সোমবার, ১ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা

ব্যাচেলরজনিত প্রবলেম

ইকবাল খন্দকার

ব্যাচেলরজনিত প্রবলেম

কার্টুন : কাওছার মাহমুদ আইডিয়া ও ডায়ালগ : তানভীর আহমেদ

সেসব সিনেমায় মা-বাবা তাদের ছোট ছোট ছেলেমেয়েকে অবুঝ বয়সেই তাদের বন্ধু-বান্ধবের ছেলেমেয়ের কাছে বিয়ে দিয়ে দিত। আহারে, আজকে যদি সেই সিস্টেম চালু থাকত, তাহলে খোঁজ নিলে দেখা যেত ছোটবেলায় আমারও কারও না কারও সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল

 

আমার এক ছোট ভাই কিছুদিন আগে অনার্স মাস্টার্স করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হয়েছে। কয়েকদিনের মাথায় ভালো একটা চাকরিও পেয়ে গেছে। সপ্তাহখানেক আগে মতিঝিল থেকে ফেরার পথে তার অফিসে গেলাম। আমি ভেবেছিলাম আমাকে দেখে সে খুবই আনন্দিত হবে, উচ্ছ্বসিত হবে। কিন্তু না, তার মধ্যে আনন্দ-উচ্ছ্বাসের কোনো লক্ষণই দেখা গেল না। আমি বললাম, কীরে, মন খারাপ নাকি? চাকরি পছন্দ হয়নি? ছোট ভাই বলল, না, চাকরি ঠিক আছে। তবে হয়েছে কী ভাই, আজকাল নব্বই দশকের বাংলা সিনেমাগুলোর কথা খুব মনে পড়ছে। আহারে, আমাদের জীবনটা যদি সেই সময়ের বাংলা সিনেমার মতো হতো! আমি বললাম, তোর এসব আধ্যাত্মিক কথাবার্তা আমার মাথায় ঢুকছে না। কী বলতে চাস পরিষ্কার করে বল। ছোট ভাই বলল, আপনি তো জানেন ভাই ব্যাচেলরদের বাড়ি ভাড়া পাওয়া কত যন্ত্রণার। গত প্রায় দুই মাস ধরে চাচার বাসায় থাকছি। কোথাও বাড়ি ভাড়া পাচ্ছি না। আমি বললাম, তা বুঝলাম। কিন্তু নব্বই দশকের সিনেমার কথা যে বললি, এটা কী? ছোট ভাই বলল, নব্বই দশকের বেশিরভাগ সিনেমায়ই দেখা যেত নায়ক-নায়িকা বড় হয়ে জানতে পারছে ছোটবেলায় তাদের অমুক তমুকের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল। অর্থাৎ সেসব সিনেমায় মা-বাবা তাদের ছোট ছোট ছেলেমেয়েকে অবুঝ বয়সেই তাদের বন্ধু-বান্ধবের ছেলেমেয়ের কাছে বিয়ে দিয়ে দিত। আহারে, আজকে যদি সেই সিস্টেম চালু থাকত, তাহলে খোঁজ নিলে দেখা যেত ছোটবেলায় আমারও কারও না কারও সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল। ব্যাস, ব্যাচেলর অপবাদটা থাকত না। বউকে নিয়ে আসতাম আর হুট করে একটা বাসায় উঠে পড়তাম। আমার এক বন্ধু সাংঘাতিকরকম অস্থির প্রকৃতির। একবছরও এক পেশায় থাকে না। একটার পর একটা পেশা বদলায়। পরশুদিন ফোন করে বলল, বর্তমান চাকরিটা ভালো লাগছে না। ভাবছি মগবাজার এলাকায় একটা বাসা নেব। নতুন অফিস খুলব। নতুন অফিস, নতুন কাজ। আমি বললাম, সেই কাজটা কী আগে শুনি। বন্ধু বলল, মগবাজার এলাকায় কাজী অফিস বেশি। যেহেতু আমি এই এলাকায় অফিস ভাড়া নিতে চাচ্ছি, অবএব বুঝতে হবে আমি কাজী অফিস খুলতে যাচ্ছি। এখন ব্যাচেলরদের কাছে বাসা ভাড়া দেওয়া হচ্ছে না। আশা করছি কাজীগিরির পেশাটা এখন ভালোই জমজমাট যাবে। সাব-পেশা হিসেবে ঘটকালিটাও অবশ্য করব। দোয়া করিস। আমার এক চাচা একটু বোকা টাইপের। গত মাসে তার একটা নাতি হয়েছে। চাচাকে বললাম, নাতিকে বাসায় আনেন। অনুষ্ঠান করেন। চাচা বললেন, অনুষ্ঠান করতে তো সমস্যা নাই বাপু। কিন্তু নাতিরে বাসায় আনাডাই তো সমস্যা। আমি বললাম, কী সমস্যা? চাচা বললেন, বাড়িওয়ালায় যদি ঝামেলা করে! সে তো আবার ব্যাচেলর ঢুকতে দেয় না। আমি বললাম, আপনার নাতির ক্ষেত্রে ব্যাচেলরগত কোনো সমস্যা তো নেই। কারণ তার বয়স মাত্র এক মাস। বোকাসোকা চাচা এবার বললেন, সমস্যা নাই বলতেছ ক্যান! আমার নাতিরে কি বিয়া করানি হইছে? তাইলে সে ব্যাচেলার না? পাঠক, বুঝতে হবে, ব্যাচেলর বিষয়টা নিয়ে মানুষ কোন লেভেলের আতঙ্কে আছে। আর আতঙ্কে থাকার একটাই কারণ, সেটা হচ্ছে বাড়াবাড়ি। কিছু কিছু ব্যাচেলর বিপজ্জনক কাজের সঙ্গে জড়িত বলে যেসব বাড়িওয়ালা ব্যাচেলরদের কাছে বাড়ি ভাড়া দেবেন না বলে একদম কসম কেটে বসে আছেন, তাদের উচিত একটু নমনীয় হওয়া। একটু যাচাই-বাছাই করুন। যারা বিপজ্জনক তাদের ব্যাপারে সতর্ক হোন, ভালোদের কাছে ভাড়া দিন। ব্যাস। এই কথাগুলো সেদিন আমার পরিচিত এক বাড়িওয়ালাকে বোঝাচ্ছিলাম। বাড়িওয়ালা কিছুক্ষণ ঝিম মেরে থেকে বললেন, দামি কথা বলছেন। কিন্তু আমি ব্যাচেলরদের কাছে বাড়ি ভাড়া দেব না। আমি কারণ জানতে চাইলাম। বাড়িওয়ালা বললেন, কারণ একটাই, যারা বিবাহিত, তারা প্রায় আমার সমবয়সী। তারা আমারে ‘ভাই’ বইলা ডাকে। নিজেরে ইয়াং ইয়াং লাগে। আর ব্যাচেলররা ডাকে ‘আংকেল’ বইলা। নিজেকে বুইড়া বুইড়া লাগে। ব্যাচেলরদের কাছে বাসা ভাড়া দিয়া নিজেরে বুইড়া বানাইতে চাই না। ঠিক আছে না?

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর