সোমবার, ৪ মে, ২০১৫ ০০:০০ টা

অনেকেই কথা রেখেছে কিন্তু

অনেকেই কথা রেখেছে কিন্তু

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় লিখেছিলেন কেউ কথা রাখেনি। আমরাও কথায় কথায় সুনীল বাবুর কবিতা ঠুকে দিই একে ওকে। অমুক কথা রাখেনি, তমুক কথা রাখেনি। আসলে কী অনেকেই কথা রেখেছে। এই যেমন ধরুন আমাদের বুয়া। সপ্তাহখানেক আগে এক দুপুরে জানিয়েছিল তার দুঃসম্পর্কের কোনো এক আত্দীয় দুরারোগ্যব্যাধিতে আক্রান্ত। যে কোনো মুহূর্তে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করতে পারেন। যদি একান্তই করে ফেলেন তবে তিনি কাল আসতে পারবেন না। বুয়া কথা রেখেছেন গত এক সপ্তাহ যাবৎ তিনি আসেননি। আপনারা হয়তো ভাবছেন আমি দুই নম্বর টাইপের লোক। মৃত্যু নিয়েও আজেবাজে কথা লিখছি। সত্যটা হলো বুয়ার আত্দীয়স্বজনের তালিকা অস্ট্রেলিয়ার জনসংখ্যা থেকে সামান্য বেশি। প্রতি মাসেই কেউ না কেউ মারা যান, কেউ গাছ থেকে পড়ে হাত ভেঙে ফেলেন কেউবা রাস্তা পার হতে গিয়ে রিকশার সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে কপাল কেটে ফেলেন। যার কারণে বুয়া প্রতিবার কথা রেখে আসেন না। আমার বন্ধু শোভন। একই সঙ্গে একাধিক প্রেম করার বাজে অভ্যাস ছিল। একবার প্রেমিকার কাছে ভীষণভাবে ধরা খেয়ে শপথ করল, সে তার প্রেমিকা ব্যতীত অন্য কারও দিকে ভুলেও তাকাবে না। সত্যি কথা বলতে কী শোভন কথা রেখেছিল। সে প্রেমিকা ব্যতীত আর কারও দিকে তাকায়নি পর্যন্ত। আগে প্রেমিকা বানিয়ে তারপরই তাকাতো এর আগে না। তো এখন যদি শোভনের সে প্রেমিকা কবিতা লিখে- কেউ কথা রাখেনি? তাহলে কী তার ভুল হবে না? শোভন কথা দিয়ে কথার বরখেলাপ করার ছেলেই না। কথা দিয়ে কথা রাখার আরও বড় বড় নজির আমার কাছে আছে। আমাদের এলাকার নাইট গার্ড আনোয়ার। একবার ঝিমুতে গিয়ে ধরা খেল এলাকার সেক্রেটারির কাছে। সেক্রেটারি সাহেব বিচার করলেন। আনোয়ার কথা দিলেন মরে গেলেও সে আর ঝিমুবে না। কখনো না। আনোয়ার তার কথা রেখেছে। সে আর ঝিমুইনি কখনো। ঘুমের ওষুধ খেয়ে ঘুমিয়েছে। ওষুধ না খেলে বড্ড ঝিম ধরত তার। আর সে তো কথাই দিয়েছে কোনোভাবেই ঝিমুবে না। এবার আপনারাই বলুন, কেউ কথা রাখেনি কথাটা কি ভুল নয়? আমার তো ধারণা সুনীল বাবু ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকেই এটি লিখেছেন। কে না কে তাকে তিন প্রহরের বিল দেখাবে বলে কথা দিয়ে দেখায়নি অমনি তিনি একটা কবিতা লিখে ফেললেন। বলি, মগের মুল্লুক?

হাসান ভাইয়ের প্রেমিকার নাম প্রিয়া। তাদের খারাপ সময়ে তারা সিদ্ধান্ত নিলেন আর একসঙ্গে নয়। কাঁদতে কাঁদতে হাসান ভাই বললেন, 'দেখ প্রিয়া, অনেক জটিলতার কারণে তোমার সঙ্গে আমার প্রেমের সম্পর্কটা হয়তো ভেঙে গেল। কিন্তু বিয়ে আমি তোমাকেই করব। তুমি ব্যতীত অন্য কোনো মেয়েকে আমি বিয়ে করব না।'

গত পাঁচ বছর যাবৎ হাসান ভাই তার কথা রেখেছেন। তিনি প্রিয়া আপু ব্যতীত কাউকে বিয়ে করেননি। কেবল পাঁচ বছরে ১৭টা প্রেম করেছেন। এবং ১৭ জনকে ব্যতীত অন্য কাউকে বিয়ে করবেন না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন। কথা দিয়ে কথা রাখার এমন নজির ইতিহাসে খুব কম। অথচ সুনীল বাবু পড়ে আছেন একশো একটি নীল পদ্মে। তিনি জানেন না একশো একটি নীলপদ্ম আনতে যে পরিশ্রম করতে হয়, আজকাল সে পরিশ্রম দিয়ে অনেকেই একশো একটি প্রেম করে ফেলে। শেষ একটা ঘটনা না বললেই নয়। এ ঘটনার মাধ্যমে প্রমাণ হয়ে যাবে সবাই কথা দিয়ে কথা রাখেন না এমন না, অনেকেই কথা রেখেছেন। ১৯৬০ সালের ঘটনা। আবদুল কাদের নামের ২৫ বছরের এক যুবকের সঙ্গে প্রেম চলছিল ১৭ বছরের কিশোরী আফরোজার। আফরোজার বাবা বিশাল ধনী। এদিকে আবদুল কাদের গরিব। এ অবস্থায় তাদের একসঙ্গে থাকা হলো না। আফরোজার বিয়ের দিন আবদুল কাদের চিঠি লিখে জানিয়েছিল, 'আফরোজা যেও না, তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচবো না।' আবদুল কাদের আফরোজাকে ছেড়ে সত্যিই বাঁচেননি, গত বছর মানে ২০১৪ সালের এক সকালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

 

সর্বশেষ খবর