শিরোনাম
সোমবার, ১০ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা

হ্যাপি পয়লা বৈশাখ

ইকবাল খন্দকার

হ্যাপি পয়লা বৈশাখ

♦ কার্টুন : কাওছার মাহমুদ ♦ আইডিয়া ও ডায়ালগ : তানভীর আহমেদ

বিশেষ কোনো গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির আগমন ঘটলে টিভিতে ব্রেকিং নিউজ হয়, অমুক আসছেন। যেহেতু বৈশাখ বাংলা বছরের প্রথম মাস, অতএব এটা কিন্তু খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা মাস। তবু এটা নিয়ে ‘বৈশাখ আসছে’ টাইপের ব্রেকিং নিউজ হচ্ছে না এই জন্য, যেহেতু খবরটা আগে থেকেই সবার জানা। কী জানা? এটাই জানা যে, চৈত্রের পর বৈশাখই আসবে। চৈত্রের পর ভাদ্র কিংবা অগ্রহায়ণ চলে আসবে লবিংয়ের জোরে, এমনটা হওয়ার কোনো সুযোগ আগেও ছিল না, এখনো নেই। তো বৈশাখের আগমনে টিভিতে ব্রেকিং নিউজ না হলেও কারও কারও কিন্তু নিউজ হয়ে যাচ্ছে। নিউজ হয়ে যাচ্ছে মানে খবর হয়ে যাচ্ছে আর কি। খবর হয়ে যাওয়ার অনেক কারণের মধ্যে প্রধান একটি কারণ হচ্ছে— ইলিশ। ‘ইলিশ ইলিশ ইলিশ, কম করিয়া গিলিস’ বলে রসিকজনেরা যতই ছড়া কাটুক, কে শোনে কার কথা! সবাই প্রস্তুত গলা পর্যন্ত ভরে ইলিশ খাওয়ার জন্য। আর তাদের দলে আছেন আমার এক প্রতিবেশীও। তিনি এবং তার পরিবার নানাভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছে ইলিশ খাওয়ার জন্য। গতকাল তাকে দেখলাম সস্ত্রীক কোথায় যেন বের হচ্ছেন। আমি ভাবলাম কেনাকাটায় যাচ্ছেন বুঝি। জিজ্ঞেস করলাম, কেনাকাটায় যাচ্ছেন নিশ্চয়ই। আর কোনো শপিংমলে? প্রতিবেশী বললেন, কাঁটাবনে। আমি চোখ কপালে তুলে বললাম, কাঁটাবন আবার শপিংমল হলো কবে? প্রতিবেশী বললেন, ভাইজান, শপিংমল ছাড়া কেনাকাটা করা যাবে না, এমন কোনো নিয়ম আছে নাকি? আমি বললাম, না। তবে আমার খুব জানার ইচ্ছা ঢাকা শহরে এতো জায়গা থাকতে আপনি কেনাকাটা করার জন্য কাঁটাবন কেন যাবেন। আর কাঁটাবন থেকে কিনবেনই বা কী? প্রতিবেশী বললেন, কাঁটাবন থেকে কিনব কাঁটা সরানোর জিনিস। এবার আমার চোখ কপাল ছাড়িয়ে মাথায় ওঠার জোগাড়, কাঁটা সরানোর জিনিস! এটা আবার কী? প্রতিবেশী বললেন, বিড়াল, বিড়াল। কেন, আপনি জানেন না বিড়ালের পা ধরলে গলার কাঁটা সরে যায়? পয়লা বৈশাখে আমরা ভরপুর ইলিশ খাব। যদি কোনো কারণে গলায় কাঁটা আটকে যায়, তাহলে যাতে বিড়ালের পা ধরে কাঁটাটা সরাতে পারি, তাই ভাবলাম জনপ্রতি একটা করে বিড়াল কিনে নিয়ে আসি। বুদ্ধিটা ভালো হয়নি? আমি বললাম, বুদ্ধি ভালোই হয়েছে। তবে বাসায় বিড়াল আনার পর ইলিশগুলো একটু সাবধানে রাখবেন। নইলে দেখা যাবে আপনারা ইলিশ খেয়ে পয়লা বৈশাখ উদযাপনের আগেই বিড়াল পয়লা বৈশাখ উদযাপন করে বসে আছে। আজকাল বিষয়টা এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, পয়লা বৈশাখ মানেই বিস্তর ফ্যাশন। আমার এক ফ্যাশনেবল ভাবিকে জিজ্ঞেস করলাম, এবার পয়লা বৈশাখে কী ধরনের ফ্যাশন করবেন? ভাবি বললেন, এবার সবকিছু হবে মাটির। মানে যা কিছু পরব, প্রতিটা জিনিস মাটির। যেমন মাটির চুড়ি, মাটির দুল, মাটির টিপ। এবার পাশ থেকে আমার ভাই মানে ভাবির হাজব্যান্ড বলে উঠলেন, ভাগ্যিস, মাটির শাড়ি পরার সিদ্ধান্ত নাওনি। মাটির শাড়ি পরলে সেই শাড়ির ভারে তোমার আর বাসা থেকে বের হতে হতো না। আমি ভাবলাম ভাইয়ের ইয়ার্কিতে ভাবি বুঝি রাগ করবেন। কিন্তু তিনি রাগ তো করলেনই না, আমাকে ইশারায় আড়ালে ডেকে নিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, আচ্ছা, বাজারে মাটির শাড়ি এসেছে নাকি? দাম কী রকম? পয়লা বৈশাখে একদিনের বাঙালি সাজার প্রবণতা আমাদের মধ্যে আগেও ছিল, এখনো আছে। এই বিষয়টা নিয়ে সেদিন বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলছিলাম। এক বন্ধু বলল, একদিনের বাঙালি সাজার মধ্যে কোনো রিস্ক নেই। রোজ বাঙালি সাজতে গেলে রিস্ক আছে। চাকরি হারিয়ে বেকার হওয়ার রিস্ক। আমি বললাম, রিস্ক কেন থাকবে? বন্ধু বলল, আমি গতবার বৈশাখ পালনের পর ভাবলাম সবসময় বাঙালি সাজে থাকব। ব্যস, পরদিনই চলে গেল আমার চাকরিটা। আসলে হয়েছে কী, আমি লুঙ্গি পরে অফিসে গিয়েছিলাম। আমার এক ছোটভাই বলল, ভাই, পয়লা বৈশাখ এমন একটা উৎসবের নাম, যে উৎসবের দিনে আমার প্রেমিকা মোটেই লেট করে না। সময় মতো চলে আসে আমার সঙ্গে দেখা করার জন্য। আমি বললাম, কীভাবে সম্ভব? সে বলল. পয়লা বৈশাখে তার মেকাপ নিতে হয় না? আমি অবাক হয়ে বললাম, তাও কি হয়? সে বলল, হয় ভাই, হয়। পয়লা বৈশাখে তাকে মেকাপ নিতে হয় না এই জন্য, যেহেতু মুখোশ পরার একটা সিস্টেম আছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর