সোমবার, ২৩ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

রাজ কাহিনী

ইকবাল খন্দকার

রাজ কাহিনী

হীরক রাজার দেশের রাজা সম্পর্কে আমাদের বিস্তারিত ধারণা আছে। তবে সেই রাজার অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও আমরা আজ যে রাজার কথা বলব, এ রাজার অস্তিত্ব নিয়ে কিন্তু কারও কোনো প্রশ্ন বা সন্দেহ নেই। কারণ তিনি এমন এক দেশের রাজা, যে দেশকে নিয়ে আমরা স্বপ্ন দেখে দেখে রাতের পর রাত কাটিয়ে দিতে পছন্দ করি। শুধু রাত কেন, দিনের বেলায়ও যদি একটু ঝিমুনি আসে, সে দেশের স্বপ্ন দেখতে শুরু করে দিই। তবে হীরক দেশের রাজাকে রাজা বলা গেলেও তাকে কিন্তু রাজা বলা যাবে না। প্রেসিডেন্ট বলা জরুরি। আমরা রাজনৈতিক স্লোগানে শুনি- অমুক ভাই আসছে, রাজপথ কাঁপছে। পরে খোঁজ নিলে দেখা যায় কারও আগমনেই রাজপথ কাঁপে না। রাজপথ কাঁপে বড়জোর ট্রাকের আগমনে। তবে ট্রাক শুধু না, ট্রাম্পের আগমনেও রাজপথ কেঁপেছে বলা যায়। শুধু রাজপথ কেন, তামাম দুনিয়াই কেঁপে উঠেছিল। বিশ্বকাঁপানো প্রেসিডেন্ট বটে তিনি। আমরা সেই ছোটবেলায় স্যারের সামনে দাঁড়িয়ে কত ইচ্ছের কথাই না প্রকাশ করেছিলাম! বড় হয়ে এই হব, সেই হব। ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ারসহ আরও কী কী যেন। কিন্তু শেষে দেখা গেছে কেউই কিছু হতে পারিনি। অথচ ট্রাম্প যতদূর মনে হয় আশির দশকের দিকে প্রথম আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করেছিলেন। ব্যস, প্রেসিডেন্ট হয়ে তবেই ক্ষান্ত হয়েছেন। আমার এক প্রতিবেশী বললেন— যার বিরুদ্ধে এত আন্দোলন, এত কানকথা, তিনি হয়ে গেলেন প্রেসিডেন্ট। বিষয়টা একটু কেমন যেন। আমি বললাম— ভাই বিষয়টা যেমনই হোক, এটাই ফাইনাল কথা যে, তিনি এখন প্রেসিডেন্ট। অতএব তার সম্পর্কে কথাবার্তা বললে সাবধানে বলতে হবে। নয়তো উনার কানে গেলে খবর আছে। প্রতিবেশী বললেন— আমেরিকার প্রেসিডেন্টের এত খারাপ অবস্থা থাকার তো কথা না। আমি তাজ্জব হয়ে বললাম, মানে কী! প্রতিবেশী বললেন— না, মানে আপনি বললেন না কথাবার্তা বললে নাকি সাবধানে বলতে হবে। নইলে উনার কানে গেলে নাকি সমস্যা! আমি তো মনে করি আমেরিকার প্রেসিডেন্টের বাসায় এসি আছে। আর এসি থাকলে জানালা বন্ধ থাকার কথা। জানালা বন্ধ থাকলে বাইরের কথা মানে আমার কথা তো তার কানে যাওয়ার কথা না। যেহেতু আমার কথা তার কানে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন, তাহলে কি তার বাসায় বা অফিসে এসি নেই? তিনি কি ফ্যান চালিয়ে জানালা খোলা রাখেন? এত খারাপ অবস্থা তার? আমি প্রতিবেশীর বেহুদা প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার প্রয়োজন মনে না করে নিজের কাজে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই পড়ে গেলাম দারোয়ানের সামনে। দারোয়ান বলল— স্যার, শুনলাম আমেরিকার প্রেসিডেন্টের নাকি ম্যালা টাকা পয়সা। আমার একটা জিনিস জানার খুব ইচ্ছা স্যার। এই যে তার এত টাকা পয়সা, এত টাকা পয়সা সে রাখে কই? চুরি হয় না? আমি তার ফালতু প্রশ্ন শুনে চোখ গরম করে তাকাতেই সে বলল— রাগ কইরেন না স্যার। কথাটা বিনা কারণে কই নাই। গত মাসের বেতনটা আর এই মাসের বেতনটা মিলায়া ভালোই টাকা হইছিল। ভাবছিলাম জমামু। রাখছিলাম বালিশের নিচে। গত রাইতে কেডা জানি চুরি কইরা লইয়া গেছে গা। ছয় হাজার টাকাই আমি সামলায়া রাখতে পারি না, আমেরিকার প্রেসিডেন্টে এত টাকা পয়সা ক্যামনে সামলায়া রাখে! পাশ থেকে এবার দ্বিতীয় দারোয়ান বলে উঠল— আমরিকার প্রেসিডেন্টে তোর মতো বালিশের নিচে টাকা রাখে বইলা মনে হয় না। সে মনে হয় বালিশের কভারের ভিতরে রাখে। কভারের ভিতরে রাখলে চুরি করা দায় আছে। আমি সবসময় রাখি দেখস না? এই লেখাটা লেখার সময় আমার এক ছোটভাই ফোন দিল। জিজ্ঞেস করল কী করি। বললাম- ট্রাম্পকে নিয়ে লেখা লিখছি। রকমারি রম্য পাতায় ছাপবে। ছোটভাই বলল- আজাইরা কাজ ছাড়েন তো ভাই। ভালো কাজ করেন। আমি বললাম— লেখালেখিকে তুই আজাইরা কাজ বলছিস! তোর এত বড় সাহস! ছোটভাই বলল— রাগ কইরেন না ভাই। আমি ট্রাম্পের ব্যাপারে এতকিছু জানি যে, ট্রাম্পের ওপর পিএইচডি করার সুযোগ থাকলে সেটাও করে ফেলতাম এতদিনে। তো আমি যতদূর জানি, ট্রাম্প রকমারি রম্য পাতাটা পড়ে না। তাহলে তাকে নিয়ে লিখে কী লাভ বলেন!

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর