মঞ্চে অাঁকাবাঁকা হয়ে অনেকক্ষণ হাঁটলাম। প্রায় শেষ হয়ে এলো ফ্যাশন শো।

এবার শেষ অংশ। সামনে গিয়ে একটা পোজ দিতে হবে। আমরা গেলাম। পোজও দিলাম।

হঠাৎ কী যে হলো, কিছুদিন আগে রক্ত দিয়েছি তার ওপর শরীরটাও দুর্বল হয়তো মাথাটা খুব জোরে একটা চক্কর দিলো। আমি মঞ্চ থেকে ধুম করে পড়ে গেলাম। চোখ মেলে দেখলাম আমি হাসপাতালে। এটাই ছিল আমার শেষ ফ্যাশন শো।

 

 

সর্বশেষ খবর