সোমবার, ২১ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

টিকিট নাইরে...

ইকবাল খন্দকার

টিকিট নাইরে...

কার্টুন : কাওছার মাহমুদ ► আইডিয়া ও ডায়ালগ : তানভীর আহমেদ

আমার এক বন্ধু বলল, আমাদের সবারই উচিত স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়া। নিজের শরীরকে সুস্থ-সবল রাখা। আমি বললাম, হঠাৎ স্বাস্থ্যবিষয়ক বয়ান দিচ্ছিস যে? কারণ কী? বন্ধু আমার কথার সরাসরি উত্তর না দিয়ে বলল, আমরা চাকরিকে বলি সোনার হরিণ। তবে এই চাকরি পাওয়া কিন্তু খুব সোজা। যদি মামার জোর থাকে, তাহলে গুলি মিস হতে পারে, মাগার চাকরি মিস হবে না। তার মানে সোনার হরিণ হয়ে যায় প্লাস্টিকের হরিণের মতো সহজলভ্য, যদি থাকে মামার জোর। কিন্তু ঈদের সিজনের বাস-ট্রেনের টিকিট পেতে হলে মামার জোর দিয়ে হবে না। কী লাগবে? লাগবে পেশির জোর। কারণ, লাইনে দাঁড়ালে ধাক্কাধাক্কি হতেই পারে। এই ধাক্কাধাক্কিতে সক্ষমতার প্রমাণ দিয়ে টিকিট নিয়ে বাড়ি ফিরতে হলে সুস্থ-সবল শরীরের কোনো বিকল্প নেই। তাই শুধু পুষ্টিকর খাবার খেয়ে শরীরের যত্ন নিলেই চলবে না, নিয়মিত জিম করতে হবে। আমার এক প্রতিবেশী বললেন, ভাবছি জ্যোতিষরাজের কাছ থেকে একবার ঘুরে আসব। উনি যদি আমার হাতের রেখা-টেকা দেখার পর একটা পাথর দেন, আশা করি দ্বিতীয়বার সুফল পাব। আমি মশকরা করলাম, পাথরের জন্য জ্যোতিষরাজের কাছে যাওয়ার কী দরকার? পাথর তো বাসার কাছেই আছে। দেখছেন না রাস্তা নির্মাণের কাজে পাথর ব্যবহার করা হচ্ছে! প্রতিবেশী আমাকে মৃদু ধমক দিয়ে বললেন, পাথর নিয়ে মশকরা করবেন না। এই পাথরের গুণে একবার যেহেতু সুফল পেয়েছি, অতএব আবারও অবশ্যই পাব। আমি জানতে চাইলাম, এর আগে পাথরের গুণে কী ধরনের সুফল পেয়েছেন? আর এবার কী ধরনের সুফল আশা করছেন? প্রতিবেশী বললেন, এর আগে আমি লটারির টিকিট জিতেছিলাম। এবার আশা করছি ট্রেনের টিকিট জিততে পারব। আমি বললাম, লটারির টিকিট জেতা সহজ হলেও ট্রেনের টিকিট জেতা সাংঘাতিক কঠিন। অতএব এই টিকিট পেতে হলে আরও অনেক দামি পাথর লাগবে। সুতরাং টাকার পরিমাণটা বাড়িয়ে নিয়ে যাইয়েন। আমার এক ছোটভাই বলল, ছোটবেলায় অনেক কথাই শুনেছি। বিশ্বাস করেছি। কিন্তু বড় হওয়ার পর বুঝেছি যা শুনেছি বা বিশ্বাস করেছি, সব সত্য না। এর মধ্যে অনেক মিথ্যা আছে। আমি বললাম, অনেক বড় ভূমিকা দিয়ে ফেলেছিস। এবার মূল কথাটা একটু বলে ফেল। ছোটভাই বলল, ছোটবেলায় শুনেছি টাকা দিলে নাকি বাঘের চোখও মেলে। জি না, কথাটা ঠিক না। টাকা দিলেই সব মেলে না। যেমন টাকা দিলে আপনি যে টিকিট পাবেনই, এমন কোনো কথা নেই। পেতেও পারেন, নাও পেতে পারেন। আমার এক চাচা বললেন, মানুষের ব্যাপারে মানুষ কেন যে অপপ্রচার চালায়, বুঝি না। যেমন অনেকেই বলে আজকাল নাকি মানুষ বেলাইনে চলে গেছে। এটা অবশ্যই একটা বড় অপপ্রচারণা। কারণ, ঈদের সময় টিকিটের জন্য সবাই লাইনে দাঁড়ায়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা ‘লাইনে’ থাকে। তাহলে ‘বেলাইনে’ গেল ক্যামনে? আমার বাসার পাশের মুদি দোকানের মালিক বলল, দিন নাই, রাত নাই দোকান চালাই, তবু ঈদের সময় ঠিকমতো কর্মচারীদের বেতন দিতে পারি না। আসলে চাল, ডাল, পিয়াজ, লবণ বেইচ্যা পোষায় না। সবাই খালি বাকিতে নিতে চায়। চিন্তা করতেছি আগামীতে আমার মুদি দোকানে আমি ট্রেনের টিকিট বিক্রি করুম। তাইলে কেউ বাকিতে নিতে চাওয়ার সাহস করব দূরের কথা, অগ্রিম টাকা নিয়া দোকানের সামনে লাইন দিয়াই কূল পাইব না। আমার ভার্সিটি লাইফের এক রুমমেটের সঙ্গে দেখা অনেক দিন পর। কুশলবিনিময় শেষে ঈদে বাড়ি ফেরা এবং টিকিট বিষয়ে কথা উঠল। সে বলল, ছাত্রজীবনে আমরা মূল সার্টিফিকেটের বিকল্প হিসেবে ফটোকপি দিয়ে কাজ চালাতাম না? ওই যে ফটোকপিটা গেজেটেড অফিসার দিয়ে সত্যায়িত করে নিতাম, মনে নেই? আমি বললাম, মনে আছে। এখন তুই কী বলতে চাচ্ছিস? রুমমেট বলল, না মানে আমরা যদি একটা টিকিট কিনে ফটোকপি করে গেজেটেড অফিসার দিয়ে সত্যায়িত করে নিই আর কি। আমার পরিচিত গেজেটেড অফিসার আছে তো!

সর্বশেষ খবর