শিরোনাম
সোমবার, ১৪ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

বন্ধুর প্রেমিকার জন্মদিনে যা করতে হলো

আলিম আল রাজি

বন্ধুর প্রেমিকার জন্মদিনে যা করতে হলো

আমার বন্ধু হাবিব। খুব ইমোশনাল ছেলে। সদ্য প্রেম হয়েছে হাবিবের। প্রেমিকার প্রতি তার অগাধ ভালোবাসা এবং টান। সারা দিন ফুসুর ফাসুর আলাপ করে আর হোয়াটসআপে একটু পর পর ছবি পাঠায়। আমরা দেখি, ভালোই লাগে। যাক, ভালো ছেলেটার ভালো একটা গতি হলো। কিছু দিন আগে রাত ২টার সময় ফোন দিল হাবিব।

খুব উত্তেজিত কণ্ঠে বলল, ‘দোস্ত, আগামী সপ্তায় আমার প্রেমিকার জন্মদিন।’

: ভালো খবর। তাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা। এখন ঘুমা।

: তোরে শুভেচ্ছা জানাতে বলছি না। তোর একটা কাজ করে দিতে হবে

: কী কাজ?

: প্রেমিকাকে চিঠি লিখব।

: লিখ।

: লিখতে পারি না বলেই তো তোর কাছে আসা। বুঝিসই তো, প্রেম হওয়ার পর প্রথম

জন্মদিন। একটু ভালোভাবে চিঠিটা দিতে হবে। তুই চিঠিটা লিখে দে না প্লিজ।

: আমি কেন তোর প্রেমিকাকে চিঠি লিখব?

: দে না বন্ধু, জানি তুই পারবি। তোর তো এসব ব্যাপারে খুব মাথা খেলে। যা চাস খাওয়াব তোকে। প্লিজ। এক সপ্তাহ সময় দিলাম তোকে।

 

এভাবে অনুরোধ করলে ফেলা যায় না। তা ছাড়া সে জানিয়েছে যা চাই খাওয়াবে। লেখাই যায় একটা চিঠি।

আমি পরের দিন রবীন্দ্রনাথ, জীবনানন্দ, পূর্ণেন্দু পত্রী মিক্স করে দিলাম কঠিন এক প্রেমের চিঠি লিখে। ভাবলাম, চিঠি দেখে হাবিব মুগ্ধ হবেই।

 

হাবিব চিঠি পড়ল। কিছুক্ষণ চুপচাপ থেকে উদাস কণ্ঠে বলল, ‘দোস্ত, বেশি

কঠিন হয়ে গেছে। আরেকটু সহজ কিছু কর না প্লিজ।’

 

আমিও দেখলাম জিনিসটা বেশ কঠিন হয়ে গেছে আসলেই। ডোজ কমিয়ে আনলাম। দিলাম হেলাল হাফিজ, নির্মলেন্দু গুণ মিক্স করে আরেকটা মিষ্টি চিঠি লিখে। এবার খুশি না হয়ে যাবে কই? কিন্তু বিধি বাম। হাবিব এটা দেখেও খুশি হলো না। বিরস বদনে বলল, ‘দোস্ত আরেকটু সহজ কিছু করা যায় না? তোকে খাওয়াব, তোকে নিয়ে সিনেমাও দেখতে যাব একদিন। প্রমিজ।’

কী আর করা! আমি ডোজ আরও কমিয়ে আনতে বাধ্য হলাম। এবার দিলাম রকমারি রম্য, ব্লগ আর ফেসবুক স্ট্যাটাস মিক্স করে আরেকটা লিখে। কিন্তু হায়! এটাও বন্ধুর মনঃপূত হলো না। বলল, ‘দোস্ত আরেকটু ভালোবাসাময় কিছু করা যায়?’

আমার এবার কিঞ্চিত মাথা গরম হয়ে গেল।  শেষমেশ লিখতে বসলাম। এটা না হলে আর লিখবই না।

লিখলাম, ‘ওগো, তোমার জন্মদিনে আমার  কেবলই মনে হচ্ছে এটা আমার নিজেরই

জন্মদিন। বিশ্বাস কর, আমার মনে হচ্ছে আজই আমি দুনিয়াতে আসলাম। আমার

ভালোবাসার কসম, নিজেকে কেবলই আমার একটা ল্যাক্কাপ্যাক্কা বাচ্চা মনে হচ্ছে।’

 

এই ন্যাকুপ্যাকু চিঠি দেখে নিজের মেজাজই গরম হয়ে গেল। তাও দেখালাম

হাবিবকে। আমাকে অবাক করে দিয়ে সে বলল, ‘ফাট্টাফাট্টি হইছে দোস্ত। এটাই

চাচ্ছিলাম।’

 

আমি দ্বিতীয় দফা অবাক হলাম যখন জানলাম এই চিঠি তার প্রেমিকারও দারুণ পছন্দ হয়েছে।  চিঠি পড়ে আবেগের চোটে মেয়ে নাকি কেঁদেকেটে একাকার হয়ে গিয়েছিল! শুধু তাই নয়, এই চিঠির পরে নাকি তাদের  প্রেমের সম্পর্ক আরও গভীর থেকে গভীরতর হয়েছে।

 

কী জানি বাপু!  আজকালকার প্রেমিক প্রেমিকার ভাব বোঝা বড় কঠিন!

সর্বশেষ খবর