সোমবার, ১৪ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

টাকা তো গাছের পাতা

ইকবাল খন্দকার

টাকা তো গাছের পাতা

কার্টুন : কাওছার মাহমুদ আইডিয়া ও ডায়ালগ : তানভীর আহমেদ

যার বিয়ে তার খবর নাই পাড়াপড়শির ঘুম নাই! কথাটা কিন্তু আজকাল ভালোই খাটে। ভারতে ৫০০ ও ১০০০ রুপির নোট হুট করে বাতিল হয়ে যাওয়ার পর পাবলিকের এ নিয়ে হুদাই কথাবার্তা চলছে। আর কান দিয়ে সেসব ঢুকছে। ঘটনা গতকালের। একজনকে কিছু টাকা পাঠানোর জন্য নিকটস্থ বিকাশের দোকানে গেলাম। দোকানে বসা লোকটাকে যেই বললাম টাকা পাঠাব, লোকটা আমার দিকে এমনভাবে তাকাল, মনে হলো আমি খুব সন্দেহজনক একটা কথা বলে ফেলেছি। আমি তাকে এভাবে তাকানোর কারণ জিজ্ঞেস করার আগেই সে বলল, টাকা দেন। আমার এবার বেশ রাগ হলো। বললাম, টাকা পাঠাতে গেলে সবাই আগে বলে নাম্বার দেন আর আপনি বলছেন টাকা দিতে। সমস্যা কী বলেন তো? লোকটা বলল, আগে নাম্বার চাওয়ার দিন আর নাই। এখন আগে টাকাই চাইতে হইব। টাকা পছন্দ হইলে পাঠামু, পছন্দ না হইলে বাদ। আমি বললাম, টাকা দেখা কি পাত্রী দেখার মতো কোনো ব্যাপার যে পছন্দ আর অপছন্দের বিষয় থাকবে? লোকটা বলল, হুদাই প্যাঁচাইয়েন না। ইন্ডিয়ায় পাঁচশ আর এক হাজার টাকার নোট অচল হইয়া গেছে শুনছেন? কখন অচল হইয়া যায় বলা তো যায় না। এই জন্য টাকা বিশ হাজার পাঠান আর পঞ্চাশ হাজারই পাঠান, পাঁচশ বা এক হাজার টাকার নোট দিতে পারবেন না। বড়জোর একশ টাকার নোট দিতে পারবেন। বিশ টাকা বা পঞ্চাশ টাকার নোট হইলে আরও ভালো হয়। দেখান, আপনের টাকা দেখান। দোকানদারের কথাগুলো শুনে মেজাজ বিগড়ে গেলেও এটা মেনে নিতে বাধ্য হলাম যে, বড় বড় টাকার নোট হঠাৎ করে অচল হওয়া আর সকালবেলার ধনীর সন্ধ্যাবেলা গরিব হয়ে যাওয়া একই ব্যাপার। আর যদি পর্যাপ্ত কালো টাকার মালিক কেউ হয়, তাহলে তো কথাই নেই। নগদে ফকির। আমার এক ছোটভাই বলল, বড় বড় নোট নিয়ে এই যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে, এতে কিন্তু আমার বিরাট ক্ষতি হয়ে গেল। এখন রোজই আমার ম্যালা টাকা খরচ হয়ে যাচ্ছে। অথচ সবসময়ই আমি বন্ধুদের ওপর দিয়ে খরচ চালিয়ে দিতে অভ্যস্ত। নাহ, এভাবে চলতে পারে না। আমি বললাম, এভাবে শুধু শিরোনাম না বলে কী হয়েছে বিস্তারিত বল। ছোট ভাই বলল, আগে বন্ধুদের সঙ্গে কোথাও বেড়াতে গেলে আমি কোনো টাকাই দিতাম না। না রিকশা ভাড়া, না সিএনজি ভাড়া, না খাবারের বিল। টাকা খরচের প্রসঙ্গে এলেই বলতাম আমার কাছে ভাংতি নেই। সব এক হাজার টাকার নোট। এখন যেহেতু ভয়ে পাঁচশ বা এক হাজার টাকার নোট সঙ্গে রাখি না, বরং একশ টাকার নোট রাখি, এই ছোটখাটো নোট নিয়ে তো আর বলা যায় না ভাংতি নেই। ব্যস, খরচ করতেই হয়। নাহ্, বিরাট লস হয়ে যাচ্ছে। আমার এক প্রতিবেশী বলল, বড় বড় নোট নিয়ে এই ধরনের আইন হলে শুধু যে ধনীরা ফকির হবে, তা নয়। নিরাপত্তাহীনতাও বেশ বেড়ে যাবে। বিশেষ করে আমি তো মনে হয় আর মাছবাজারেই যেতে পারব না। এত টেনশন নিয়ে বাজার করা যায়? আমি বললাম, মাছ বাজারে যেতে সমস্যা হবে কেন? আর টেনশনই বা কিসের? প্রতিবেশী বলল, মাছ বাজারে কী পরিমাণ ধাক্কাধাক্কি হয়, জানেনই তো। এই ধাক্কাধাক্কির মধ্যে বহু পকেটমার ঢুকে পড়ে। পকেটে যদি টাকার কোনো আভাস পায়, পকেটমাররা সেটা নিয়েই ছাড়ে। এখন যদি ছোট ছোট নোট নিয়ে বাজারে যেতে হয়, তাহলে এক হাজার টাকা বানাতেই সঙ্গে নিতে হবে দশ নোট। তার মানে পকেট থাকবে ফোলা, পকেটমাররা সহজেই বুঝে ফেলবে সঙ্গে টাকা আছে। তারপর কী হতে পারে অনুমান করেন। আমি বললাম, অনুমান করলাম। তারপর যেটা হতে পারে সেটা হচ্ছে, মাছের পরিবর্তে আলু ভর্তা দিয়ে ভাত খেতে হতে পারে। আলু বাজারে নিশ্চয়ই ধাক্কাধাক্কি বা পকেটমার নেই!  আমাদের মহল্লার পার্মানেন্ট ভিক্ষুক আদম আলী কোত্থেকে যেন পাঁচশ আর এক হাজার টাকার নোটের ব্যাপারটা শুনেছে।

ব্যস, সে খ্যাক খ্যাক করে হাসতে হাসতে সবার সামনেই বলে ফেলল, এবার কিন্তু আপনেগো লগে আমার আর বিশেষ তফাৎ থাকতাছে না।  আমার কাছেও ছোট নোট, আপনেগো কাছেও ছোট নোট। মজা না?

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর