সোমবার, ২৯ মে, ২০১৭ ০০:০০ টা

১৫% খাজুরে আলাপ

ইকবাল খন্দকার

১৫% খাজুরে আলাপ

কার্টুন : কাওছার মাহমুদ ♦ আইডিয়া ও ডায়ালগ : তানভীর আহমেদ

এই যে ভ্যাটের ভয়ে অতিরিক্ত জিনিস কিনে রাখার জন্য আরেকটা বাসা ভাড়া নিতে চাচ্ছেন, এতে খাজনার চেয়ে বাজনা বেশি হয়ে যাচ্ছে না? ভদ্রলোক বললেন, তবু ভ্যাটের যন্ত্রণা থেকে তো বাঁচা গেল...

 

আমার এক বড় ভাই একটু গবেষক ক্যাটাগরির মানুষ। বিভিন্ন জিনিস নিয়ে তিনি গবেষণা করতে পছন্দ করেন। কথায় কথায় তিনি বললেন, আজকাল আমি বাংলা ভাষার বিভিন্ন অক্ষর নিয়ে গবেষণা করছি। গবেষণা করে যেটা পেলাম, সেটা হচ্ছে বাংলা বর্ণমালায় বিশেষ একটা অক্ষর আছে, যা দেখলেই ভয়ে কলিজা শুকিয়ে যায়। কারণ কী? কারণ হচ্ছে, এই অক্ষরটা দিয়ে যেসব শব্দ গঠিত হয়, কোনোটাই স্বাভাবিক না। প্রত্যেকটাই আতঙ্কিত হওয়ার মতো। আমি বললাম, অক্ষরটা কী, সেটা যদি একটু বলেন, ভালো হয়। আরও ভালো হয় এই অক্ষরটা যদি আতঙ্কিত হওয়ার মতো কী কী শব্দ গঠিত হয়, সেটা যদি একটু বলেন। বড় ভাই বললেন, অক্ষরটা হচ্ছে ‘ভ’। আর এই ‘ভ’ দিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার মতো যেসব শব্দ গঠিত হয়, সেগুলো হচ্ছে— ভূত, ভয়াবহ, ভয়, ভয়ানক, ভয়ঙ্কর, ভ্যাট ইত্যাদি। বড় ভাইয়ের কথার মর্মার্থ বোঝার চেষ্টা করলাম। এবং সহজেই বুঝে গেলাম যে, ‘ভ্যাট’ শব্দটা ভয় পাওয়ার মতোই একটা শব্দ। আর কেন ভয় পাওয়ার মতো, সেটা আমরা যেমন জানি, আপনারাও তেমন জানেন। একইভাবে আপনাদের পাশের বাসার লোকজনও জানে। ভ্যাট শব্দটা আগের চেয়ে আরও বেশি ভয়ঙ্কর হয়ে গেছে আজকাল। কারণ, জানা গেছে আসছে বাজেটে নাকি ভ্যাটের পরিমাণ বাড়ানো হবে। এই যে বর্ধিত ভ্যাটের ভয়, এই ভয় কতটা প্রকট আকার ধারণ করেছে, আপনি চিন্তাও করতে পারবেন না। আপনার চিন্তা করার সুবিধার্থে অবশ্য কিছু ঘটনা বর্ণনা করা যেতে পারে। আমার পাশের ফ্ল্যাটের ভদ্রলোক জিজ্ঞেস করলেন, আপনারা কি দুয়েক মাসের মধ্যে বাসা ছাড়বেন? আমি অবাক হয়ে বললাম, কেন বলেন তো? ভদ্রলোক বললেন, না, মানে আপনারা যদি বাসাটা ছাড়তেন, তাহলে আমি ভাড়া নিতাম আরকি। আমি বললাম, আপনি এই বাসা ভাড়া নেবেন, কিন্তু আপনার বাসায় থাকবে কে? ভদ্রলোক বললেন, আরে দুটোই থাকবে। মানে আমি এখন যেটায় থাকছি, সেটাও থাকবে, আর আপনি যদি আপনারটা ছাড়েন, তাহলে এটাও থাকবে। আমি বললাম, দুই বাসা দিয়ে আপনি কী করবেন? ভদ্রলোক বললেন, আসলে হয়েছে কি, ভ্যাট বাড়ানো হবে শুনে আমি নিত্যপ্রয়োজনীয় বেশ কিছু জিনিস বেশি বেশি করে কিনে ফেলেছি। এখন এই জিনিসগুলো বাসায় ধরছে না। তাই আরেকটা বাসা ভাড়া নিতে চাচ্ছি। একটাতে আমরা থাকব, আরেকটাকে গোডাউন বানাব। আমি বললাম, এই যে ভ্যাটের ভয়ে অতিরিক্ত জিনিস কিনে রাখার জন্য আরেকটা বাসা ভাড়া নিতে চাচ্ছেন, এতে খাজনার চেয়ে বাজনা বেশি হয়ে যাচ্ছে না? মানে জিনিসপত্রের দামটা অনেক বেশি পড়ে যাচ্ছে না? ভদ্রলোক বললেন, তবু ভ্যাটের যন্ত্রণা থেকে তো বাঁচা গেল! হ্যাঁ, ভ্যাটের যন্ত্রণা থেকে বাঁচার জন্য যে কেউ যে কোনো পদ্ধতি অবলম্বন করতেই পারেন। কিন্তু এসব পদ্ধতি হিতে বিপরীত কিছু করে কিনা, মানে জিনিপত্রের দাম অস্বাভাবিকরকম বাড়ানোর ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে কিনা, সেদিকে খুব কম মানুষেরই নজর আছে। আর নজর না থাকার কারণে যেটি হয়, ভ্যাট বাড়ানো হবে, এমন একটা খবর চাউর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হু-হু, হা হা করে জিনিপত্রের দাম বেড়ে যায়। আমাদের গ্রামে ভীতু এক লোক ছিল। সে একদিন দেখল রাস্তায় একটা সাপ পড়ে আছে। সে সাপের ভয়ে করল কী, রাস্তা থেকে নেমে বিকল্প পথে বাড়ি চলে এলো। বিকল্প পথটা কী জানেন? পানি পথ। মানে বিলের পানি ভেঙে সে চলে এলো বাড়িতে। অথচ সে জানে বিলে সাপের আখড়া। সে রাস্তার এক সাপের ভয়ে বিলের একশ সাপের মুখের ওপর দিয়ে বাড়ি এসেছে। আমাদের ব্যাপারটাও তাই। ভ্যাটের ভয়ে আমরা যা যা করি, ভ্যাট জিনিসটা কিন্তু ততটা ভয়ের না। হ্যাঁ, ভ্যাটের পরিমাণটা যদি বেশি হয় তাহলে ভয় একটু লাগতেই পারে। কিন্তু এই ভয়ে মালামাল ‘স্টক’ করা, উঁহু, মোটেই ঠিক না। আমার এক চাচা বললেন—ভ্যাটের ভয়ে আমি ‘স্টক’ করি না। তবে ‘স্ট্রোক’ করতে পারি যেকোনো সময়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর