সোমবার, ৩ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা

বুঝে শুনে হুমকি দিন

ইকবাল খন্দকার

বুঝে শুনে হুমকি দিন

► কার্টুন : কাওছার মাহমুদ ► আইডিয়া ও ডায়ালগ : তানভীর আহমেদ

আমরা অন্যকে হুমকি দেওয়ার জন্য বলি— খবর আছে। খবরটা হচ্ছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা থানা পুলিশ এক মাদকসেবী ছাত্রলীগ কর্মীকে ধরে থানায় আনার পর ছাত্রলীগের অন্য নেতা-কর্মীরা থানায় এসে পুলিশকে গালিগালাজের পাশাপাশি এই হুমকিও দিয়েছে থানার ইট নাকি তারা খুলে নেবে একটা একটা করে। আপনারা নিশ্চয়ই স্বীকার করতে বাধ্য হবেন খবরটায় নতুনত্ব আছে। আবার এটাও স্বীকার করবেন— হুমকিতে নতুনত্ব আছে। একটা থানাভবন বানাতে কিন্তু কম ইট লাগেনি। এত এত ইট একটা একটা করে খোলা চাট্টিখানি কথা না। অত্যধিক কঠিন। তবে এটাও ঠিক, যারা হুমকি দেয়, তারা সবসময় কঠিন কাজ সম্পাদন করার ব্যাপারে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েই হুমকি দেয়। ধরা যাক কেউ একজন আপনাকে হুমকি দিল— থাপড়িয়ে চাপার বত্রিশটা দাঁত ফেলে দেব। অথচ তিনি জানেন না, যাকে হুমকিটা দেওয়া হচ্ছে, তার চাপায় আদৌ বত্রিশটা দাঁত আছে কিনা। নাকি দুই-চারটা পোকায় খেয়ে ফেলেছে। তো কোনো দাঁত যদি পোকায় নাও খেয়ে থাকে, তবু সেগুলো থাপড়িয়ে ফেলা কিন্তু খুব কঠিন। রীতিমতো অসম্ভব। ডেন্টিস্টরা যন্ত্রপাতি দিয়ে একটা দাঁত তুলতে গিয়েই হিমশিম খায়, আর বত্রিশ দাঁত কিনা ফেলে দেওয়া হবে থাপড়িয়ে। আর কোনো দাঁত যদি পোকায় খেয়ে ফেলে থাকে, তাহলে সেই দাঁতের অবশিষ্টাংশ থাপড়িয়ে ফেলতে পারবে না স্বয়ং বক্সিং খেলোয়াড়রাও। মূল কথা হচ্ছে, হুমকি দেওয়ার সময় আমাদের মাথা এতটাই গরম থাকে যে, আমরা চিন্তাও করি না, কী বলতে গিয়ে কী বলছি। কতটা দুঃসাধ্য এবং অবাস্তব কথা বলছি। যদি চিন্তা করতাম, তাহলে হুমকির পরিমাণ অনেকটাই কমে আসত। আমার এক ছোটভাই কথা প্রসঙ্গে বলল, ভাই, সাধারণ মানুষ হুমকি দেওয়ার সময় চিন্তা ভাবনা করবে কী, আমাদের স্যাররাই কখনো চিন্তা ভাবনা করে হুমকি দেননি। যদি চিন্তা ভাবনা করে হুমকি দিতেন, তাহলে ছোটবেলায় আমার মনে এই ভয়টা ঢুকত না। আমি বললাম, স্যাররা কী এমন হুমকি দিয়েছিলেন যে কারণে ছোটবেলায় তোর মনে ভয় ঢুকেছিল? আর ভয়টাই বা কী ছিল? ছোটভাই বলল, আমার ভয় ছিল আমি কীভাবে চশমা পরব। আর চশমা পরতে না পারলে বুড়ো বয়সে কীভাবে বই পুস্তক পড়ব! আমি বললাম, হুমকিটা কী ছিল, সেটা বল। ছোটভাই বলল—স্যার হুমকি দিয়েছিলেন পড়া না পারলে নাকি কান টেনে ছিঁড়ে ফেলবেন। আপনিই বলেন, কান না থাকলে আমি চশমা পরতাম কীভাবে আর চশমা পরতে না পারলে...। আমার আরেক ছোটভাই বলল, তার বড়ভাই নাকি তাকে প্রায়ই একটা হুমকি দেয়। কিন্তু আজ সে এমন একটা কথা বলে এসেছে, তার ধারণা তার বড়ভাই আর কখনো হুমকিটা দেবে না। আমি বললাম, তোর বড়ভাই তোকে কী হুমকি দেয় সেটা আগে বল, তারপর বল তুই এমন কী বলে এসেছিস যে কারণে তার হুমকি দেওয়া বন্ধ হয়ে যেতে পারে। ছোটভাই বলল, আমার বড়ভাই আমাকে ফোনে কথা বলতে দেখলেই হুমকি দেয় আমার মোবাইল আছাড় মেরে ভেঙে নাকি নব্বই টুকরো করে ফেলবে। আজকে তাকে আমি বললাম, নব্বই টুকরো করার কথা যে রোজই বলেন, এক আছাড়ে একটা মোবাইলকে নব্বই টুকরো কি আপনি করতে পারবেন? যদি নব্বই টুকরো না হয়ে উননব্বই টুকরো হয়? আমি কিন্তু বসে বসে গুনবো। ব্যস, বড়ভাইয়ের মুখ ‘হাঁ’। আমরাও চাই যে কোনো প্রকারের হুমকিদাতাদের মুখ ‘হাঁ’ হয়ে যাক। তাহলে তাদের ‘হাঁ’ মুখ দিয়ে আর হুমকি বের হবে না। বড়জোর বাতাস বের হতে পারে। হুমকির চেয়ে বাতাস ভালো।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর