সোমবার, ৬ জুলাই, ২০১৫ ০০:০০ টা

অগ্রিম টিকিট অগ্রিম শেষ

ইকবাল খন্দকার

অগ্রিম টিকিট অগ্রিম শেষ

আমার এক বড় ভাই বললেন, টিকিট নিয়ে যা হচ্ছে তাতে আমার ভয় বেড়েই চলেছে। কখন যে মান সম্মান মাঠে মারা যায়! আমি বললাম, মান সম্মান মাঠে মারা যাওয়ার বিষয়টা ঠিক বুঝলাম না ভাই। বড় ভাই বললেন, তুই আসলে আমার কোনো কথাই বুঝিসনি। আমি মিনমিনিয়ে বললাম, তাহলে বুঝিয়ে বললেই হয়। বড় ভাই বুঝিয়ে বললেন, আমার পরিচিত অনেকেই বাসের-ট্রেনের টিকিটের জন্য গিয়েছিল। তারা ফিরে এসে একটা কথাই বলেছে, টিকিট নাকি হাওয়া। এই যে এত এত টিকিট 'হাওয়া' হচ্ছে, ভয়টা আমার এই জায়গায়ই। যদি সব হাওয়া মিলে ঝড়ো হাওয়ার সৃষ্টি হয় আর আমার মাথার চুল উড়িয়ে নিয়ে যায়। আমার মাথায় আলগা চুল লাগানো তো! ফ্যানের বাতাসেই এই চুল অনেক সময় খুলে যায়। আর টিকিট হাওয়া হতে হতে ঝড়ো হাওয়ার সৃষ্টি হলে সেই হাওয়ায় মাথার চুল আকাশে উড়ে যাবে না? তখন মান সম্মান থাকবে? আমার এক প্রতিবেশী বলল, আমি ভাই এমনিতে আমার বাচ্চাদের সঙ্গে খুব একটা ফ্রি না। ওদের সঙ্গে কোথায় যেন একটা দূরত্ব আছে। কিন্তু টিকিট নিয়ে যা হচ্ছে, তাতে ওদের সঙ্গে ফ্রি না হয়ে উপায় নেই। আমি নানাভাবে চেষ্টা করছি ফ্রি হওয়ার জন্য। এখন থেকে চেষ্টা না করলে কিন্তু হবে না। আপনি কী বলেন? আমি বললাম, আমার আর কী বা বলার আছে! আমি তো আপনার কথার আগামাথা কিছুই বুঝতে পারছি না। প্রতিবেশী বলল, না বোঝার মতো কঠিন কোনো কথাই আমি বলিনিরে ভাই। টিকিট নিয়ে কীসব কাণ্ড কারখানা হচ্ছে, সেটা তো আপনি জানেন। কালোবাজারি, এই সেই আর কত কিছু। আমি বাপু সহজ সরল মানুষ। আমার পক্ষে এসব ঝক্কি ঝামেলার মধ্যে যাওয়া সম্ভব নয়। ঝক্কি ঝামেলার মধ্যে না গেলে যে টিকিটও পাব না, এটাও জানা আছে। আর টিকিট না পেলে বাধ্য হয়েই ঈদ করতে হবে। শুনেছি ঈদের সময় ঢাকার রাস্তা নাকি পুরোপুরি ফাঁকা থাকে। আর সেই রাস্তায় বাচ্চারা ক্রিকেট খেলে। যেহেতু টিকিটের অভাবে ঢাকায়ই ঈদ করতে হচ্ছে তার মানে সময়টা বাচ্চা কাচ্চাদের সঙ্গেই কাটাতে হবে। তাদের সঙ্গে ফাঁকা রাস্তায় ক্রিকেট খেলতে হবে। কিন্তু ওদের সঙ্গে ফ্রি না হলে তো ওরা আমাকে খেলায় নেবে না। তাই ফ্রি হচ্ছি আরকি। আসলে হয়েছে কি, দলে চান্স পাওয়া কিন্তু বিরাট ব্যাপার। আমার এক দুলাভাই বললেন, প্রতি ঈদের সময়ই টিকিট নিয়ে নানা কাণ্ড কারখানা হয়। টিকিট কাটতে গিয়ে ধাক্কাধাক্কি করে কতজন যে গায়ের শার্ট কাঁচুমাচু আর ময়লা করে, তার কোনো হিসাব নিকাশ নাই। আমি মনে করি, কর্তৃপক্ষ যদি একটা সিস্টেম চালু করে দেয় তাহলে টিকিট নিয়ে এই হুলুস্থূল আর হবে না। আমি অতি আগ্রহের সঙ্গে বললাম, সিস্টেমটা কী একটু বলেন তো। দুলাভাই বললেন, ফটোকপি সিস্টেম। এক ফ্যামিলি থেকে একটা করে টিকিট কাটা হবে। তারপর এই ফ্যামিলিতে যে কজন সদস্য আছে, সবাই ফটোকপি করে নেবে। দরকার হলে পরিবারের সবচেয়ে বয়োজ্যেষ্ঠ যে, তার কাছ থেকে ফটোকপি করা টিকিটগুলো সত্যায়িত করে নেবে। এবার পাশ থেকে আরেকজন বলল, যদি ফটোকপির সিস্টেম চালু হয়, তাহলে যে ধাক্কাধাক্কিটা এখন টিকিট কাউন্টারে হয়, সেই ধাক্কাধাক্কিটা তখন হবে ফটোকপির দোকানে। ধাক্কাধাক্কির ঠেলায় ফটোকপিওয়ালা দোকান বন্ধ করে পালাতে পারে। সবশেষে আমার এক আত্দীয়ের কাহিনী বলা যাক। তিনি ফোন করে বললেন, এবার মনে হচ্ছে বাড়ি যাওয়ার টিকিট পাব না। ভালোই হয়েছে কাজ একটা কমল। মিস্ত্রি খুঁজে পাওয়া বিরাট ঝামেলার কাজ। আমি বললাম, কী হয়েছে একটু বুঝিয়ে বলেন। আত্দীয় বললেন, কিছুদিন আগে আমার বাসায় চুরি হয়েছে জানালার গ্রিল কেটে। বউ তখন থেকেই বলছে মিস্ত্রি ডেকে কাটা গ্রিলটা মেরামত করার জন্য। আমি ওকে বোঝাচ্ছি আমরা যেহেতু বাসায় আছি, অতএব চোর আর আসবে না। তবে ঈদে যখন বাড়ি যাব তার আগে মিস্ত্রি ডেকে মেরামত করিয়ে নেব। এখন যেহেতু টিকিটের অভাবে বাড়ি যাওয়া হচ্ছে না, অতএব মিস্ত্রিও ডাকতে হচ্ছে না, মেরামতও করতে হচ্ছে না। কী শান্তি না?

 

সর্বশেষ খবর