সোমবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

চাঁপাবাজি চলবে...

তানভীর আহমেদ

  চাঁপাবাজি চলবে...

কর্মপরিকল্পনা বলে একটা আজব জিনিস আছে। সফল মানুষদের গল্প পড়লে বিষয়টার খোঁজ পাওয়া যায়। বাস্তবে জিনিসটা খুবই বায়বীয়। এটা করব, সেটা করব বলে বলে আশপাশের মানুষদের কান ঝালাপালা করে দিই। অবশেষে চাপা ব্যথা করলে থামতে হয়। এভাবে দিন যায়, মাস যায়, বছর যায়। তারপর টের পাওয়া যায় কোনো কিছুই করা হয়নি। প্রতি বছরের শুরুতে এই চাঁপাবাজির সিজন আসে। বছর শেষ হলে প্রত্যেকেই টের পাই— চাঁপা একটু বেশিই পিটিয়ে ফেলেছিলাম। সামনের বছর সত্যি সত্যি এটা করব, সেটা করব।

চাঁপা পেটানোর দিক থেকে আমরা কখনোই পিছিয়ে ছিলাম না। পিছিয়ে থাকবই বা কেন। প্রচলিত চাঁপাগুলোর মধ্যে জনপ্রিয় হচ্ছে, সামনের বছর ভালো হয়ে যাব, ঠিকমতো পড়াশোনা করব, চাকরি করব, ব্যাংকে বহু টাকা জমাব... আর কিছু না হোক, ব্যাচেলররা বিয়ে করে ফেলব। সেটাও যদি কপালে না থাকে, প্রেমটা করবই। হায়! এগুলোও বছরের পর বছর ধরে চাঁপাবাজির কাতারেই পড়ে থাকে। এটা দুঃখজনক না হাস্যকর বোঝা মুশকিল। কথা দিয়ে কথা না রাখতে পারা দুঃখজনকই হওয়ার কথা। কবিতা পড়ে ইতিমধ্যে আমরা জেনেছি তেত্রিশ বছর পর্যন্ত কেউই কথা রাখে না। সেখানে দুয়েকটা বছর তেমন কিছু না। চাঁপা যা মেরে ফেলেছি সেটা নিয়ে দুঃখ না করলেও চলবে। এটাকে বলে নিজে থেকে নিজেকে প্রেরণা জোগানো। এ বছর চাঁপা মেরেছি সামনের বছরও মারব। আশা হারানো ঠিক হবে না। লেখা শেষ করার আগে তেমনই এক অনুপ্রেরণামূলক চাঁপাবাজের গল্প।

একবার এক সম্মেলনে, একজন বাংলাদেশি চাঁপাবাজ এবং একজন ভিনদেশি চাঁপাবাজ প্রাচীনকালের প্রযুক্তি সম্পর্কে কথা বলছিলেন। তারা তাদের নিজ নিজ দেশের অবস্থান আলোচনায় নিয়ে আসেন। এতে দুজনের মধ্যেই কথা কাটাকাটি চলছে। ফট করে বাংলাদেশি চাঁপাবাজ বলে বসলেন, আমরা প্রাচীনকালে প্রযুক্তিতে অনেক অগ্রসর ছিলাম। এতে ভিনদেশি চাঁপাবাজ দ্বিমত করলেন। তাই দুজনেই তাদের নিজ নিজ যুক্তি শক্তের উদ্দেশ্যে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন সংগ্রহের জন্য তাদের দেশে ফিরে গেলেন। কিছুদিন পর ভিনদেশি চাঁপাবাজটি খনন শেষে একটি পুরনো পেঁচানো তার উদ্ধার করলেন।

তারপর তিনি সম্মেলনে ফিরে এসে বর্ণনা করলেন— আমাদের দেশের সভ্যতা প্রাচীনকালেও অনেক অগ্রসর ছিল। এই তারটি প্রমাণ করে যে সেই সময়ে আমাদের দেশের মানুষ টেলিফোন ব্যবহার করতেন।

এরপর বাংলাদেশি চাঁপাবাজ দেশে ফিরে খনন কাজ শুরু করলেন। অনেক খোঁড়াখুঁড়ির পরেও লোকটি কিছুই উদ্ধার করতে পারলেন না। সংবাদ সম্মেলনে ফিরে চাঁপাবাজ বর্ণনা করলেন, বাংলাদেশের সভ্যতা প্রাচীনকালে বর্তমানের চেয়েও বেশি উন্নত ছিল। তখন গ্রামে গ্রামে সবাই মোবাইল ফোন ব্যবহার করতেন। তাই মাটির নিচে খনন শেষে আমি কোনো টেলিফোনের তার পাইনি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর