সোমবার, ১৭ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা

বন্ধু তুই লোকাল বাস...

সিটিং সার্ভিসের স্টিকার লাগিয়ে চলা লোকাল বাসগুলো সুবিধা বুঝে যাত্রী তুলত। কিন্তু ঘাড় ধইরা নামাত না। কারণ, বাসে ওঠার পর ঘাড়ে ধরে বাড়তি ভাড়া আদায় করে নিত

তানভীর আহমেদ

বন্ধু তুই লোকাল বাস...

♦ কার্টুন : কাওছার মাহমুদ ♦ আইডিয়া ও ডায়ালগ : তানভীর আহমেদ

শিরোনামটা গানের কথা থেকে নেওয়া। ‘বন্ধু তুই লোকাল বাস, আদর কইরা ঘরে তুলোছ, ঘাড় ধইরা নামাছ’।

শহরের রাজপথ দাপিয়ে বেড়ানো লোকাল বাসের (অনেকে মুড়ির টিন বলে চেনেন) দিন ফিরছে আবার। সিটিং সার্ভিসের স্টিকার লাগিয়ে চলা লোকাল বাসগুলো বেশ ভাবসাব নিয়ে রাস্তায় চলত। এরা সুবিধা বুঝে যাত্রী তুলত। কিন্তু ঘাড় ধইরা নামাত না। কারণ, বাসে ওঠার পর ঘাড়ে ধরে বাড়তি ভাড়া আদায় করে নিত। সার্ভিসের মান লোকাল বাসের মতো হলেও বাড়তি ভাড়া আদায়ের সময় এদের মান সাঁই করে সিটিং সার্ভিস স্টিকারে গিয়ে ঠেকত। বাসের যাত্রীরা তাই সিটিং সার্ভিসকে আদর করে ডাকত ‘চিটিং সার্ভিস’। কিন্তু বেশি আদর যে খুব ভালো ফল বয়ে আনে না সেটাই দেখা গেল। সিটিং সার্ভিস বন্ধ করার চেষ্টা চলছে। যেসব লোকাল বাস সিটিং বাসের স্টিকার নিয়ে ঘুরত তাদের প্রেস্টিজ আপাতত পাংচার বলা যায়।

এই যে লোকাল বাসের সিটিং সার্ভিসের মুখোশ পরে ঘুরে বেড়ানো— সেটা তো বেড়িয়ে আসলই। এর কারণ কী? বাড়তি ভাড়া। সিটিং সার্ভিস চিটিং সার্ভিস হয়ে উঠলে যা হয় আর কি।

একটা ঘটনা শোনেন তবে— আমার এক বন্ধু বিয়ে করবে। ঘটক এসে তাদের বাসায় বিয়ে উপযুক্ত পাত্রীর ছবি-বায়োডাটা নিয়ে বসে থাকত। বন্ধু খুব আগ্রহ নিয়ে ছবি দেখত। অফিস থেকে ফিরে সব ব্যাচেলর ছেলেপেলেরা তাকে ঘিরে বসত। সে আজকে কোনো মেয়েকে দেখতে গিয়েছিল, তারা কী খাইয়েছিল— সে গল্প করত। ধীরে ধীরে বিয়ের পাত্রী দেখা ছেলে হিসেবে নিজ এলাকা তো বটেই, আশপাশের এলাকাতেও সে বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করে ফেলল। তার জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে একটি মহল অবশ্য তার নাম শুনেই জানিয়ে দিত— মেয়ে বিয়ে দেবে না। যাই হোক, সবাই হা করে বন্ধুটির কাছে ‘মেয়ে দেখার’ গল্প শুনতাম। আর আফসোস করতাম, ইশ আমাদের বাবা-মা এত বোকা কেন? কেন বিয়ের জন্য চাপ দেয় না, কেন ঘটক ডাকে না, কী অপরাধ আমাদের?

কোনো এক সন্ধ্যায় মহল্লার চায়ের দোকানে বন্ধুটির জন্য অপেক্ষা করছি। তার আসার নাম নেই। এলাকায় জনশ্রুতি রয়েছে, সে আজ পাত্রী দেখতে গেছে। এদিকে তার মুখে বিয়ের পাত্রী দেখার গল্প শুনে শুনে আমাদের অবস্থা শোচনীয়। যেদিন সেই গল্প না শুনে বাসায় যাই সেদিন ঘুম আসে না। উসখুস লাগে। খিদে পায় না। কেমন মনমরা লাগে সব। এমনকি ফেসবুকে লাইক দেওয়ার গতিও কমে যায়।

সন্ধ্যা বেড়ে রাত হচ্ছে। চায়ের দোকানে বসে নয় জন মিলে তিন-নং-সাতাশ গ্লাস ফ্রি পানি খেয়ে ফেলেছি। চা দোকানদার আর টিকতে না পেরে বলল, ভাইয়েরা মাগনা চা খান তবু এমনে পানি খাইলে চায়ের পানি শর্ট পইড়া যাইব।

তার বিষণ্ন মুখ দেখে আমাদের খুব মায়া লাগে। আমরা নয় জন মিলে দেড় কাপ চা অর্ডার করি। বাকি অর্ধেক কাপ বিয়ের পাত্রী দেখা বন্ধুর জন্য সংরক্ষণ করতে বলি।

একসময় অপেক্ষার পালা শেষ হলো। সেই বন্ধুটি বিষণ্ন মুখে আমাদের কাছে এগিয়ে এলো। তার মুখ দেখে বললাম, কী হইছে? সে বলল, তেমন কিছু না। ঘটক ব্যাটায় একটু গ্যাঞ্জাম কইরা দিছে আর কি। আমরা বলি, কী গ্যাঞ্জাম? বন্ধুটি খেপে গিয়ে বলল, আরে, ঘটক ব্যাটায় মেয়ে পক্ষরে কইছিল, ছেলে দশটা সিটিং সার্ভিস বাসের মালিক। কিন্তু সিটিং সার্ভিস তো বন্ধ কইরা দিছে। সবই তো লোকাল— মেয়ে পক্ষ তো সব জাইনা গেল রে...

তার বিষণ্নতা আমাদেরও ছুঁয়ে গেল। কারণ আমরা ওই গানটা জানি— ‘বন্ধু তুই লোকাল বাস, আদর কইরা ঘরে তুলোছ, ঘাড় ধইরা নামাছ...’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর