প্রচণ্ড হতাশ হয়ে পড়েছিলাম। নিজের ওপর আশা হারিয়ে পুরাই বিপর্যস্ত আমি। তাই অসহায় আমি তাকিয়ে তাকিয়ে বড় নৌকাগুলোর চলাচল দেখতাম। ছোট হওয়ায়, স্রোতের মুখে টিকব না ভেবে আমাকে পাড়েই রেখে যাওয়া হয়। কতটা কষ্টের যে ব্যাপারটা— আমি ঠিক বুঝিয়ে বলতে পারছি না। লেখক হলে নিশ্চিত একটা আত্মজীবনী লিখে ফেলতাম, কষ্টের সঙ্গে বসবাস নামে। ফেসবুকে আইডি থাকলে কষ্টগুলো স্যাড ইমো দিয়ে স্ট্যাটাস দিতাম।
হতাশ হতে হতে চূড়ান্ত হতাশ হয়ে যখন আমি নিজেকে বাতিলের খাতায় ফেলে দিয়েছি তখন ঘটনাটা ঘটল। কয়েক দিন প্রচণ্ড বৃষ্টি হয়েছে। টানা বৃষ্টি। আবহাওয়া অফিসের লোকজনের কপালে ভাঁজ পড়েছে। রেকর্ড ভাঙা বৃষ্টি! শহরের অলিগলিতে পানি। এমন বর্ষণমুখর এক দিন একজন শুকনো নদী থেকে তুলে সে পানিতে নিয়ে এলো আমায়। শহরের রাস্তায় আমার প্রথমবারের মতো আসা। মানুষ উত্সুক দৃষ্টিতে তাকায়। গলিপথ প্রায় পুরোটাই দখল করে আমি রাজার মতো চলি। সবাই উঠতে চায়। রাস্তার দুই পাশের বিল্ডিংয়ের গেটগুলো থেকে ডাক আসে এদিকে এদিকে। সে কী ডিমান্ড আমার! নদীর পাড়ে পড়ে থাকার কষ্টগুলো আমি ভুলে যাই। আমার খুব ইচ্ছে করে আমার এ ডিমান্ড নদীর বড় নৌকাগুলোকে ডেকে দেখাতে। মাঝে মাঝে অনেক সুন্দর সুন্দর তরুণীও আমার ওপর ওঠে। তাদের দেখলেই মন ভালো হয়ে যায় আমার। এতদিনের হতাশা নিমিষেই দূর হয়ে যায়। আমি চলতে থাকি দুর্দান্ত প্রতাপে। এখানে আমিই রাজা! আমার প্রিয় ঋতু বর্ষাকাল। এখন থেকে আমি সব হতাশা ভুলে প্রতি বছর এ সময়গুলোর অপেক্ষায় থাকব। তবে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা নাকি বলেছেন, সামনের বছর আর রাস্তায় জলাবদ্ধতা থাকবে না। তবে আমার দৃঢ়বিশ্বাস তাদের কথা বিশ্বাস না করলেইবা কী? তারা অনেক কথাই তো বলেন। সব কি আর রাখে?
— মো. হাসান মুন্নামেম্বারপাড়া, বান্দরবান সদর বান্দরবান পার্বত্য জেলাহা