সোমবার, ৬ জুন, ২০১৬ ০০:০০ টা

অব্যর্থ প্রেম প্রস্তাবের পদ্ধতি আবিষ্কার

ক্ষতি নয় ‘লাভ স্টোরি’

কাসাফাদ্দৌজা নোমান

অব্যর্থ প্রেম প্রস্তাবের পদ্ধতি আবিষ্কার

আমাদের বন্ধু শিহাব সবার সামনে বলেছিল, একদম তাক লাগিয়ে দেব।

সত্যি সত্যি পরের সপ্তাহে সে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল। নিজের রুমে, বইয়ের তাক। তবে  শেষ পর্যন্ত আসল তাকটা লাগালেন পটকা ভাই। একদিন তিনি ঘোষণা দিলেন ‘আমি অব্যর্থ প্রেমের প্রস্তাব পদ্ধতি আবিষ্কার করে ফেলেছি।’

বললাম, আরিব্বাহ! বলুন বলুন।

জবাবে পটকা ভাই হাসলেন, নারে এখনই না। একটা সংবাদ সম্মেলন ডাকি। তারপর ঘোষণা করি। নইলে তো তাক লাগানোটা ঠিক হলো না।

পটকা ভাইয়ের এমন আবিষ্কারের পর তাকে আর কোনোভাবেই অবহেলা করা গেল না। একবিংশ শতাব্দীর সেরা আবিষ্কার এটি। ভেবেই পুলকিত হয়ে যাচ্ছি।

সংবাদ সম্মেলন বসেছে।

প্রশ্নকারী : এমন আবিষ্কারের কথা মাথায় কীভাবে এলো?

পটকা ভাই : এই পর্যন্ত সতেরো জনকে ভালোবাসার প্রস্তাব দিয়েছি। একজনও রাজি হয়নি। শেষবার আত্মহত্যা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম।

প্রশ্নকারী : তারপর?

পটকা ভাই : ভাবলাম আত্মহত্যা করলেই তো সব শেষ। তারচেয়ে বরং আমি দেখি কী হয়। শুরু করলাম গবেষণা।

প্রশ্নকারী : গবেষণা কাজ কোথায় করেছেন?

পটকা ভাই : এই পৃথিবীর বুকে। কয়েক হাজার ব্যর্থ প্রেমিক এবং সফল রিফিউজকারী প্রেমিকার ওপর গবেষণা করা হয়েছে। দীর্ঘ এক বছর গবেষণা শেষে আমি একটা ফলাফলে এসে পৌঁছেছি। আমার ধারণা, এই পদ্ধতি প্রকাশিত হলে পৃথিবীর কোনো ছেলে প্রেমের প্রস্তাব পাঠিয়ে ব্যর্থ হবে না।

প্রশ্নকারী : কী সেই পদ্ধতি?

পটকা ভাই : পদ্ধতিটা এখনই বলা যাবে না। একশ নারীর ওপর এপ্লাই করে এর কার্যকারিতা নির্ণয় করা হবে। তারপর পদ্ধতিটা সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত করা হবে।

একদিনেই পটকা ভাই রীতিমতো সুপারস্টার হয়ে গেলেন। হাজার হাজার ছেলে ফলমূল, মিষ্টি নিয়ে প্রতিদিন দেখা করতে আসে। তিনি ভক্তদের পাশাপাশি টিভি, রেডিওতে যান টকশোতে। ইতিমধ্যে মেয়েদের কাছেও বিশেষ জনপ্রিয়তা পেয়ে গেছেন।

পটকা ভাইয়ের সঙ্গে দেখা হলো রাস্তায়।

: ভাই আপনার এক্সপেরিমেন্টের কী অবস্থা?

: সমস্যা! এক্সপেরিমেন্ট করতে চেয়েছি একশ মেয়ের ওপর। এখন মেয়ের সংখ্যা তো ২০০ ছাড়িয়ে গেছে।

: আমাকে একশ দিয়ে দেন আর পদ্ধতিটা শিখিয়ে দেন। আমি আপনার এক্সপেরিমেন্টে হেল্প করব।

কথা শুনে পটকা ভাই আমাকে দূর দূর করে তাড়িয়ে দিলেন। সেই যে গেল এর পরের চার মাস পটকা ভাইয়ের আর কোনো দেখা নেই। ফোন দিলে কল ওয়েটিংয়ে পাওয়া যায়। মেসেজ দিলে কোনো উত্তর আসে না। ফেসবুকে মেসেজ পাঠালে সিন হয় তবুও রিপ্লাই আসে না। বাড়ি গেলে পাওয়া যায় না। মোটামুটি পটকা ভাই নিখোঁজ। হলো কি লোকটার?

এক সময় তার কথা প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম। আমার রিমি, ঝিমি কলমিদের নিয়ে যে আশায় বুক বেঁধেছিলাম সে আশাও ত্যাগ করেছি। কিন্তু হঠাৎ রাস্তায় পটকা ভাইয়ের সঙ্গে দেখা। চেনাই যাচ্ছে না। ওজন কমে অর্ধেক হয়ে গেছে। মুখ ভাঙা। মাথার চুল এলোমেলো। কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘ভাই আপনার কী হয়েছে।’

কোনো উত্তর দিল না। আবার জিজ্ঞাসা করলাম। তাও উত্তর দিল না।

: ভাই সত্যিই করে একটা কথা বলবেন!

: বল।

: আপনি নেশাটেশা শুরু করেছেন?

: থাবড়ায়া কান লাল করে ফেলব। মানুষের ধ্বংস হতে নেশা করা লাগে নাকি?

: মানে? আপনার সেই এক্সপেরিমেন্টে কিছু হয়েছে? এক্সপেরিমেন্ট সফল।

: হ্যাঁ সফল। পদ্ধতিটা কাজ করেছে।

: ওয়াও, সম্ভাবনার দ্বার খুলে গেল। কিন্তু আপনার মুখে হাসি নেই কেন?

: মাত্র তিনজনের ওপর এক্সপেরিমেন্ট করেছি। আরও ১৯৭ জন বাকি!

বাকি গল্পটা অত্যন্ত করুণ। পটকা ভাই দুইশ নারীর মধ্যে প্রাথমিকভাবে তিনজনের ওপর এক্সপেরিমেন্টটা চালিয়েছেন। পাঁচজনই রাজি হয়ে গেছেন এবং পাঁচজনের সঙ্গেই বাধ্যতামূলক প্রেম করা লাগছে।

কিন্তু কেন?

শেফালীর ওপর যখন এই পদ্ধতি এপ্লাই করা হলো শেফালী রাজি হয়ে প্রথম কথা বলেছিল, কখনো কোনো মেয়ের দিকে তাকাবা না। প্রেম তো দূরের কথা। তাকালেই চোখ গেলে দেব।

তারপর রূপালীর ওপর যখন এই পদ্ধতি এপ্লাই করা হলো সে প্রেমে রাজি হয়ে বলল, দ্যাখো পটকা, আমার আগের বয়ফ্রেন্ড অন্য মেয়ের দিকে নজর দিয়েছিল। মাথা ফাটিয়ে দিয়েছি। আমি চাই না তুমিও এমন কিছু কর।

সর্বশেষ পটকা ভাই পদ্ধতিটা এপ্লাই করেছে সীমা নামের এক মেয়ের ওপর। সীমা শান্ত স্বভাবের। তবে প্রেমে রাজি হয়েই সে পটকা ভাইকে আদেশ দিয়েছে ‘আজ থেকে কোনো  মেয়ের সঙ্গে কোনো রকম কথা বলা যাবে না। আর এসব অব্যর্থ প্রেমের প্রস্তাব-টস্তাব বাদ দাও। বুঝি তো এসব কেন কর!

সব শুনে জিজ্ঞাসা করলাম, এখন কী করবেন?

: কী আর করব। আমাকে বাঁচা প্লিজ। এদিকে ১৯৭ জন প্রতিদিন খবর নেয় তাদের ওপর কবে এক্সপেরিমেন্ট করা হবে। আমি কই যাব? পটকা ভাই কই যাবেন জানি না। তবে আজ আমি কোথাও যাব না বলে দ্রুত স্থান ত্যাগ করে কেটে পড়লাম। লাগবে না আমার অব্যর্থ প্রেমের প্রস্তাব পদ্ধতি, ব্যর্থতা না থাকলে ভালোবাসা মজবুত হয় নাকি?

সর্বশেষ খবর