সোমবার, ১৭ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

সুপার হিরোদের রাজধানী ঢাকা

ইশতিয়াক আহমেদ

পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মানুষ ট্রেনের সিগন্যালে আধা মাইল দূর থেকে থেমে যায়। এ শহরের মানুষ শেষ রক্তবিন্দু দিয়েও ট্রেন আসার আগে ওপারে যাওয়ার চেষ্টা করে।

তারা এতই ব্যস্ত যে ট্রেন আসার শেষ মুহূর্তে সুপারহিরোদের মতো ট্রেনলাইন পার হয়ে গিয়ে ওপারে দাঁড়িয়ে ট্রেনের যাওয়া দেখে।

আমার এতে আশা মেটেনি। আমি ঢাকার রহস্য সন্ধানে আরও নিমজ্জিত থেকেছি দিনের পর দিন।

তবে আমেরিকা থেকে আসা আমার  পাঁচ বছরের ভাগ্নের সাধ হয়তো একেবারে মিটে গিয়েছিল। যে ঢাকার ট্রেনের ওপরে ছোটাছুটি করতে থাকা টোকাই শিশুকে দেখে চিৎকার করে উঠেছিল, ওই যে স্পাইডারম্যান। হয়তো আমেরিকায় ফিরে গিয়ে সে তার বন্ধুদের বলেছিল, আমাদের দেশে অসংখ্য স্পাইডারম্যান বাস্তবেই দেখা যায়।

 

ঢাকায় না এলে আমার গুলিস্তানকে জানা হতো না। জানা হতো না এখানেও অসংখ্য সুপার হিরো থাকেন। বহুমাত্রিক মানুষের আশ্রয়স্থল এ গুলিস্তান। যাদের অনেক মানুষ বাস ধরার জন্য অলটাইম দৌড়ের ওপর থাকে। আর কিছু মানুষ থাকে খোঁজার ওপর, আচ্ছা ভাই ওমুক জায়গার বাসটা কোনখান থেইকা ছাড়ে?

এ শ্রেণি হচ্ছে সবচেয়ে ঝামেলায় থাকা অংশ। যারা দীর্ঘক্ষণ হেঁটে হেঁটেও নির্দিষ্ট গন্তব্যের বাস ধরতে পারে না। কারণ তারা যাদেরই জিজ্ঞাসা করে তারা সবাই খুব কনফিডেন্টলি ভুল উত্তর দেয়, ওই যে ওদিক।

 

ঢাকার গুলিস্তান না দেখলে জানতে পারবেন না, পৃথিবী এত সস্তায় বিক্রি হয়ে যাচ্ছে কীভাবে।

আপনি যে ব্লেজার পরেন সেটাও যেমন গুলিস্তানে পাবেন, আপনি ট্রাম্পকেও যে ব্লেজার পরতে দেখেন তাও পাবেন গুলিস্তানে।

তবে সতর্কতা, আপনি যে বস্তুর দাম শুনলেন অনেক টাকা। না কিনলে সেটার ধারে-কাছে গিয়ে দাম বলতে যাবেন না। একবার আমার এক বড় ভাই দাম বলে পড়েছিল বিপদে। যার কারণে তার ঢাকায় আসার সাধ গিয়েছিল মিটে।

 

একটা সাউন্ডবক্সের দাম জানতে চেয়েছিল আমার ভাই। বিক্রেতা বলল, ১৫শ।

আমার ভাই রাস্তার জিনিস কিনবে না বলে বদ্ধপরিকর। তবুও সে মজা করে বলেছিল, ১৫০ টাকা দেব।

দোকানি খুব স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বলল, দ্যান টেকা দ্যান। লইয়া যান।

আমার ভাই সেদিন ১৫০ টাকা বাঁচাতে পালিয়ে বেঁচেছিল।

 

ঢাকায় আগে এক মেয়র ছিলেন এখন দুইজন। যদি হও সুজন, তেঁতুল পাতায় দুজন থাকতে পারে। আর এটা তো মেগাসিটি ঢাকা। দুজন আরামেই থাকতে পারেন। তাদের সঙ্গে থাকে মশারা এবং পানিরা। সবার জন্য নিরাপদ শহর ঢাকা। এতদঞ্চলের ভেনিস। কোথাও নৌকা চলে, কোথাও বাস। যার যা খুশি সে বাহনে চড়তে পারে এ শহরবাসী।

শুধু গাড়ি আর উবারের শহর নয়, মাঝি এবং কুবেরের শহরও ঢাকা।

যে শহর আপনাকে মোটা দাগে কোনো সমস্যা দেয় না। চিকন করে চিকুনগুনিয়ায় বেঁধে ফেলে। দুনিয়ায় এসে কী ভুল করেছি তা এ শহরবাসী বোঝে চিকুনগুনিয়ায় পড়ে।

 

এ এক আজব শহর। কেউ কেউ জাদুর শহর বলে। কেন বলে জানি না। তবে বুঝি, হয়তো শহরে সবাই জাদুকর হয়ে যায় এখানে এলে। যেমন, এক লোকের কথা জানি, যে ঢাকায় এসেছে পকেটমারের গল্প শুনতে। সে শুনে এসেছে ঢাকার গুলিস্তানের পকেটমার নাকি বিশ্বসেরা। 

সে পকেটে পাঁচশ টাকার একটা নোট নিয়ে ঘুরছে। এক ঘণ্টা পর চেক করে দেখে নিজের পকেট। ঠিক আছে। দুই ঘণ্টা পর চেক। না ঠিক আছে। নিচ্ছে না। টাকার জায়গায় টাকা আছেই। অবশেষ বিকালবেলা হতাশা নিয়ে এক জায়গায় চা খেতে দাঁড়িয়ে পাশে দাঁড়ানো এক ভদ্রলোককে বলল, ভাই গুলিস্তানের পকেটমারদের এত কথা শুনেছি। কই দেখলাম না তো কিছুই। পকেটের টাকা পকেটেই আছে।

 

পাশের ভদ্রলোকটি জবাব দিল, পকেটে জাল টাকা নিয়ে ঘুরলে কে নেবে?

সর্বশেষ খবর