সোমবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

চলছে ইলিশ ধামাকা

ইকবাল খন্দকার

চলছে ইলিশ ধামাকা

কার্টুন : কাওছার মাহমুদ আইডিয়া ও ডায়ালগ : তানভীর আহমেদ

আমার সঙ্গে আমার পাশের ফ্ল্যাটের লোকজনের একটা বিষয়েই পার্থক্য ছিল। সেটা হচ্ছে ইলিশ। আমার বাসায় আমি বড় বড় ইলিশ কিনতাম, তারা কিনতে পারত না। ফলে আমার আলাদা একটা সামাজিক মর্যাদা ছিল...

 

আমার এক বড় ভাইকে দেখলাম রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছেন। ডানে তাকাচ্ছেন, বামে তাকাচ্ছেন। বুঝলাম তিনি যানবাহন খুঁজছেন। আমি কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, কোথাও যাবেন নাকি? বড় ভাই বললেন, ইলিশের দাম অনেক কমে গেছে। একটু শপিংমলে যেতে হবে। কোন শপিংমলে যেতে হবে সেটাও তিনি উল্লেখ করলেন। আমি হেসে বললাম, মানুষ ইলিশ কেনার জন্য শপিংমলে যায়, এই প্রথম শুনলাম। বড় ভাই চটে গেলেন। ধমক দিয়ে বললেন, বোকার মতো কথা বলবি না। আমি শপিংমলে ইলিশ কেনার জন্য যাচ্ছি, এটা তোকে কে বলল? আরে বোকা ইলিশ আমি মাছবাজার থেকেই কিনব। আর শপিংমলে যাচ্ছি মোবাইল কেনার জন্য। আমি বললাম, ইলিশ মাছের অনেক রেসিপি দেখেছি। কিন্তু মোবাইল দিয়ে ইলিশ রান্না করা হয়, এমন কোনো রেসিপি কোনোদিন দেখিনি। বড় ভাই আরও রেগে গিয়ে বললেন, আরে রামবোকা, মোবাইল দিয়ে ইলিশ রান্না করা হবে না। সবসময় তো ইলিশ কিনতে পারি না, বুঝলি না? এখন যেহেতু বেশ কটা কিনতে পেরেছি, তাই ভাবলাম ভবিষ্যতের জন্য স্মৃতি হিসেবে ছবি তুলে রেখে দিই। কিন্তু আমার মোবাইলের ক্যামেরাটা ভালো না। তাই যাচ্ছি ভালো ক্যামেরার একটা মোবাইল কেনার জন্য। এইবার ক্লিয়ার? আমার এক প্রতিবেশী বললেন, ইলিশের দাম কমে গেছে তো! তাই বাসার বুয়াটা বিদায় করে দিলাম। আমি বললাম, ইলিশের দাম কমার সঙ্গে বাসার বুয়া বিদায় করার সম্পর্ক কী? প্রতিবেশী বললেন, সম্পর্ক তো অবশ্যই আছে। আপনার ভাবীর হাতের রান্না যাচ্ছেতাই। বিড়াল যদি তার হাতের রান্না খায়, বিড়ালেরও পেট খারাপ করে। মাছের দাম কী পরিমাণ সেটা তো আপনি জানেন। এতদিন অল্প অল্প মাছ আনতাম। দামি মাছ, তাই আপনার ভাবীর হাতে তুলে দিতে ভয় পেতাম। এত দামের জিনিস, রান্নার নামে জিনিসটা সে বরবাদ করবে, আমি ব্যাপারটা মানতে পারতাম না। তাই রান্নায় ভালো, এমন দেখে একটা বুয়া রেখেছিলাম। এখন যেহেতু ইলিশের দাম কমে গেছে, ভাবলাম বুয়ার কোনো দরকারই নেই। আমার বউ রান্না করবে। এক তরকারি খাওয়ার অযোগ্য হলে আরেকটা রান্না করবে, আরেকটা জঘন্য হলে আরেকটা। ইলিশের তো আর অভাব নেই, বুঝলেন না! আমার পাশের বাসার এক ভাবীর সঙ্গে পরশুদিন নানা বিষয় নিয়ে কথা হচ্ছিল। এমনিতে ভাবী বেশ হাসিখুশি। কিন্তু ওইদিন তাকে কেমন যেন মনমরা মনমরা লাগছিল। জিজ্ঞাসা করলাম, কোনো সমস্যা? ভাবী বললেন, একেকটা সময় কী যে হুজুগ আসে না! ধ্যাৎ, ভালো লাগে না এসব। আমি বললাম, আপনি কিসের কথা বলছেন বলেন তো! ভাবী বললেন, এই যে ইলিশ মাছের দাম কমে গেল, এই ব্যাপারে বলছিলাম। আমার সঙ্গে আমার পাশের ফ্ল্যাটের লোকজনের একটা বিষয়েই পার্থক্য ছিল। সেটা হচ্ছে ইলিশ। আমার বাসায় আমি বড় বড় ইলিশ কিনতাম, তারা কিনতে পারত না। ফলে আমার আলাদা একটা সামাজিক মর্যাদা ছিল। এখন তারাও বড় বড় ইলিশ কেনে। তাহলে আমার মর্যাদাটা থাকল কোথায়? আমার বাসার পাশের মুদি দোকানদার বলল, আপনার কাছে একটা পরামর্শ চাই। আচ্ছা, আইসক্রিম বা দই বা কোক-টোকে যদি হালকা ইলিশের গন্ধ থাকে, কোনো সমস্যা হবে কি? আমি বললাম, কেন বলেন তো? কী হয়েছে? দোকানদার বলল, আসলে হয়েছে কী, ইলিশ মাছের দাম কমে যাওয়ার পর এখন মানুষ আর সেভাবে ডিম কেনে না। তাই ভাবছি দোকানে ডিম না রেখে ইলিশ রাখব। কিন্তু ইলিশ তো আর যেখানে সেখানে রাখা যাবে না, ফ্রিজের ভিতর রাখতে হবে। ফ্রিজের ভিতর তো আবার কোক রাখি, আইসক্রিম রাখি। ইলিশ রাখার কারণে যদি এগুলোতে ইলিশের গন্ধ লেগে যায়, কী মনে হয়, কোনো সমস্যা হবে? আমি বললাম, আপনি যদি কাস্টমারকে বোঝাতে পারেন, তাহলে কোনো সমস্যাই হবে না। আইসক্রিমের কথাই ধরেন। এমনিতে কাস্টমারকে বলেন না স্ট্রবেরি ফ্লেভারের আইসক্রিম, ম্যাংগো ফ্লেভারের আইসক্রিম? যদি দেখেন ফ্রিজে ইলিশ রাখার কারণে আইসক্রিমে ইলিশের গন্ধ লাগছে তাহলে বলবেন— ইলিশ ফ্লেভারের আইসক্রিম। ব্যস।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর