বন্ধু বলল, আমার কাছে একাধিক ভাঙারিওয়ালার ফোন নাম্বার আছে। যদি গাড়ির বডি রাস্তায় খুলে-টুলে যায়, ভাঙারিওয়ালাকে ফোন করব এবং নিজের মনে করে বিক্রি করে এই টাকা দিয়ে বাড়িতে মিষ্টি কিনে নিয়ে চলে যাব। আমি খুশি, পরিবারও খুশি
আমার এক বন্ধু বলল, যারা বাংলা শব্দ তৈরি করেছে, তারা আসলেই বুদ্ধিমান। আমি বললাম, হঠাৎ এই কথা? বন্ধু বলল, আসলে হয়েছে কী, ঈদের সিজনে ‘ঘরমুখো’ বলে একটা শব্দ খুব শোনা যায় না? শব্দটা যারা আবিষ্কার করেছে, তাদের বুদ্ধির তারিফ করতেই হয়। আমি খুব নিখুঁতভাবে চিন্তা করে দেখেছি, ঈদে যারা বাড়ি যায়, তারা আসলেই ঘরমুখো। আসলে বাড়ি যাওয়ার জন্য এত টেনশন আর এত চাপ সহ্য করতে হয়, ঘরমুখো হওয়া ছাড়া উপায় থাকে না। আমি বললাম—টেনশন আর চাপের কারণে ‘ঘরমুখো’ হওয়ার যে বিষয়টা, এটা একটু ব্যাখ্যার দাবি রাখে। বন্ধু ব্যাখ্যা করল, আমি খেয়াল করেছি, এমনিতে মানুষের মুখের শেপ নরমাল। নরমাল বলতে গোলগাল আরকি। কিন্তু ঈদে বাড়ি যাওয়ার জন্য যে পেরেশানিটা সহ্য করতে হয়, এই পেরেশানির কারণে মানুষ হয়ে যায় ঘুরমুখো। ঘরমুখো বলতে লম্বা মুখ আরকি। ‘এল’ সাইজের ঘরগুলো লম্বা না? আবার বেড়ার ঘরগুলো কেমন ভাঙাচোরা। পেরেশানির কারণে মানুষের মুখ এমন লম্বা আর ভাঙাচোরা হয়ে যায় তো, তাই তাদের ক্ষেত্রে ‘ঘরমুখো’ কথাটা প্রযোজ্য। আমি বললাম, তোর কথার সারমর্ম হচ্ছে, ঈদে বাড়ি যাওয়াটা খুব কষ্টের, এই তো? বন্ধু শব্দ করে হেসে বলল, এই কথাটা বুঝতে তোর এত সময় লাগল? আরে বাপুরে, ঈদে মানুষ বাড়ি যায় নাড়ির টানে। কিন্তু রাস্তাঘাটে এত বেশি ভোগান্তি পোহাতে হয় যে, নাড়ি-ভুঁড়ি আর নাড়ি-ভুঁড়ির জায়গায় থাকে না। পারলে দীর্ঘ লাফ দিয়ে বাইরে বের হয়ে আসতে চায়। আমি এই বছর একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। দড়ি নিয়ে গাড়িতে উঠব। আমি ভয় পেয়ে বললাম, দড়ি কেন? বন্ধু বলল, কেন আবার। শুনলাম রাস্তাঘাট নাকি ভাঙা। পাবলিকের গালিগালাজ থেকে বাঁচতে দড়ি সঙ্গে রাখা খুবই জরুরি। আমি বললাম, তোর কথার আগামাথা তো কিছুই বুঝতে পারছি না। একটু বুঝিয়ে বল। বন্ধু বলল, আসলে হয়েছে কী, গতবার যখন ঈদে বাড়ি গিয়েছিলাম, তখনো রাস্তাঘাট ভাঙা ছিল। যেই গাড়ির চাকা গর্তে পড়ত, অমনি পুরো গাড়ি এমনভাবে লাফিয়ে উঠত যে, অনেকেই সিট থেকে পড়ে যেত। অনেকে ঝাঁকুনির চোটে এক সিট থেকে চলে যেত আরেক সিটে। আমি করলাম কী, এমন এক ঝাঁকুনি খেলাম যে, নিজের সিট থেকে চলে গেলাম মহিলা সিটে। মহিলা সিটে বসার অপরাধে পাবলিক শুরু করল গালাগাল। এইবার যাতে ঝাঁকুনি খেয়ে মহিলা সিটে যেতে না হয়, এই জন্য দড়ি নিয়ে বাসে উঠব এবং শক্ত করে বডিটা বেঁধে রাখব সিটের সঙ্গে। নো নড়নচড়ন। আমি বললাম, দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখলে তোর বডিটা না হয় স্থির থাকল। কিন্তু গাড়ির বডি যে ঠিক থাকবে, এই গ্যারান্টি তোকে কে দিল? তুই কি জানিস ঈদে বাড়তি ইনকামের জন্য অনেক গাড়ি-মালিকই পুরনো আর ভাঙাচোরা গাড়িগুলোকে রংটং করিয়ে রাস্তায় নামায়? রং করানোর কারণে গাড়িগুলোকে নতুন মনে হলেও বডি আর ইঞ্জিন কিন্তু যাচ্ছেতাই। সুতরাং ভাঙা রাস্তায় ঝাঁকুনি খেলে এইসব বডি আর বডি থাকবে না। হয়ে যাবে ডেডবডি। তখন কী করবি? বন্ধু বলল, আমার কাছে একাধিক ভাঙারিওয়ালার ফোন নাম্বার আছে। যদি গাড়ির বডি রাস্তায় খুলে-টুলে যায়, ভাঙারিওয়ালাকে ফোন করব এবং নিজের মনে করে বিক্রি করে এই টাকা দিয়ে বাড়িতে মিষ্টি কিনে নিয়ে চলে যাব। আমি খুশি, পরিবারও খুশি। আমি বললাম, তুই আর তোর পরিবার খুশি হলেও আমি খুশি হতে পারছি না জ্যামের কথা চিন্তা করে। তুই কি জানিস ঈদে বাড়ি যাওয়ার সময় কত জ্যাম পোহাতে হয়? বন্ধু বলল, জ্যাম নিয়ে সবাই চিন্তা করলেও আমি চিন্তা করি না। আমার প্রচুর আত্মীয়-স্বজন তো! আমি বললাম, জ্যামের সঙ্গে আত্মীয়-স্বজনের কী সম্পর্ক? বন্ধু বলল, সম্পর্ক আছে। ঈদের সময় বাড়ি যাওয়ার পথে জ্যামে পড়তে হয় দেখেই আমি করেছি কী, রাস্তার দুই পাশের অনেকের সঙ্গেই আত্মীয়তার সম্পর্ক গড়ে তুলেছি। প্রতিবার বাড়ি যাওয়ার সময় যখন গাড়ি ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকে, তখন আমি গাড়ি থেকে নেমে রাস্তার পাশের
আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে আড্ডা দিই, গিফট বিতরণ করি। সন্ধ্যার মৃদু খানাপিনাও করি। ব্যস, আমার ঈদের পরের বেড়ানোটা ঈদের আগেই হয়ে যায়।