জনপ্রিয় অ্যাডভেঞ্চার শো ‘ম্যান ভার্সেস ওয়াইল্ড’ খ্যাত বেয়ার গ্রিলস একজন দুর্ধর্ষ অভিযাত্রী। পৃথিবীর সব কঠিন কঠিন স্থানে তিনি একা প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই করে টিকে থেকেছেন। সেই বেয়ার গ্রিলস যদি বাংলাদেশে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতেন তবে কেমন হতো? জানাচ্ছেন— রাফিউজ্জামান সিফাত
পরীক্ষার পূর্ব প্রস্তুতি—
পরীক্ষার আগের রাতে বেয়ার বই-খাতা নিয়ে টেবিলে বসত। পড়ার ফাঁকে মাত্র ২ মিনিটের জন্য ফেসবুক নোটিফিকেশন চেক করতে গেলে তার বন্ধু করিম তাকে মেসেজ দিত—
: বেয়ার, কী কী পড়লি?
: কিচ্ছু না, দোস্ত। যা পড়েছি সব ভুলে যাচ্ছি। খুব ভয় করছে।
: শুনলাম, কুদ্দুসের নাকি সব পড়া শেষ। তৃতীয়বারের মতো রিভিশন দিচ্ছে। আমাদের কী হবেরে?
: জানি না। আমার কলিজা শুকিয়ে যাচ্ছে টেনশনে।
এমন সময় এঞ্জেল সুকন্যা, বেয়ারকে ফেসবুকে খোঁচা দেবে। পড়ার কথা ভুলে বেয়ার তার সঙ্গে কথা বলায় ব্যস্ত হয়ে যাবে। দুই মিনিটের জায়গায় কখন যেন চার ঘণ্টা ফেসবুকে চলে যাবে টেরই পাবে না। রাতে ঘুমানোর আগে ফেসবুকে একটা স্ট্যাটাস দেবে, ‘ইশ, আর একটা দিন বেশি সময় পেলে পরীক্ষায় ফাটিয়ে দিতে পারতাম। আগামীকাল আমার এক্সাম, ফ্রেন্ডস প্লিজ প্লিজ প্রে ফর মি।’
পরীক্ষাকালীন সময়—
পরীক্ষার দিন সকালে এলার্ম বেজে চলবে কিন্তু বেয়ারের ঘুম ভাঙবে না। শেষমেশ বেয়ারের মা তাকে টেনে তুলবে। অন্যান্য দিন সকালে বেয়ার মুরগির ডিম খেলেও পরীক্ষার দিন বেয়ারের ডিম খাওয়া নিষেধ। সকালে ডিম খেলে পরীক্ষায় আন্ডা পাওয়ার ভয়। পরীক্ষায় যাওয়ার আগে দোয়া নিয়ে এডমিট কার্ড আর জ্যামিতি বক্সে কলম পেন্সিল রাবার সাজিয়ে রওনা দেবে। রাস্তায় বিশাল যানজট। উপায় না দেখে বেয়ার রিকশা থেকে নেমে হেঁটে পরীক্ষার হলের দিকে রওনা দেবে। দশটায় পরীক্ষা শুরু, বেয়ার হেঁটে ঘেমে একাকার হয়ে দশটা বিশে পরীক্ষার হলে প্রবেশ করবে।
রেজাল্টকালীন সময়—
বেয়ারের পরীক্ষা তেমন ভালো হয়নি। বাসা থেকে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে এ-প্লাস না পেলে তাকে নাকি রিকশার গ্যারেজে কাজে লাগিয়ে দেবে। বেয়ার মনে মনে ঠিক করে রেখেছে, ফেল করলে সে বাসা থেকে পালাবে। দুপুরে রেজাল্ট পাবলিশ হলে দেখা যাবে— বেয়ার কোনোরকমে টেনেটুনে পাস করেছে। ফেসবুকে তার সব বন্ধু পোস্ট দিচ্ছে এ-প্লাস পেয়েছে তারা। পাশের বাসার মেয়েটি মিষ্টি দিয়ে যাবে। সে গোল্ডেন এ-প্লাস পেয়েছে। বেয়ারের বাবা ভয়ঙ্কর রাগ করে ছেলেকে আচ্ছামতো বকা দেবে। বেয়ার মনের দুঃখে স্ট্যাটাস দেবে, ‘জীবনে এ প্লাস পাওয়াই কি সব? ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান কি এ-প্লাস পেয়েছিল? ফুটবলার মেসি কি পেয়েছিল এ-প্লাস? আমি বিশ্বাস করি, এ-প্লাস কখনো একজন মানুষকে বিচার করতে পারে না। সুশিক্ষায় শিক্ষিত হতে পারাই শিক্ষার আসল উদ্দেশ্য।’
বেয়ারের সেই স্ট্যাটাসে সাড়ে আটশ লাইক পড়বে। কমেন্ট পড়বে বত্রিশটা। শেয়ার হবে সাতষট্টি। এর আগে বেয়ার এত লাইক কমেন্ট পায়নি কোনো স্ট্যাটাসে। বেয়ার যেন নিজের জীবনের লক্ষ্য খুঁজে পাবে। সেদিন থেকেই বেয়ার গ্রিলস হয়ে উঠবে একজন আপকামিং ফেসবুক সেলিব্রেটি।