সোমবার, ১৫ মে, ২০১৭ ০০:০০ টা

ইঁদুরের কাজ ইঁদুর করেছে...

ইকবাল খন্দকার

ইঁদুরের কাজ ইঁদুর করেছে...

কার্টুন : কাওছার মাহমুদ ► আইডিয়া ও ডায়ালগ : তানভীর আহমেদ

ভাগ্যিস ইঁদুরেরা পত্রপত্রিকা পড়ে না। যদি পড়ত, তাহলে জানতে পারত তাদের উপর কত বড় দোষটাই না চাপানো হয়েছে!

            

উদোর পিন্ডি উদোর ঘাড়েই থাকা উচিত। কিন্তু উচিতের পরিবর্তে অনুচিত কাজটাই বেশি হয়। দেখা যায়, উদোর পিণ্ডি চলে যাচ্ছে অমুক তমুকের ঘাড়ে। যেমন হাওর পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে উদোর পিণ্ডি চলে গেছে ইঁদুর আর প্রকৃতির ঘাড়ে। খানিকটা অবশ্য অসহায় কৃষকদের ঘাড়েও গেছে। আর সঠিক জায়গা থেকে ভুল জায়গায় পিণ্ডি স্থানান্তরের এই কাজটি করে যাচ্ছে পানি উন্নয়ন বোর্ড—পাউবো। প্রাকৃতিক দুর্যোগ থাকতেই পারে। আবার সেই দুর্যোগ মোকাবিলার বিভিন্ন পন্থাও আছে। সেই পন্থাগুলো বের করতে হয় ঘিলু খাটিয়ে। কিন্তু দোষ চাপানো হয়েছে প্রকৃতির ঘাড়ে। অনেকটা আমার সেই ‘যুক্তিবাদী’ বন্ধুর মতো। কিছুদিন আগে তাকে নিয়ে এক জায়গায় যাচ্ছিলাম। হঠাৎ বজ্রসহ বৃষ্টিপাত শুরু হলো। আমি বললাম, বজ্রপাত থেকে বাঁচার কিছু উপায় আছে। আয় সেই অনুযায়ী কাজ করি। বন্ধু বলল, বজ্রপাত হচ্ছে একটা প্রাকৃতিক দুর্যোগ। এটা থেকে বাঁচার জন্য কোনো ব্যবস্থা না নেওয়াই ভালো। বন্ধুর কথায় আমি আকাশ থেকে পড়ে বললাম, কেন? বন্ধু বলল, যে জিনিসটা প্রকৃতির পক্ষ থেকে আসছে, তুই যদি সেটা ঠেকানোর ব্যবস্থা করিস বা সেটা থেকে বাঁচার ধান্ধা করিস, তাহলে প্রকৃতি তোর ওপর নাখোশ হবে না? আর প্রকৃতি নাখোশ হওয়া মানে বুঝিস? পাউবোর যুক্তিটাও খানিকটা এই টাইপেরই।

একবার আমাদের পাশের বাড়ির লোকটার টাকার থলে চুরি গেল। তদন্তে ধরা পড়ল চুরির সঙ্গে জড়িত স্বয়ং এই বাড়ির বড় ছেলে। বড়ছেলেকে শালিসে ডাকা হলো। সে যখন দেখল বাঁচার উপায় নেই, তখন সে দোষ চাপিয়ে বসল তার ছোটভাইয়ের উপর। তার দোষ চাপানোর স্টাইলটা ছিল এমন, ছোটভাইয়ের নাক ডাকানোর শব্দে আমি ঘুমাতে পারি না। তাই টাকার থলেটা আনলাম কানে চাপা দেওয়ার জন্য। যাতে নাক ডাকানোর শব্দ আমার কানে না ঢোকে। সে যদি জোরে জোরে নাক না ডাকাত, তাহলে টাকার থলেটা আমি চুরি করতাম না। পাউবো আরও যাকে অভিযুক্ত করেছে, তার নাম ইঁদুর। ইঁদুর নাকি বাঁধ কেটে ফেলেছে। ভাগ্যিস ইঁদুরেরা পত্রপত্রিকা পড়ে না। যদি পড়ত, তাহলে জানতে পারত তাদের ওপর কত বড় দোষটাই না চাপানো হয়েছে। তারা তখন করত কী, লজ্জায়, অপমানে নিজেরাই দোকানে যেত এবং ইঁদুরের বিষ কিনে এনে খেয়ে আত্মহত্যা করত। আজকে যদি হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা বেঁচে থাকতেন, তাহলে হয়তো পাউবো তার নামে মামলা করে দিত। বলত, বেটা, নদীর পানিতে ফেলে ইঁদুর মেরেছিস, কিন্তু সব মারলি না কেন। কে বাঁধ কাটল? আর মামলা খাওয়ার পর বাঁশিওয়ালা সাহেব যা করতেন তা হচ্ছে, নিজেই গিয়ে হাওরের পানিতে নেমে পড়তেন এবং নিজেকে নিজেই চুবিয়ে মেরে ফেলতেন। কারণ, এমন হাস্যকর অভিযোগের পর দুনিয়ায় বেঁচে থাকার কোনো মানে হয় না।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর