সোমবার, ২৫ মে, ২০১৫ ০০:০০ টা

এক জ্যৈষ্ঠে গরম যায় না

ইকবাল খন্দকার

এক জ্যৈষ্ঠে গরম যায় না

গরম! শব্দটা শুনলেই কেমন যেন গরম লাগতে শুরু করে। মনে হয় এখন বুঝি ঘেমেটেমে একাকার হয়ে যাব। আর প্রকৃতি যদি পুরোপুরি ক্ষ্যাপা থাকে তাহলে তো কোনো কথাই নেই। আপনাকে ঘামের সাগরে ডুবিয়ে ছাড়বে। প্রকৃতির সেই ক্ষ্যাপা সময়টাই চলছে এখন। বাপরে বাপ গরম কাকে বলে! আমার এক বন্ধু বলল, গরমের কারণে বাড়িওয়ালার সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে গেলাম। হয়তো যখন তখন বাড়ি ছাড়ার নোটিস পেয়ে যেতে পারি। আমি অবাক হয়ে বললাম, গরমের কারণে বাড়িওয়ালার সঙ্গে বিবাদে জড়িয়েছিস মানে? গরম কারও সঙ্গে বিবাদে জড়ানোর কারণ হতে পারে নাকি! বন্ধু বলল, অবশ্যই হতে পারে। শোন তাহলে। আমার বাড়িওয়ালা অন্য দশটা বাড়িওয়ালার মতোই। আমাকে ছাদে উঠতে দেবে না। যেহেতু ঢাকা শহরের বাসা পাওয়া কঠিন, তাই বাড়িওয়ালার শর্ত মেনে নিয়েছিলাম। কিন্তু এই কদিন ধরে ছাদে না উঠে পারছি না। কমপক্ষে দৈনিক দুবার তো উঠছিই।

এটা নিয়েই বাড়িওয়ালা আমার ওপর ক্ষিপ্ত। আমি বললাম, ঠিকই তো আছে। বাড়িওয়ালা যেখানে আগেই বলে রেখেছে ছাদে উঠা যাবে না, তুই উঠবি কেন? তাও আবার দৈনিক দুবার। বন্ধু বলল, দুবার না উঠে কী করব বল। রোজ রাতে প্রচণ্ড গরমে এমনভাবে ভিজি যে, বালিশ ভিজে জবজবে হয়ে যায়। এই ভেজা বালিশ ছাদের কড়া রোদ ছাড়া শুকায় না। সকালে একবার ছাদে শুকাতে দিয়ে আসি, বিকালে আবার নিয়ে আসি। এই হলো দুবার। আমার এক বড় ভাই এমনিতে কখনো মোবাইলে কভার ইউজ করেন না। কিন্তু দুদিন আগে যখন দেখা, দেখি তার মোবাইলে কভার তো লাগানোই, পলিথিন দিয়ে প্যাঁচানোও। আমি বললাম, ব্যাপার কী ভাই? এতদিন কভারই ইউজ করলেন না, এখন কভারের ওপর পলিথিনও প্যাঁচিয়ে রেখেছেন। কাহিনী কী? বড় ভাই বললেন, এখন প্যাঁচানো দরকার ছিল, তাই প্যাঁচিয়েছি। কদিন পর একটু মেঘ বৃষ্টি হলে খুলে ফেলব। আমি তাজ্জব হয়ে বললাম, এটা আপনি কী বলছেন! এখন শুকনার দিনে মোবাইলে পলিথিন প্যাঁচিয়ে রেখেছেন।

অথচ মেঘ বৃষ্টির দিনে নাকি খুলে ফেলবেন। আরে মেঘ বৃষ্টির দিনেই তো পলিথিন দরকার। যাতে বৃষ্টির পানি না ঢোকে। বড় ভাই বললেন, তোর কথা ঠিক আছে। তবে আমি যা বলছি, সেটা তুই বুঝতে পারছিস না। মেঘ বৃষ্টি হলে মোবাইল থেকে পলিথিন খুলে ফেলব এ জন্য, কারণ তখন একটু ঠাণ্ডা পড়বে। কম ঘামব। এখন গরম বেশি তাই বেশি ঘামি তো! এ অবস্থায় কান, চাপা ইত্যাদি ঘেমে মোবাইলের ভেতর পানি ঢুকে যায়। যতদিন এই পরিমাণ গরম থাকবে ততদিন মোবাইল রক্ষার জন্য যা যা করা দরকার সব করব।

আমার এক চাচা সবসময়ই ভারি ভারি কথা বলার চেষ্টা করেন। যে কারণে তার প্রতিটি কথাকেই বাণী ক্যাটাগরিতে ফেলা যাবে। গরমে সম্পর্কে চাচা বললেন, আমরা যদি গরম নিয়ে হা হুতাশ করি, সেটা হতে বাড়াবাড়ি।

কারণ আমরা সারাবছরই গরমের মধ্যে থাকি। অতএব গরমটা আমাদের কাছে সহনীয় হয়ে যাওয়ার কথা। গরমটাকেই স্বাভাবিক ধরে নেওয়া উচিত। একজন মৃদু প্রতিবাদ জানাল, আপনের কথাটা ঠিক মানবার পারলাম না। আমরা সারাবছর গরমের মধ্যে থাকি মানে? সারাবছর আমরা গরমের মধ্যে থাকি না। কমপক্ষে চার মাস আমরা শীত উপভোগ করি। ঠিক কিনা? চাচা বললেন, জী না, ঠিক না।

আমরা সত্যি সত্যিই সারাবছর গরমের মধ্যে থাকি। কেন, শীতকালে কি বাজার গরম থাকে না? রাজনীতির গরম থাকে না? বউয়ের মেজাজ গরম থাকে না? আরও কত কিসিমের গরম। সারাবছর যদি আমরা এতসব গরম সহ্য করতে পারি, তাহলে এই কদিনের গরমে অতিষ্ঠ হয়ে যাব কেন? চাচার কথায় আশপাশের লোকজন মোটেই সন্তুষ্ট হতে পারল না। একজন বলে উঠল, যে বিপদে পড়ে, একমাত্র সে-ই জানে বিপদ কী জিনিস। গরমের কারণে আমি বিপদে পড়ছি, আমি বুঝতেছি ঠেলাটা। আপনে তো বিপদে পড়েননি, তাই গরমের পক্ষে কথা বলতেছেন। চাচা সাগ্রহে জিজ্ঞাসা করলেন, গরমের কারণে আপনে কী বিপদে পড়ছেন বলেন তো! লোকটা বলল, আরে আর কইয়েন না। আমার শ্বশুরবাড়িতে এসি নেই, কিন্তু আমার বাড়িতে এসি আছে। এসির বাতাসের লোভে আমার শ্বশুরবাড়ি থেকে সেই যে একদল মেহমান বেড়াতে এসেছে, আর যাওয়ার নাম গন্ধ নেই। শীতকাল আসা পর্যন্ত মনে হয় না যাবে।

 

সর্বশেষ খবর