সোমবার, ১২ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা

মশার রাজ্যে রাজামশাই

ইকবাল খন্দকার

মশার রাজ্যে রাজামশাই

♦ আইডিয়া ও ডায়ালগ : তানভীর

ছোট ভাই বলল, আরে না, রক্তের মায়া না। এখন জীবনের মায়া। বিশেষ করে ঘরের মায়া। আমি অবাক হয়ে বললাম, ঘরের মায়া মানে? ছোট ভাই বলল, আসলে হয়েছে কী, এখন মশার সংখ্যা এত বেড়েছে যে, আমার ভিতর এই ভয় ঢুকে গেছে মশারি না টানালে তারা আমাকে উঠিয়ে নিয়ে যাবে

 

মশারা সবসময়ই সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল। তবে এখনকার অবস্থা ভয়াবহ। সাংঘাতিক পরিমাণে বেড়ে গেছে মশা। মশা বাড়ার কারণ কী? এই প্রশ্ন রেখেছিলাম আমার এক প্রতিবেশীর কাছে। প্রতিবেশী বললেন, আমার ধারণা, একটা বিশেষ মহলের উসকানিতে মশারা বেশি বেশি সন্তান নিতে মানে ডিম পাড়তে উৎসাহী হচ্ছে। আর এতে বেড়ে যাচ্ছে মশার সংখ্যা। আমি বললাম, তা তো বুঝলাম। কিন্তু আপনি এই যে, বিশেষ মহলের উসকানির কথা বললেন, এই বিশেষ মহলটা কোনটা? তাজমহল না তো? প্রতিবেশী বললেন, বেহুদা কথা কেন বলেন? এখানে তাজমহলের কথা আসছে কেন? বিশেষ মহলটা হচ্ছে সেই মহল, যারা কয়েল বা মশারি তৈরির সঙ্গে জড়িত।  তারা মশাকে কেন বেশি বেশি সন্তান নিতে উৎসাহী করতে পারে, বুঝতে পারছেন তো? বুঝতে না পারলে বোঝাচ্ছি। বলেই প্রতিবেশী আটঘাট বেঁধে বসলেন আমাকে বিষয়টা ভালো করে বোঝানোর জন্য। আর আমি আস্তে করে কেটে পড়লাম। কেটে পড়ে যখন হেঁটে যেতে লাগলাম বাজারের দিকে, তখন দেখা আমার আরেক প্রতিবেশীর সঙ্গে। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, কোথায় যাচ্ছেন? প্রতিবেশী বললেন, আগুন পোহানোর ব্যবস্থা করতে যাচ্ছি। আমি অবাক হলাম, আরে বলেন কী! শীতকাল চলে গেছে সেই কবে। এখন আগুন পোহানোর ব্যবস্থা করতে যাচ্ছেন মানে? প্রতিবেশী বললেন, না, মানে মশাদের আগুন পোহানোর ব্যবস্থা করতে যাচ্ছি। মানে কয়েল কিনতে যাচ্ছি। আপনি জানেন কিনা জানি না, মশারা আজকাল সংখ্যায় এত বেশি বেড়ে গেছে যে, কয়েল দেখলে তারা ঠাট্টা-মশকরা করে। লাইন ধরে কয়েলের ওপর বসে আগুন পোহায়। আমার ধারণা, এই সময় তারা রাজনৈতিক আলাপ আলোচনাও করে থাকে। মশাদের চা খাওয়ার অভ্যাস থাকলে হয়তো চা-ও খেত। আমার এক ছোট ভাই বলল, আগে আমি মশারি টানাতাম না। কারণ, মশারা দুই-চার চুমুক রক্ত খেলে কিছুই হবে না, এমন একটা বিশ্বাস ছিল। কিন্তু এখন মশারি টানাই। আমি বললাম, কেন? এখন মশা রক্ত খেলে মায়া লাগে বুঝি? ছোট ভাই বলল, আরে না, রক্তের মায়া না। এখন জীবনের মায়া। বিশেষ করে ঘরের মায়া। আমি অবাক হয়ে বললাম, ঘরের মায়া মানে? ছোট ভাই বলল, আসলে হয়েছে কী, এখন মশার সংখ্যা এত বেড়েছে যে, আমার ভিতর এই ভয় ঢুকে গেছে মশারি না টানালে তারা আমাকে উঠিয়ে নিয়ে যাবে। তো ঘর থেকে উঠিয়ে নিয়ে গেলে খুঁজে পাওয়াটা দুষ্কর হয়ে যাবে না? এ ছাড়া মশারা উঠিয়ে নিয়ে গেছে, এই খবর জানাজানি হলেও তো শরমে মুখ দেখানো দুষ্কর হয়ে যাবে। ঠিক কিনা? আমার বড় ভাই বললেন, মশার সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় একটা সুবিধা বেশ ভালো করেই হয়েছে। এখন আর তোর ভাবী কথায় কথায় আমার গায়ে হাত তোলার সুযোগ পায় না। কারণ, এখন তার হাত ব্যস্ত থাকে মশা মারার কাজে। আরেকটা ব্যাপার। আগে টিকটিকির টিকটিকানির জন্য প্রায় রাতেই ঘুমের ডিস্টার্ব হতো। এখন আর তা হয় না। কারণ, টিকটিকিরা এখন টিকটিক করার সময়ই পায় না। সারা রাতই মশা খাওয়ার কাজে ন্যস্ত এবং ব্যস্ত থাকে কিনা!

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর