সোমবার, ৪ মে, ২০১৫ ০০:০০ টা

হ্যাপি খোঁড়াখুঁড়ি

হ্যাপি খোঁড়াখুঁড়ি

কিছু নিয়ম আপনাকে মেনে নিতেই হবে। মনে করতে হবে এগুলো অনিবার্য। অনিবার্য মানে বোঝেন তো? যা নিবারণ করা যায় না, তাকেই বলা হয় অনিবার্য। এসব অনিবার্য নিয়মের মধ্যে অন্যতম প্রধান একটি নিয়ম হচ্ছে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি। সামনে বর্ষাকাল, অতএব এখন থেকেই শুরু হয়ে যাবে এই অনিবার্য নিয়মের মহোৎসব। শুরু হয়ে যাবে বলছি কেন, ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। গত রাতে হঠাৎ করে আমার এক পুরনো বন্ধুর ফোন। এই বন্ধু এতটাই লম্বা যে, আমরা তাকে জিরাফ বলে খেপাতাম। এমনকি আমার মোবাইলেও তার নম্বর জিরাফ নামেই সেভ করা ছিল। আমি ফোন রিসিভ করেই বললাম, কী রে জিরাফ, আছিস কেমন? জিরাফ আমার কথার উত্তর না দিয়ে বলল, সারা জীবন তো আমাকে নিয়ে মজাই করে গেলি। আমি লম্বা, আমার নাকি হাঁটুর নিচে বুদ্ধি। আরে বেটা, বুদ্ধি হাঁটুর নিচে থাক আর পায়ের তলায়ই থাক, কথা তো সেটা না। কথা হচ্ছে, বাঁচতে হবে। আমি যদি সাইজে লম্বা না হয়ে তোদের মতো হাফসাইজ হতাম, তাহলে আজকে নাই হয়ে যেতাম। এই শহরে বেঁচে থাকতে হলে আমার মতো লম্বাই হতে হবে। নইলে ঘর থেকে বের হওয়া রিস্কি। জীবন ঝুঁকির মুখে পড়ে যাবে। আমি বললাম, আরে বেটা জিরাফ, এত লম্বা বয়ান না দিয়ে বলে ফেল কী হয়েছে। জিরাফ বলল, দোস্ত রে, অন্য খেয়ালে রাস্তা দিয়ে হাঁটছিলাম। রাস্তা যে খুঁড়ে রেখেছে খেয়াল করিনি। ধুম করে পড়ে গেলাম গর্তে। গর্ত ভর্তি পানি। আমি সাইজে লম্বা হওয়ায় এই পানিতে ডুবে যাইনি। তাই আমি মনে করি, ঢাকা শহরে বেঁচে থাকতে হলে আমার মতো লম্বা হতে হবে। যাতে গর্তে পড়ে গেলেও মাথার চুল না ভেজে। লম্বা হওয়ার কিন্তু নানান পদ্ধতি আছে। যেমন ধর...। জিরাফ লম্বা হওয়ার টিপস দিতে যাচ্ছিল। আমি তাকে ধমক দিয়ে থামিয়ে দিলাম, হেই বেটা, সবাইকে তোর মতো জিরাফ হতে হবে কেন! একটু খেয়াল করে চলাফেরা করলেই তো গর্ত থেকে বাঁচা যায়। উপরের দিকে তাকিয়ে আকাশের তারা গুনতে গুনতে হাঁটলে তো গর্তে পড়তেই হবে। জিরাফকে বলা কথাগুলো নিজের কাছেই ভালো লেগে গেল। নিজে নিজেই বলে উঠলাম, বাহ্, আমি তো খুব ভালো বলেছি! অতএব সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম, এখন থেকে যারাই খোঁড়াখুঁড়ির বিপক্ষে বলবে, সবাইকে কথা শুনিয়ে দেব। বলব খোঁড়াখুঁড়ি একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। অতএব এটা মেনে নিতে হবে। কোনো প্রকার প্রতিবাদ করা যাবে না। আমার এই সিদ্ধান্তের কথা শুনে আমার ফ্ল্যাটের এক ভদ্রলোক বললেন- বুঝলাম আপনি শান্তিপ্রিয় লোক। এ ছাড়া আপনি খোঁড়াখুঁড়ির পক্ষে কথা বলবেন না বিপক্ষে বলবেন, সেটা একান্তই আপনার ব্যক্তিগত ব্যাপার। কিন্তু এ খোঁড়াখুঁড়ির কারণে আমার বাচ্চাদের মধ্যে যে ভুল ধারণা তৈরি হলো, এই ভুল সংশোধনের উপায় কী? আমি যথেষ্ট অবাক হয়ে বললাম, খোঁড়াখুঁড়ির কারণে আপনার বাচ্চাদের মধ্যে ভুল ধারণা তৈরি হয়েছে মানে? কী হয়েছে একটু বুঝিয়ে বলেন তো! ভদ্রলোক বললেন, আমি আমার বাচ্চাদের নিয়ে রোজ বিকেলে হাঁটতে যাই, নিশ্চয়ই খেয়াল করেছেন। হাঁটতে যাওয়ার পথে একটা গর্ত পড়ে। খোঁড়াখুঁড়ির কারণে সৃষ্টি হয়েছে গর্তটা। মাঝে মধ্যে বৃষ্টি হওয়ার কারণে গর্তে পানি জমে আছে। আমার বাচ্চারা তো কোনোদিন গ্রামে যায়নি। তাই তারা জানে না সত্যিকারের পুকুর কেমন থাকে। কিন্তু কে বা কারা জানি দুষ্টুমি করে বলেছে রাস্তার যে গর্তে পানি জমে আছে, সেই গর্তটাই নাকি পুকুর। ব্যস, এখন ওরা নিজেদের মধ্যে বলাবলি করছে এটা নাকি পুকুর। এই যে খোঁড়াখুঁড়ির কারণে বাচ্চাদের মনে ভুল ধারণা তৈরি হলো, কিছুদিন পর তো ওরা আরেকটু বড় গর্ত দেখলে সেটাকে সমুদ্র মনে করবে। করবে কিনা বলেন! আমার এক বড় ভাই হাসতে হাসতে বললেন, এক সময় রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি নিয়ে নানান উপায়ে প্রতিবাদ করার চেষ্টা করতাম। এখন আর করি না। আমি বললাম, নিশ্চয়ই গা সওয়া হয়ে গেছে। বড় ভাই বললেন, কথা সেটা না।

মনে কর, তোর বাসায় সাপও ঢুকল, আবার মশাও ঢুকল। তুই কোনটা নিয়ে ব্যস্ত থাকবি? অবশ্যই সাপ নিয়ে। কারণ মশার চেয়ে অনেক বেশি ভয়ঙ্কর সাপ। আমার অবস্থাও তাই হয়েছে। আমি লক্ষ্য করেছি, আমরা ঢাকাবাসী এমন একেকটা সমস্যায় জর্জড়িত, যেগুলোর প্রতিটাই সাপের মতো ভয়ঙ্কর। অতএব মশা টাইপের এই খোঁড়াখুঁড়ি নিয়ে ভাবার টাইম নেই, ভাবা উচিত না। আয় বরং অন্য প্রসঙ্গ নিয়ে ভাবি। আচ্ছা, ভূমিকম্প শুরু হলে কী করতে হবে যেন? এক প্রসঙ্গ পেলে তো আরেকটা ভুলে যাই।

 

সর্বশেষ খবর