বহুল প্রচলিত একটা কথা আছে, শেষ ভালো যার, সব ভালো তার। চলতি বছরটা শেষ হয় হয় করছে। এই শেষদিকে এসে গুরুত্বপূর্ণ দুটি নির্বাচন হয়ে গেল। যদি বলা হয় নির্বাচন দুটির কারণে বছরটার গুরুত্ব বহুলাংশে বেড়ে গেছে বা গিয়েছিল। একটি আমেরিকার নির্বাচন, অন্যটি নারায়ণগঞ্জের নির্বাচন। দুটি নির্বাচনের মধ্যে বড় একটি মিল এবং একটি বড় অমিল লক্ষ্য করা গেছে। মিলটি হচ্ছে, দুটি নির্বাচনই ব্যাপক আলোচিত। আর অমিলটি হচ্ছে, একটির ফলাফল ছিল অপ্রত্যাশিত, অন্যটির প্রত্যাশিত। আমার এক ‘নির্বাচন বিশেষজ্ঞ’ বন্ধু বলল, দুটি নির্বাচন আলোচিত হলেও একটির কারণে আর্থিক কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি, অন্যটির কারণে ব্যাপক আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। আমি বললাম, আর্থিক ক্ষতির লক্ষণ তো কোনোটাতেই দেখা যায়নি। তুই আর্থিক ক্ষতির আলামত কই পেলি, কীভাবে পেলি? বন্ধু বলল, তার আগে তোকে জানতে হবে কোন নির্বাচনে আর্থিক ক্ষতি হয়নি। জী, আর্থিক ক্ষতি হয়নি নারায়ণগঞ্জের নির্বাচনে। কেন ক্ষতি হয়নি, কারণ ফলাফল প্রত্যাশিত ছিল। যারা মিষ্টি কিনেছিল বা মিষ্টির জন্য বুকিং দিয়েছিল, তাদের টাকা পয়সা জলে যায়নি। আর আমেরিকার নির্বাচনের ফলাফল ছিল অপ্রত্যাশিত। গোপন সূত্রে জানা গেছে, যারা মিষ্টি কিনেছিল, তারা মিষ্টির বদলে ধরা খেয়েছে। আর যারা বুকিং দিয়েছিল, তারা সেই বুকিং ক্যান্সেল করতে গিয়ে মিষ্টির দোকানদারদের ব্যাপক ক্ষতি করেছে। ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য সমবেদনা। শুরুতেই লম্বা করে নির্বাচনের কথা বলা হলো দেখে বছরটা যে শুধু নির্বাচন করতে করতেই গেছে, তা কিন্তু নয়। এই বছরে আরও ম্যালা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটেছে। এখন যদি বলেন সে সব ঘটনার বর্ণনা দেওয়ার জন্য, বিপদে পড়ে যাব। কারণ, আমাদের এই পাতায় জায়গা খুব কম। সব ঘটনার বর্ণনা দেওয়া যাবে না। তবে হালকা করে দুয়েকটা ঘটনার একটু ‘টাচ’ না দিয়ে ছাড়ছি না। এ বছরের শেষদিকে এসে একটা ঘটনা বেশ তোড়জোড়ের সঙ্গে ঘটেছে। সেটা হচ্ছে বিদেশি চ্যানেলে বিজ্ঞাপন বন্ধের পক্ষে আন্দোলন। আমার এক বড় ভাই বললেন, আমি জানি আমার উচিত এই আন্দোলনকে সমর্থন করা। কিন্তু আমার সংসারের কথা বিবেচনা করে সমর্থন করিনি। নিজের বউয়ের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার স্বার্থে আমি চাই বিদেশি চ্যানেলে বেশি বেশি দেশি বিজ্ঞাপন প্রচার হোক। আমি বললাম, এটা কেমন কথা? বড় ভাই বললেন, এটাই আসল কথা। বিদেশি চ্যানেলে বেশি বেশি দেশি বিজ্ঞাপন প্রচার হবে, সেই সঙ্গে প্রচার হবে ওই দেশের বিজ্ঞাপনও। তো বউ যখন দেখবে বিদেশি চ্যানেলে দেশি-বিদেশি মিলিয়ে ম্যালা বিজ্ঞাপন প্রচার হচ্ছে, তখন সে বাধ্য হবে বিদেশি চ্যানেল বর্জন করতে। আর সে বিদেশি চ্যানেলের মাথা খারাপ হওয়া মার্কা সিরিয়াল দেখা বন্ধ করলে আমার সংসারে শান্তি ফিরে আসতে বাধ্য।
গ্রাম থেকে আমার এক চাচা ফোন করে বললেন, আমি জীবনে কোনোদিন শহরে গেলাম না। শহরের মানুষ আমারে চিনে না। তবু আমারে নিয়া নাকি খুব আলোচনা হইতাছে? আমি অবাক হয়ে বললাম, আপনাকে নিয়ে শহরে আলোচনা হচ্ছে! চাচা বললেন, তুমি হয়তো ভুইলা গেছ ভোটার আইডিতে আমার নাম ‘সুলতান’। আমার বুঝতে বাকি থাকল না, তিনি বছরের আলোচিত সিরিয়াল ‘সুলতান সুলেমান’-এর কথা বলছেন। আমার এক ছোট ভাই বলল, আগে আমরা চাঁদাবাজির যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ ছিলাম। অতিষ্ঠ ছিলাম দলবাজি, ভাঁওতাবাজি, রংবাজি ইত্যাদির যন্ত্রণায়ও। কিন্তু এ বছরে বিশেষ একটা ‘বাজি’ আমরা টাকা খরচ করে দেখেছি। সেটা হচ্ছে ‘আয়নাবাজি’। খবরে প্রকাশ, এ বছর বম্বের সালমান খানের চেয়েও নাকি গুগলে বেশি খোঁজা হয়েছে আমাদের দেশের একজনকে। তার মানে জনপ্রিয়তার দিক থেকে তিনি সালমান খানকেও ছাড়িয়ে গেছেন। তিনিও কিন্তু হিরো। বলুন তো তিনি কে?