যেহেতু সবাই সারাদিন মুখ নিচু করে মোবাইলে গেম খেলে আর এতে ঘাড়ের উপর বাড়তি চাপ পড়ে। অতএব আপনি নিশ্চিত থাকেন আগামী কয়েক বছরের মধ্যে সবার ঘাড়ের রগেই সমস্যা দেখা দিবে...
আমাদের পরিচিত এক বড় ভাই ম্যালা টাকা-পয়সার মালিক। প্রতিদিনই হাজার হাজার টাকা আয় করেন তিনি। পেশায় ডাক্তার। নাক কান গলা বিশেষজ্ঞ। আমরা কয়েক বন্ধু মিলে একটু সময় পেলেই তার চেম্বারের পাশের রুমে গিয়ে আড্ডা দিই। ভাই রোগী দেখা শেষ করে আমাদের সঙ্গে যুক্ত হন। পরশুদিন যখন আড্ডা হচ্ছিল, তখন আমার এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু বলে উঠল, আমারও ডাক্তার হওয়ার খুব ইচ্ছা। ভাবছি ছোটখাটো একটা কোর্স করে রেডিমেড ডাক্তার হয়ে যাব। তবে ভাই, আমি কিন্তু আপনার মতো নাক কান গলার ডাক্তার হব না। আমি ডাক্তার হব ঘাড়ের। ভাই হাসতে হাসতে বললেন, আমার জানামতে আলাদা করে ঘাড়ের ডাক্তার হওয়া যায় কিনা জানা নেই। তা তুই ঘাড়ের ডাক্তার কেন হতে চাচ্ছিস শুনি! বন্ধু বলল, ঘাড়ের ডাক্তার হওয়া এখন সময়ের চাহিদা। যেহেতু সবাই সারাদিন মুখ নিচু করে মোবাইলে গেম খেলে আর এতে ঘাড়ের উপর বাড়তি চাপ পড়ে। অতএব আপনি নিশ্চিত থাকেন আগামী কয়েক বছরের মধ্যে সবার ঘাড়ের রগেই সমস্যা দেখা দিবে। ততদিনে আমি যদি ঘাড় বিশেষজ্ঞ হয়ে যেতে পারি, টাকায় লালে লাল হয়ে যাব না! বড় ভাই বললেন, কথা সত্য। তবে ঘাড়ের ডাক্তার হলে তোকে ঘাড় বিশেষজ্ঞ বলা হবে নাকি ‘ঘাউড়া’ বলা হবে, সেটাই ভাবছি। আমার এক দুলাভাই মোবাইল গেমসের ঘোরবিরোধী। তাকে ভুল করেও কোনোদিন গেম খেলতে দেখা যায়নি। একদিন তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, সবাই তো কম বেশি গেম খেলে। আপনি গেম না খেলে কীভাবে পারেন? দুলাভাই ডানে বামে তাকিয়ে দেখে নিলেন কেউ আছে কিনা। যখন দেখলেন কেউ নেই, তখন আমার দিকে ঝুঁকে বসে বললেন, আমি যে ইচ্ছা করেই গেমসের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছি, তা কিন্তু না। আমি বাধ্য হয়েছি অবস্থান নিতে। আমি বললাম, ব্যাপারটা একটু খুলে বললে ভালো হয়। দুলাভাই মাথার ক্যাপ খুলে বললেন, দেখতেই পাচ্ছ আমার চান্দির ঠিক উপরের জায়গাটায় চুল নেই। আমার যে এই সংক্ষিপ্ত টাক আছে, এটা কিন্তু এমনিতে বোঝা যায় না। বোঝা যায় যখন মাথা নিচু করি, তখন। মোবাইলে গেম খেলার সময় মাথা নিচু করতে হয়, মানুষ আমার ফাঁকা চান্দি দেখে ফেলে। অতএব গেম খেলা যাবজ্জীবনের জন্য বন্ধ। মানইজ্জতের চেয়ে তো আর গেমটা বড় না, ঠিক কিনা? আমি আমার এক ছোটভাইকে গেম খেলার অপকারিতা সম্পর্কে দীর্ঘক্ষণ ধরে বোঝালাম। আমার বোঝানো শেষ হলে সে বলল, আপনার কথা মানলাম। তবে সব জায়গায় মানতে পারব না। বিশেষ করে বাসে ওঠার পর আমাকে গেম খেলতেই হবে। আমি বললাম, বাসে উঠে কেন গেম খেলতেই হবে একটু জানতে পারি? ছোটভাই বলল, কন্ডাক্টরকে দেখেও না দেখার ভান করার জন্য গেমসের চেয়ে বড় অজুহাত আর কিছু নেই। আরেক ছোটভাই বলল, বাসে গেম খেলার বড় একটা উপকার আছে। সেটা হচ্ছে, আগে পকেটে মোবাইল নিয়ে বাসে উঠতে গেলে ধাক্কাধাক্কির সময় মোবাইলটা চুরি হয়ে যেত। এখন গেম খেলার কারণে মোবাইল হাতে থাকে বলে চুরি হয় না। এবার পাশ থেকে আরেকজন বলে উঠল, মোবাইল হাতে থাকলে চুরি হয় না এটা ঠিক আছে। তবে ছিনতাই হয়। জানালার পাশে বসে মনোযোগ দিয়ে গেম খেলা। অতঃপর হায় হায়! কারণ কী? জানালা দিয়ে ছোঁ মেরে মোবাইল নিয়ে পগারপাড়।
এক ভাবীকে জিজ্ঞাসা করলাম, আপনার বাচ্চা যে সারাদিন গেম খেলা নিয়ে ব্যস্ত থাকে, আপনি কিছু বলেন না? ভাবী বললেন, কীভাবে বলব? আমি গেম খেলা অবস্থায় কথা বলতে পারি না। মনোযোগ নষ্ট হয়। আমার এক কঞ্জুস চাচা আছে। বাজার থেকে জীবনেও ভালো কোনো মাছ কিনবে না। ওইদিন চাচী তাকে বারবার বলে দিলেন বড় দেখে মাছ কিনে আনার জন্য। কারণ নাতি-নাতনিরা আসবে। কিন্তু চাচা নিয়ে এলেন কাচকি আর মলা মাছ। চাচী এর কারণ জিজ্ঞাসা করতেই বললেন, তোমার নাতি-নাতনিরা সারাদিন মোবাইলে গেম খেলে চোখের বারোটা বাজিয়ে ফেলেছে। মলা মাছ খেলে যদি চোখের পাওয়ার একটু বাড়ে আরকি।