সোমবার, ২৫ মে, ২০১৫ ০০:০০ টা

মৌসুমি প্রেম

কাসাফাদ্দৌজা নোমান

মৌসুমি প্রেম

ছোট ভাইয়েরা প্রেমে ব্যর্থ হলে পটকা ভাইয়ের কাছে আসেন। এ মুহূর্তে এক ছোট ভাই এসেছে এক মেয়েকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে ব্যর্থ হয়ে। সে সাজেশন চায়। পটকা ভাই ভাবতে ভাবতে ঘেমে গেলেন। 'এক কাজ কর, তুই তাকে এক কেইস আইসক্রিম দিয়ে প্রেমের প্রস্তাব পাঠা'।

ছোট ভাই ঘামতে ঘামতে খুশি হয়ে গেল, বস, আপনি না অসাধারণ!

নিজের অসাধারণত্বের ব্যাপারে তিনি আগে থেকে ওয়াকিবহাল। নিজের কাজে মন দিলেন।

চার দিন পর। সে ছোট ভাই পটকা ভাইয়ের সামনে বসা। তার মুখ বিমর্ষ। গত ৩০ মিনিটে কোনো কথা বলেনি। পটকা ভাই যতই জিজ্ঞাসা করেন কী হয়েছে, বলে না। আইডিয়া ভেস্তে যাওয়ার সম্ভাবনা যে নেই তা না। তবে ভেস্তে গেলে নতুন আইডিয়া নিয়ে মাঠে নামতে হবে। ব্যবসা আর প্রেমে সাফল্য একদিনে আসে না। লেগে থাকতে হয়। পটকা ভাই কণ্ঠ কোমল করে তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, কী হয়েছে বল, নইলে তো সমাধান করা যাবে না।

সে বলল, আমি তিন কেইস আইসক্রিম নিয়ে তার সামনে রেখে বললাম ভালোবাসি।

: তারপর?

: সে বলল ধন্যবাদ।

: তারপর?

-তারপর বললাম আমি তোমাকে ভালোবাসি

: কী বলল?

-আবার বলল ধন্যবাদ

: ধন্যবাদের পর কিছু বলেনি?

: বলেছে তো।

শুনে পটকা ভাই খুশি হয়ে গেলেন। তিনি জানতেন বলবেই। এই গরমে আইসক্রিম নিয়ে প্রেমের প্রস্তাব দিলে কারও সাধ্য নেই সেই প্রস্তাবে না করে। খুব আগ্রহ নিয়ে নিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, ধন্যবাদের পর কী বলেছে?

: বলেছে ধন্যবাদ আবার আসবেন!

তারপর আবার তারা মিটিংয়ে বসলেন। এটা কেবল ছোট ভাইয়ের ভালোবাসার প্রশ্ন না পটকা ভাইয়ের ইজ্জতেরও প্রশ্ন। এতদিনের অভিজ্ঞতা, সুনাম সব ধুলোয় মিশে যেতে দেওয়া যাবে না। যেহেতু গরম, গরমকে সামনে রেখেই নতুন পরিকল্পনা সাজানো হলো পটকা ভাইয়ের নেতৃত্বে। তরমুজ, আনারস, আম, লিচুসহ সব ধরনের মৌসুমি ফল নিয়ে তাকে প্রেমের প্রস্তাব পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো। এবার প্রেম না করে যাবে কই। প্রয়োজনে ছোট ভাইকে বলা আছে সে মেয়েকে একটা আমবাগান উপহার দেওয়ার কথা বলে আসতে।

তিন দিন পর। আবার সে ব্যর্থ হয়ে পটকা ভাইয়ের সামনে। এবার সে কিছুটা ক্ষিপ্ত। পটকা ভাই তার লাখ লাখ টাকা নষ্ট করে ফেলেছি। এত সব মৌসুমি ফল কিনতে তার যে টাকা খরচ হয়েছে সে টাকা দিয়ে চাইলে ভারত গিয়ে ঐশ্বরিয়াকে প্রেমের প্রস্তাব দিতে পারত বলে সে দাবি করেছে। দুঃখজনক। এ প্রজন্ম প্রেমের জায়গাটাতেও ঠিক থাকে না। খালি এদিক-ওদিক ছোটাছুটি করে।

: আমাকে ৩০ হাজার টাকা দ্যান।

বুকটা কেঁপে উঠল। ৩০ হাজার টাকা যদি তার থাকত তাহলে এভাবে জ্ঞান বুদ্ধি বিতরণ করতেন না। এক গবেষণায় দেখা গেছে যাদের পকেটে টাকা নেই, হাতে কাজ নেই সমাজে তারাই জ্ঞান বিতরণ করে থাকেন। নিজেকে এমন বুদ্ধিজীবী ভাবতে মোটেও কষ্ট হচ্ছে না পটকা ভাইয়ের। কিন্তু ঘটনা কী হয়েছে জানতে তো হবে। তিনি আবার জিজ্ঞাসা করলেন এত কিছু নিয়ে প্রেমের প্রস্তাব দিলি। কিচ্ছু বলল না?

: বলেছে তো।

: বলেছে আপনার ফলমূলগুলো রাখছি। ভালোবাসাটা আপনার কাছে থাক। আমি বিবাহিত।

বলার মতো আর কোনো মুখই রইল না। এ যেন নিজের পরাজয়। তিনি মুষড়ে পড়তে পড়তে বাসায় চলে গেলেন। হাতে কাজ না থাকলেও ঘরে তার বউ আছে। এই গরমে তিনি বাসায় গিয়ে দেখলেন তার স্ত্রী টেবিলে নানারকম মৌসুমী ফল কেটে সাজিয়ে রেখেছে। তিনি এক পিস আম মুখে দিতে দিতে বললেন, কী ব্যাপার এত ফলমূল কেন? শ্বশুর মশাই এসেছিল নাকি?

স্ত্রী কপোট রাগ নিয়ে বললেন, না, এক রোমিও এসেছিল মৌসুমি ফল নিয়ে প্রেমের প্রস্তাব দিতে। কোন ধরনের বলদ এসব বুদ্ধি যে দেয়...

পটকা ভাই দ্বিতীয় পরাজয়বরণ করে আমে জোরে একটা কামড় দিলেন।

 

সর্বশেষ খবর