সোমবার, ৭ মার্চ, ২০১৬ ০০:০০ টা

জাহান্নামের আগুনে বসিয়া হাসি পুষ্পের হাসি

রণক ইকরাম

জাহান্নামের আগুনে বসিয়া হাসি পুষ্পের হাসি

এশিয়া কাপ ফাইনালের টিকিট যেন সোনার হরিণ নয়, ডায়মন্ডের হরিণ। এই লেখা যখন পাঠকের হাতে ততক্ষণে এশিয়া কাপ ফাইনালের আগুন নিভে যাওয়ার কথা। চারদিকের এত উত্তাপ নিয়ে আমার এক বন্ধুর সঙ্গে কথা হচ্ছিল। মজার ব্যাপার হচ্ছে আমার সেই বন্ধুটির নামও আগুন। আগুনের উত্তাপের প্রসঙ্গ আসতেই ক্ষেপে উঠল সে।

: আমি যদি আগুনের আবিষ্কর্তাকে খুঁজে পেতাম তাহলে তাকে আগুনে পুড়িয়ে মারতাম।

ওর কথা শুনে আমি একটু টাশকি খেলাম। কাহিনী কী? তখন আমার বন্ধুটিও দ্বিগুণ উৎসাহ নিয়ে বলতে শুরু করল—

: অর্থের মতো আগুনও অনেক অনর্থের মূল। আর বাস্তবতাই তো বলে যে আগুন পোড়ানোর মূল। আগুন আবিষ্কার না হলে আমরা খাওয়া-দাওয়ায় অত বিলাসী হতে পারতাম না। ডিকশনারিতে ‘ভোজনবিলাস’ বলে কোনো শব্দ থাকত না। ফলে দ্রব্যমূল্যের ওপর কোনো চাপ থাকত না, বাজারেও আগুন লাগত না। আগুন না থাকলে খেলার উত্তাপ বলে কিছুই থাকত না।

স্পষ্ট টের পাচ্ছি বন্ধু আমার লাইন ছেড়ে বেলাইনে চলে যাচ্ছে। সবশেষে আবারও আগুনের আবিষ্কর্তাকে পুড়িয়ে মারার ইচ্ছা ব্যক্ত করল। আমার খুব জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছা হচ্ছিল, আগুন আবিষ্কার না হলে আগুনে পুড়িয়ে মারতি কী করে?

 

তবে আগুন কিন্তু কখনো কখনো সুনামও বয়ে আনতে পারে। জীবনের শেষ লগ্নে এক দুর্ধর্ষ ডাকাত তার ছেলেদের বলে গেল-

: বাবারা আমি তো সারা জীবন খারাপ কাজই করলাম, তাই আমি মরার পর তোরা এমন কাজ করবি যাতে আমার সুনাম হয়! আমার আত্মা শান্তি পায়।

কথাগুলো শেষ হতেই সেই ডাকাত মারা গেল। এখন ডাকাতের ছেলেরা ভাবতে শুরু করল, কীভাবে বাবার সুনাম করা যায়। ওরা ডাকাতি করা ছাড়া আর কিছুই তো শেখেনি। তাই তারা সিদ্ধান্ত নিল বাবার মতো তারাও ডাকাতি করবে তবে নতুন স্টাইলে! তারা এবার ডাকাতি করার পাশাপাশি ডাকাতি শেষে ডাকাতি করা ঘরে আগুন লাগিয়ে পালিয়ে যেত। লোকজন বলতে শুরু করল, ওদের বাপটাই ভালো ছিল, ডাকাতি করে চলে যেত কিন্তু কারও ঘরে আগুন দিত না।

কবি নজরুল বলেছিলেন-

‘আমি জাহান্নামের আগুনে বসিয়া হাসি পুষ্পের হাসি...।’

কবি পুষ্পের হাসি হাসতে পারলেও আমরা পারছি না। সেই হাবিয়ার প্রভাব থেকে বাঙালিরা আজও মুক্ত হতে পারেনি। এখনো সামান্য কারণেই স্লোগান ওঠে— ‘অমুক ভাইয়ের কিছু হলে জ্বলবে আগুন ঘরে ঘরে।’ তবে পিছনের কথা হলো ঘরে ঘরে আগুন এখনো জ্বলছে। যেমন প্রায় প্রতিদিন কী এক অদৃশ্য ভূত পেট্রল  ঢালছে দ্রব্যমূল্যের বাজারে। ভাব দেখে মনে হয় দ্রব্যমূল্যের পাগলা ঘোড়ার কেবল লাগামই ছিঁড়েনি বরং কেউ এর পশ্চােদশে কেরোসিন ঢেলে দিয়েছে। যে কারণে পাগলা ঘোড়া কেবল ছুটছে তো ছুটছেই! এই ঘোড়ার লাগাম টেনে ধরতে পারে এমন রাজকুমার আমরা পাইনি। তাই দুঃখ বলবৎ আছে। গায়করা নিরন্তর গেয়ে চলছে— ‘ধিকি ধিকি আগুন জ্বলে। বুকে নদী বইয়া চলে।’

হায় হৃদয়ে আগুন, বাজারে আগুন; তাই পেটেও আগুন।

সর্বশেষ খবর