সোমবার, ৩ আগস্ট, ২০১৫ ০০:০০ টা

অল্প বৃষ্টিতে বেশি খানাখন্দ

ইকবাল খন্দকার

অল্প বৃষ্টিতে বেশি খানাখন্দ

হঠাৎ করেই রাস্তায় আমার এক বড় ভাইয়ের সঙ্গে দেখা। তিনি আমার সঙ্গে হাত মেলাতে মেলাতে মেগা সাইজের একটা নিঃশ্বাস ফেললেন। সাহিত্যের ভাষায় যাকে বলা হয় দীর্ঘশ্বাস। অতঃপর মলিন মুখে তিনি বলে উঠলেন, ঢাকা শহরের রাস্তাঘাটে চলাফেরা করার উপায় নাই রে ছোটভাই। এই রাস্তাঘাটে চলাফেরা করা মানেই দাম্পত্য কলহ বাড়ানো। আমি অবাক হলাম, ঢাকা শহরের রাস্তাঘাট ভাঙাচুরা, এটা ঠিক আছে। এই রাস্তায় চলাফেরা করলে হাড়গোড় নড়ে যায়, এটাও ঠিক আছে। কিন্তু দাম্পত্য কলহ কেন বাড়বে, আমি ঠিক বুঝতে পারছি না। বড় ভাই বললেন, না বুঝলে কী আর করা। বুঝিয়েই বলি। আগে যখন বাসা থেকে বের হয়ে রিকশা দিয়ে কোথাও যেতাম, রাস্তার মাঝখানে তোর ভাবী ফোন করলে রিসিভ করতাম। রিকশায় বসে পা দোলাতাম আর কথা বলতাম। কিন্তু এখন রাস্তাঘাটের অবস্থা এতটাই খারাপ হয়ে গেছে যে, এখন রিকশায় উঠলে দুই হাত দিয়ে রিকশার দুই সাইডে শক্ত করে ধরে রাখতে হয়। কারণ কখন আবার ঝাঁকুনির চোটে পড়ে যাই। এই অবস্থায় তোর ভাবী ফোন করলেও রিসিভ করতে পারি না। এই যে রিসিভ করতে না পারা, তোর ভাবী এটা নিয়ে আমাকে সন্দেহ করতে শুরু করেছে। তার ধারণা, আমি অন্য কোনো মেয়ের সঙ্গে ডেটিংয়ে ব্যস্ত থাকি বলে তার ফোন রিসিভ করি না। এ নিয়ে দাম্পত্য কলহ এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে। যে কোনো সময় তোর ভাবী বাপের বাড়ি চলে যেতে পারে। নিতান্তই এখন রাস্তাঘাট ভাঙা বলে যেতে পারছে না। আমার এক প্রতিবেশী বলল, ঢাকা শহরের ভাঙা রাস্তাঘাটের কারণে আমাদের পারিবারিক ঐতিহ্য বিলুপ্ত হতে চলেছে। কী যে করি! কথাটা শুনে আমি প্রতিবেশীর দিকে মার্বেলের মতো চোখ করে তাকিয়ে থাকলাম। প্রতিবেশী বুঝলেন আমি তাজ্জব হয়েছি। তাই তিনি তার কথার ব্যাখ্যা করলেন, আসলে হয়েছে কী, আমরা পারিবারিকভাবে একটু জমিদার টাইপের। আমাদের ঐতিহ্য হচ্ছে আমরা কোথাও বসলে খুব পা দোলাই। সেই হিসেবে রিকশায় বসেও পা দোলাতাম। কিন্তু এখন রাস্তাঘাটের যে অবস্থা, তাতে রিকশায় বসে পা দোলাবো কী, চার হাত-পা দিয়ে রিকশা অাঁকড়ে ধরে বসে থাকলেও মনে হয় এই বুঝি ঝাঁকুনি খেয়ে পড়ে গেলাম। না না, ভয়টা যে এমনি এমনি ঢুকেছে তা কিন্তু না। কদিন আগে ঠিকই পড়ে গিয়েছিলাম। রাস্তায় পানি ছিল। পড়ার পর দুই ঢোক পানিও খেয়ে ফেলেছি। আচ্ছা, ঢাকার রাস্তার পানি এমন নোনতা কেন? আমি তার প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে গিয়ে বললাম, পারিবারিক ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে আগে আপনি রিকশায় বসে পা দোলাতেন। এখন ঝাঁকুনির চোটে পুরো বডি দোলে। অতএব ঐতিহ্য নিয়ে টেনশন করার কোনো কারণ নেই। ছোটবেলায় আমরা বইয়ে পড়েছি-'একবার না পারিলে দেখো শতবার।' যারা রাস্তা দেখভালের সঙ্গে জড়িত, তারা হয়তো বইয়ের সেই পড়া থেকে শিক্ষা নিয়েই রাস্তার যত্নআত্তি করছেন। নইলে দুই দিন পরপর রাস্তা নির্মাণ করতে হবে কেন? একবারে ভালো করে কাজটা সম্পাদন করে ফেললেই তো হয়। তবে এ ব্যাপারে আমার খালাতো ভাইয়ের প্রসঙ্গটি উল্লেখ করা যেতেই পারে। বাড়ির বাজার সদাই সবই সে করে। সপ্তাহের সাত দিনই সে বাজারে যায়। খালু তাকে বলে রোজ বাজারে না গিয়ে সপ্তাহের বাজার একবারে করে ফেলার জন্য। কিন্তু সে একবারে করবে না। তার এই আচরণের রহস্য এখনো অজানা। একদিনে পুরো সপ্তাহের বাজার করে ফেললে রহস্য বলে নাকি কিছু থাকত না। তারও একই যুক্তি এক কাজ শতবারে সম্পাদন করতে ক্ষতি কী? তবে আমরা যা বলতে চাই তা হলো- ঢাকা শহরের ক্ষেত্রে কিন্তু একটা বিশেষণ ব্যবহার করা হয়। তিলোত্তমা। তো যে শহর তিলোত্তমা, সেই শহরের রাস্তাঘাট আর সদরঘাটের মধ্যে যদি কোনো পার্থক্য না থাকে, তাহলে কিন্তু সমস্যা। হ্যাঁ, পার্থক্য এতটুকুই, সদরঘাটের পানিতে চলে স্টিমার, আর রাস্তাঘাটের পানিতে চলে রিকশা-বাস ইত্যাদি। কিন্তু এই পার্থক্য দিয়ে তো আর 'তিলোত্তমা' খেতাব রক্ষা পাবে না! যদি খেতাবটাকে রক্ষা করতে চান, তাহলে রাস্তাঘাটের দিকে একটু সুনজর দিন।

 

সর্বশেষ খবর