সোমবার, ২০ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা

সবুরে জয় ফলে

ইকবাল খন্দকার

সবুরে জয় ফলে

♦ কার্টুন : কাওছার মাহমুদ ♦ আইডিয়া ও ডায়ালগ : তানভীর আহমেদ

আমার এক প্রতিবেশীকে খুব মনমরা হয়ে বসে থাকতে দেখে এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, কোনো সমস্যা নাকি, ভাইজান? প্রতিবেশী বললেন, সমস্যা তো বটেই। এভাবে চলতে থাকলে একদিন হয়তো ভুলেই যাব আমি উচ্চৈঃস্বরে কথা বলতে পারি। সত্যিই, এটা খুব দুঃখজনক ব্যাপার হবে। কোনোভাবেই এটা মানা যায় না। মানা উচিত নয়। আমি বললাম, উচিত-অনুচিতের ব্যাপার পরে। আগে বলেন ঘটনা কী। প্রতিবেশী বললেন, বিয়ের পর কিছুদিন ভালোই চলছিল। আমি উচ্চৈঃস্বরে কথা বলতে পারতাম। কিন্তু এরপর আপনার ভাবীর মেজাজ এতটাই চড়া হতে থাকে যে, আমি উচ্চৈঃস্বরে কথা বলব দূরের কথা, ঠিকমতো মুখই খুলতে পারতাম না। বিড়ালের মতো সারা দিন মিউমিউ করতে হতো। তবে একটা সময় আমি জোরে চিৎকার করতে পারতাম, যখন বাংলাদেশের খেলা হতো এবং বাংলাদেশ ভালো খেলত। কিন্তু আজকাল আর বাংলাদেশ ভালোও খেলে না, আমারও চিৎকার করা হয় না। আমি কি তাহলে ‘পারমানেন্ট বিড়াল’ হয়ে যাচ্ছি? আমি বললাম, জনাব, একটা ঝাড়ু হাতে নেন এবং সব হতাশা ঝাড়ু দিয়ে পিটিয়ে বিদায় করে দেন। বাংলাদেশ ভালো করছে না, তার মানে এই নয় যে কখনোই ভালো করবে না। সবুর করেন। সবুরে যেহেতু মেওয়া ফলে, অতএব বাংলাদেশের জয়ও ফলবে। প্রতিবেশী আমার কথা খুব একটা বিশ্বাস করলেন বলে মনে হলো না। গতকাল যেই বাংলাদেশ জিতল, আমি গেলাম ভদ্রলোকের খোঁজ করার জন্য। আমি নিশ্চিত ছিলাম দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে থেকেই তার চিৎকার শুনতে পাব। কিন্তু কোনো শব্দই শুনতে পেলাম না। আমি কলিংবেল বাজিয়ে ঘরে ঢুকেই দেখি তিনি সোফার ওপর ঝিম মেরে বসে আছেন। বললাম, বাংলাদেশ জিতল আর আপনি চিৎকার না করে চুপচাপ বসে আছেন? ভদ্রলোক মিনমিনিয়ে বললেন, আর বলবেন না ভাই, বাংলাদেশ জেতার সঙ্গে সঙ্গেই গায়ের জোরে চিৎকার মেরেছিলাম। অনেকদিনের জমানো চিৎকার, বুঝতেই পারছেন! কিন্তু হঠাৎ গলার রগে টান লেগে গেল। ব্যাস, গলা অচল। এখন গলার রগ ঠিক করতে কত টাকা খরচ হয় কে জানে! ভদ্রলোকের স্ত্রী পাশের রুমেই ছিলেন। তিনি বেরিয়ে এসে বললেন, খরচ নিয়ে তুমি কোনো চিন্তাই কর না। বাংলাদেশ জিতেছে, এই খুশিতে দরকার হলে তুমি আরেকটা চিৎকার মেরে আরেকটা রগ ছিঁড়ে ফেল। এক রগ মেরামত করতে যদি ৫০০ টাকা লাগে, দুই রগ মেরামত করতে নিশ্চয়ই একটু ডিসকাউন্ট পাওয়া যাবে। আমার এক বন্ধু বাংলাদেশ হারলেই হতাশার কথা শোনাতে শুরু করে। নাহ, ক্রিকেট আমাদের জন্য নয়, আমরা এখনো আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার যোগ্যতা অর্জন করতে পারিনি, এই জাতীয় কথাবার্তা। গতকাল বাংলাদেশ যখন জিতল, তাকে বললাম, খেলায় হারজিত থাকতেই পারে। হারলেই হতাশার কথা শোনাতে হবে, এই নিয়ম কোথায় পেয়েছিস? একটু সবুর করলে কী হয়? বন্ধু বলল, আসলে হয়েছে কী, আমি খুব নরম মনের মানুষ তো! তাই সবুর করতে পারি না। সহজেই ভেঙে পড়ি। পাশ থেকে এবার একজন বলে উঠল, তুই আয়রনম্যান হওয়ার চেষ্টা কর। দেখবি বডিও লোহার মতো হবে, মনও লোহার মতো হবে। তখন সহজে আর ধৈর্যহারা হবি না। বন্ধু বলল, আয়রনম্যান হওয়া কি মুখের কথা? পাশের জন বলল, এখন থেকে নিয়মিত কচু খাবি। কচুতে প্রচুর আয়রন আছে। মাসখানেক কচু খেলেই আশা করা যায় তুই আয়রনম্যানে পরিণত হবি এবং বাংলাদেশকে মাঝেমধ্যে হারতে দেখলেও হতাশ হবি না।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর