শিরোনাম
সোমবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

চালের হালচাল

এক লোক ওষুধ কিনছিল। দোকানি যখন একেবারেই ছোট্টছোট্ট ট্যাবলেট দিল তখন সে বলে উঠল, এত ছোট ট্যাবলেট ক্যান? বড় ট্যাবলেট দেন। যাতে দুইটা খাইলে আর ভাত খাইতে না হয়

ইকবাল খন্দকার

চালের হালচাল

কার্টুন : কাওছার মাহমুদ হ আইডিয়া ও ডায়ালগ : তানভীর আহমেদ

আমার এক বন্ধু জিজ্ঞেস করল, তোর খোঁজে কি ভালো ফটোগ্রাফার আছে? ভালো ফটোগ্রাফার বলতে শুধু ভালো ছবি তুলতে জানলেই চলবে না। আচার ব্যবহারও ভালো হতে হবে। বিশেষ করে মেজাজ হতে হবে পানির মতো ঠাণ্ডা। গায়ে মানুষের কুনুইর গুঁতো লাগলেও রাগ তো করবেই না, মুখের কথাটাও বলবে না। আপন মনে ছবি তুলে যাবে। আমি বললাম, ভালো ফটোগ্রাফারের সংজ্ঞা যে এমন, আমি বাপের জন্মেও শুনিনি। তুই আমাকে খুলে বল তো এই টাইপের আজব কোয়ালিটির ফটোগ্রাফার কেন চাচ্ছিস? বন্ধু বলল, আসলে হয়েছে কি, ফটোগ্রাফার নিয়ে আমি এক জায়গায় যাব। আর যেখানে যাব, সেখানে প্রচুর ধাক্কাধাক্কি থাকতে পারে, কুনুইর গুঁতাগুঁতি থাকতে পারে। কিন্তু ফটোগ্রাফারকে রাগ করলে চলবে না, বিরক্ত হলে চলবে না। ছবি তোলা বন্ধ করলেও চলবে না। আমি বললাম, জায়গাটা কোথায়? আর ছবিই বা তুলবি কিসের? বন্ধু বলল, জায়গাটা হচ্ছে চালবাজার। আর ছবি তুলব ডুয়েট। মানে চালের পাশে আমি দাঁড়াব, ব্যস, ছবি উঠতে থাকবে। আসলে হয়েছে কী, সবাই তো স্টারদের সঙ্গে ছবি তুলতে চায়। চাল হাল আমলের সবচেয়ে বড় স্টার তো, তাই চালের স্তূপের পাশে দাঁড়িয়ে ভালো রেজুলেশনের কিছু ছবি তুলতে চাই। যাতে ফেসবুকের প্রোফাইল পিক বানাতে পারি। পরিকল্পনা ঠিক আছে না?

আমার এক ছোটভাই রীতিমতো সিনেমার পোকা। আমি ঠাট্টা করে তাকে বললাম, ভুল করে ফেললি ছোটভাই। সিনেমার পোকা না হয়ে যদি চালের পোকা হতি, তা হলে চালের আড়তে থাকতে পারতি। জীবনটা বড় মধুময় হয়ে যেত রে পাগলা। ছোটভাই বলল, চালের আড়ত বা চালের স্তূপের কাছাকাছি থাকার জন্য চালের পোকা হওয়ার দরকার নেই ভাই। সিনেমার পোকা হয়েও কিন্তু সেটা সম্ভব। আমি জানতে চাইলাম, কীভাবে? ছোটভাই বলল, কীভাবে আবার? পুরনো দিনের একটা জনপ্রিয় সিনেমা ছিল না ‘ভাত দে’? আমি সেই সিনেমার আদলে একটা সিনেমা বানাব, ‘চাল দে’। আমার এক প্রতিবেশী বলল, সেই তো চালের দাম বাড়ল, বছর খানেক আগে বাড়ল না। আগে বাড়লে আমার এত বড় ক্ষতিটা হতো না। আমি বললাম, আপনার কথার আগামাথা কিছুই বুঝতে পারছি না। একটু বুঝিয়ে বলবেন কি? প্রতিবেশী বুঝিয়ে বললেন, আজকাল চালের দাম বেড়েছে বলে ভাত কম খাচ্ছি। আর ভাত কম খাওয়ার কারণে আমার ভুঁড়িটাও একটা স্ট্যান্ডার্ড মাপে চলে এসেছে। আগের মতো বেখাপ্পা আর নেই। অথচ বছরখানেক আগে যখন চালের দাম প্রায় অর্ধেক ছিল, তখন গলা পর্যন্ত ভরে ভাত খেতাম। এতে ভুঁড়ি হয়ে গিয়েছিল বিরাট। এই বিরাট ভুঁড়ির চাপ লেগে হঠাৎ একদিন আমার দামি শার্টের বোতামটা পট করে খুলে ছিটকে পড়ে গেল। কত খুঁজলাম, পেলাম না। এরপর আর সেইম কালারের বোতাম মেলাতে পারিনি বলে শার্টটা এখনো অকেজো। আহারে! আমার বাসার পাশের দোকানদার বলল, চালের কারণে আমার পুরনো বাতের ব্যথাটা আবার বাড়ছে। কী যে করি! আমি অবাক হয়ে বললাম, মানে? দোকানদার বলল, হ, রাইতে যদি হাত-পা মেইলা ঘুমাইতে না পারি, যদি হাত-পা জমায়া গোল হইয়া শুইতে হয়, তাইলে সকালে আর হাঁটতে পারি না। হাতে পায়ে ব্যথা পাই। আমি বললাম, আপনার শোয়ার দোষে হাতে পায়ে ব্যথা হয়েছে। আপনি এই দোষ চালের ওপর চাপাচ্ছেন কেন? দোকানদার বলল, দোষ তো চালেরই। আগে দোকানে বস্তা-বস্তা চাল থাকলেও দোকানে ঘুমাইনি। রাত ১০টার দিকে দোকান বন্ধ কইরা বাড়িত চইলা গেছি। এখন চালের দাম বাইড়া যাওয়ায় যেহেতু শুধু চালের কারণে দোকানে ডাকাতি হওয়ার আশঙ্কা আছে, তাই বাধ্য হইয়া দোকানে ঘুমাইতে হয়। আর দোকানে জায়গা অল্প। এই অল্প জায়গায় হাত পা জমায়া ঘুমাইতে গিয়াই তো এত ব্যথা... তার কথা শেষ না হতেই পাশের দোকানে দেখি এক লোক ওষুধ কিনছিল। দোকানি যখন একেবারেই ছোট্টছোট্ট ট্যাবলেট দিল তখন সে বলে উঠল, এত ছোট ট্যাবলেট ক্যান? বড় ট্যাবলেট দেন। যাতে দুইটা খাইলে যেন আর ভাত খাইতে না হয়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর