সোমবার, ৯ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

হার্টজনিত ভুলভাল প্রবলেম

ইকবাল খন্দকার

হার্টজনিত ভুলভাল প্রবলেম

কার্টুন : কাওছার মাহমুদ আইডিয়া ও ডায়ালগ : তানভীর আহমেদ

বাংলায় উচ্চারণ হার্ট ঠিকই আছে। ইংরেজি বানানে একটু প্যাঁচ আর কি। আর তাতেই যত প্রবলেম। এখন যদি বুঝে নেন হার্টে প্রবলেম মানে তেল-চর্বি বেশি খাওয়া যাবে না, নিয়মিত হাঁটতে হবে তাহলে ভুল বুঝবেন। এই হার্টের কথা বলা হচ্ছে না। বলা হচ্ছে অন্য হার্টের কথা। সেই হার্ট মানে ব্যথা, বেদনা। সেখানেও প্রবলেম আছে। সেই প্রবলেমের সূত্রপাত হলো আমার এক ছোটভাই ফোনের মাধ্যমে। না ভাই, হার্টের প্রবলেম না। গরিব মানুষের আবার হার্ট! এটা ‘বেদনাদায়ক’ হার্ট বিষয়ক। সে বলল, ভাই, এতদিন জানতাম যায় দিন ভালো, আসে দিন খারাপ। অথচ এখন দেখছি উল্টোটা। এখন দেখছি আগের চেয়ে ভালো দিন শুরু হয়ে গেছে। আহারে, আমরা কত খারাপ সময় পার করেছি। যদি আমাদের সময় এমন সুদিন থাকত! আমি বললাম, তোদের সময় কী এমন দুঃসময় ছিল আর এখন কী এমন সুসময় শুরু হয়ে গেছে বুঝলাম না তো! বুঝিয়ে বল। ছোটভাই আমাকে বুঝিয়ে বলল, আমাদের সময় পাঠ্যপুস্তকে উল্লেখযোগ্য কোনো ভুল ছিল না। তাই পরীক্ষার খাতায় যা লিখতে হতো বই অনুযায়ী লিখতে হতো। মানে শুদ্ধটা লিখতে হতো। কিন্তু এখন পাঠ্যপুস্তকে ভুল থাকার কারণে ছেলেমেয়েরা বিরাট সুবিধা পেয়ে যাচ্ছে। তাই যদি কবিতার লাইন ভুল করে বা বানিয়ে লিখে, স্যাররা এটাকে ভুল বলতে পারবেন না। কারণ, ঠিক জিনিসটা কী, বইয়ে যেটা আছে সেটা আদৌ ঠিক কি না, সেটা স্বয়ং স্যারও জানে না। ফলে তারা ভুল আর শুদ্ধ নির্ণয় নিয়ে ভালোই যন্ত্রণায় আছেন। আর এই সুযোগে পার পেয়ে যাচ্ছে ফাঁকিবাজ ছাত্রছাত্রীরা। আফসোস, আমরা এই সুযোগটা পাইনি।

ফেসবুকে আমি একজনকে বললাম, ভাই, আপনার স্ট্যাটাসে তো প্রচুর বানান ভুল। একটা স্ট্যাটাস হাজার হাজার লোক দেখে। আপনি সবার সামনে ভুলভাল স্ট্যাটাস দেন, এটা কিন্তু আপনার প্রেস্টিজের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এই লোক হাসির ইমো দিয়ে বলল, আমার ফেসবুকে ফ্যান ফলোয়ার মিলিয়ে মাত্র সাড়ে পাঁচ হাজার। আর সারা দেশে বাচ্চা-কাচ্চার সংখ্যা লাখ লাখ। লাখ লাখ বাচ্চা-কাচ্চার সামনে ভুল বানানের বই উপস্থাপন করতে যদি কর্তৃপক্ষ নিজের প্রেস্টিজের চিন্তা না করে, তাহলে সাড়ে পাঁচ হাজার ফ্যান ফলোয়ারের সামনে ভুল বানানের স্ট্যাটাস উপস্থাপন করতে আমি কেন স্ট্যাটাসের চিন্তা করব? আমার এক বড় ভাই বললেন, মানুষ মরণশীল। নির্দিষ্ট একটা সময়ের পর প্রতিটি মানুষই  মরে যায়। যদি মরে না যেত, তাহলে যারা পাঠ্যপুস্তকে বড় বড় ভুল রেখে দিয়েছেন, তাদের বিপদ হয়ে যেত। আমি বললাম, এত আধ্যাত্মিক কথাবার্তা না বলে দয়া করে বিষয়টা একটু বুঝিয়ে বলেন। বড় ভাই আমার কথা রাখলেন এবং বুঝিয়ে বললেন, ‘আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে’ এই লাইনটা উল্টাপাল্টা লেখা আছে পাঠ্য পুস্তকে নিশ্চয়ই দেখেছিস। মনে কর, আজ যদি এই কবিতার কবি প্রয়াত না হয়ে জীবিত থাকতেন, তাহলে কী অবস্থাটা হতো একবার চিন্তা করেছিস? তিনি গিয়ে সোজা মানহানি তো না, কবিতাহানি মামলা করে দিতেন না? ভাগ্যিস, তিনি প্রয়াত।

আমার এক প্রতিবেশী বললেন, ভাইরে, বহু দিন পর আমাকে আবার সন্ধ্যার পর পড়তে বসতে হচ্ছে। এই বয়সে এই সব ভালো লাগে না। আমি বললাম, কী কারণে সন্ধ্যার পর আপনাকে নিয়ম করে পড়তে বসতে হচ্ছে একটু বলেন তো! প্রতিবেশী বললেন, আমার মেয়ে সন্ধ্যার পর পড়তে বসে তো! তাই আমাকেও বসতে হয় তাকে ভুলগুলো কারেকশন করে দেওয়ার জন্য। কারণ, পাঠ্যবইয়ে ভুল আছে শোনার পর থেকে মেয়ের মনে এমন সন্দেহ ঢুকেছে যে, এখন একটা লাইন পড়ার আগে আমাকে জিজ্ঞেস করে নেয়, আব্বু, লাইনটা পড়তে চাচ্ছিলাম। ভুল-টুল নেই তো? স্বস্তির বিষয়, ভুল থাকতেই পারে তবে টুল নেই।

সর্বশেষ খবর