আম্মার সঙ্গে বিয়ের দাওয়াত খেতে কম যাওয়া হয়। হয় দেখা যায় আম্মা ব্যস্ত অথবা আমি
ব্যস্ত। কিন্তু যতবারই আম্মার সঙ্গে কোনো বিয়ের দাওয়াত খেতে গিয়েছি ততবারই অনেক
মজা হয়েছে। মনে রাখার মতো দিন ছিল প্রত্যেকটাই।তবে আজ যে ঘটনার কথা
বলব সেটা মোটেও মজার কোনো ঘটনা না।
মাস দুয়েক আগের এক রাত। আমি হাসপাতাল থেকে ডিউটি শেষ করে বাসায় ফিরে ফ্রেশ হয়ে আম্মার পাশে বসেছি। এটা আমার প্রতিদিনেরই রুটিন— বাসায় ফিরে আম্মার সঙ্গে কিছুক্ষণ গল্প করা। আম্মার সঙ্গে রাজ্যের সব বিষয় নিয়ে আলোচনা করি। কথা প্রসঙ্গে আম্মা হঠাৎ জানালেন পরের শুক্রবারই আম্মার ছোটবেলার এক বান্ধবীর মেয়ের বিয়ে। আমার ব্যস্ততা না থাকলে তিনি সেখানে যেতে চান। আমি হিসাব করে দেখলাম শুক্রবার আমার ডিউটি নেই। তত্ক্ষণাৎ জানিয়ে দিলাম আমি যাচ্ছি। আম্মা খুশি হলেন, আমিও খুশি হলাম। অনেকদিন পর আম্মার সঙ্গে বিয়ের দাওয়াত খেতে যাব।
শুক্রবার এলো। দুপুর ২টার দিকে বিয়ের অনুষ্ঠানে পৌঁছে গেলাম। আম্মার অনেক বান্ধবী এসেছেন বিয়েতে। আম্মার আমার সঙ্গে সবার পরিচয় করে
দিলেন। আমার ভালো লাগল। আম্মাকে তার বান্ধবীদের সঙ্গে গল্প করতে বসিয়ে আমি ভাবলাম বউ দেখে আসি। বিয়ে খেতে এসেছি, বউ দেখব না?
আমি ধীর পায়ে হেঁটে বউ দেখতে গেলাম। গিয়ে ধাক্কা খেলাম। মেয়েটি অতীব সুন্দরী। আজকাল বিয়েতে যেভাবে প্রচুর মেকআপ দেওয়া বউ দেখা যায় মেয়েটি মোটেও সেরকম না। খুব সাধারণ সাজগোজ করে মেয়েটি বসে আছে। আমি মুগ্ধ চোখে মেয়েটিকে দেখতে লাগলাম এবং মেয়ের বরকে হিংসা করতে লাগলাম। এমন অবস্থায় আম্মা ফোন দিলেন, ‘তুই কই? খেতে বসেছি। চলে আয়।’
আমি খেতে গেলাম। আম্মার সঙ্গে খাওয়ার গল্প করছিলাম, ‘রোস্টটা ভালো হয়েছে। রেজালাতে ঝাল কম হয়েছে। দই আরেকটু ঠান্ডা হতে পারতো...।’
আম্মা হঠাৎ আমাকে থামিয়ে দিলেন। তারপর বললেন, ‘একটা কথা জানিস?’
আমি বললাম, ‘কী?’
আম্মা গলা নামিয়ে জবাব দিলেন, ‘আজ যে মেয়েটার বিয়ে এর সঙ্গে তোর বিয়ে হলেও হতে পারতো। কনে পক্ষ খুব জোরাজুরি করেছে। কিন্তু আমি দেইনি। তুই মাত্র ডাক্তারি পাস করলি। এখন বিয়ে করলে হবে?’
আমার কথা শেষ হলো, আমার চারদিক হঠাৎ ঘোলাটে হয়ে এলো। মনে পড়ে গেল লাল শাড়ি পরে বউ সেজে থাকা মেয়েটার কথা। আহারে! সুন্দরী মেয়েটা!
আমি ওই পর্যন্ত খেয়েই উঠে গেলাম। এ পোলাও আমার গলা দিয়ে নামবে কী করে?
এরপর থেকে আমি আম্মার সঙ্গে কোনো বিয়েতে যাওয়ার আগে নিশ্চিত হয়ে নেই মেয়ের সঙ্গে আমার কিছু হওয়ার সম্ভাবনা কখনো ছিল কিনা! না খেতে পারলে গিয়ে কী লাভ?