সোমবার, ১৬ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা

বাস্তববাদী

আফরীন সুমু

বাস্তববাদী

একটা দৈত্য বের হয়ে বলল, তোমার তিনটা ইচ্ছা পূরণ করতে চাই, তখন? হাসান ভ্রু কুঁচকে তাকাল। তারপরও কয়েক সেকেন্ড পর বলল, আমি তো আলাদিনের চেরাগে বিশ্বাসী নই

 

হাসান অত্যন্ত বাস্তববাদী। যুক্তির বাইরে কথা বলে না। তবে মেয়েদের মন বোঝা একরকম অসম্ভব। এই তথ্যটি হাসান এখনো যুক্তি দিয়ে খণ্ডাতে পারেনি। এক দিন হাসানের বউ সুমির হঠাৎ মনে হলো, এই মুহূর্তে কেউ যদি তাকে তিনটি বর দিতে চায়, তবে সে কি চাইতে পারে? সুমি ভাবতে বসল, কি চাওয়া যায়। এ যুগের মেয়েদের তুলনায় সে যথেষ্ট বুদ্ধিমতী। সে শাড়ি-গয়নার মতো যেন তেন জিনিস চাইবে না। অনেক ভেবেচিন্তে সুমি তিনটি জিনিস ঠিক করল। সুস্বাস্থ্য, দীর্ঘায়ু এবং জ্ঞান। ঠিক করার পর নিজেকে তার বেশ স্মার্ট মনে হলো। কয়টা মেয়ে এমন করে ভাবে? বিষয়টা হাসানকে জানানো দরকার। ওকে বলতে না পারা পর্যন্ত সুমি স্বস্তি পাবে না। তবে সে বোকামি করবে না। হাসানকে আগেই বলবে না সে কি ভেবে রেখেছে। আগে শুনবে হাসান কি ভাবে। ও নিশ্চয়ই তার থেকে ভালো কিছু ভাবতে পারবে না। পরিকল্পনা মতো সুমি হাসানকে জিজ্ঞসাা করল। বলল, এই ধর কেউ একজন হঠাৎ করে এসে বলল, সে তোমার তিনটা ইচ্ছা পূরণ করবে। কি চাইবে তখন তুমি? হাসান যুক্তিসহকারে বলতে শুরু করল, ধর এক দিন সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে শুনলাম তুমি আমার তিনটা ইচ্ছা পূরণ করতে চাও। এমনটা কি হতে পারে? সুমি একটু ভেবে বলল, হ্যাঁ তাও হতে পারে। হাসান বলল, তাহলে আমি প্রথমেই চাইব, তুমি বিছানায় আমার হাত মুখ ধোয়ার ব্যবস্থা করবে। দ্বিতীয়ত নাস্তা করার জন্য ডাইনিংয়ে ডাকবে না, বিছানায় বসে খেতে দেবে। এবং সর্বশেষ, নাস্তা করে সঙ্গে সঙ্গে আবার ঘুমিয়ে গেলে চিৎকার চ্যাঁচামেচি করবে না। সুমি একটু রেগে গেলেও প্রকাশ করল না। বলল, নাহ, মনে কর আমি নই, বাইরের কেউ। ওকে কথা শেষ করতে না দিয়েই হাসান বলে উঠল, হ্যাঁ, মনে কর এক রিকশাওয়ালা আমাকে বলল, মামা আমি আইজকা আপনের তিনডা ইচ্ছা পূরণ করমু। আপনে যেমনে কন। তাহলে আমি প্রথমেই বলব, মামা ধীরে-সুস্থে চালান। দ্বিতীয়ত. গর্ত থেকে সাবধান। এবং তৃতীয়ত. আপনার জীবনকাহিনী শোনানো থেকে বিরত থাকবেন। সুমির মেজাজ আরও একধাপ চড়ল। এরকম চলতে থাকলে তো তার কিছু বলা হবে না। তবু শেষবার বোঝানোর চেষ্টা করল। বলল, নাহ, এসব না। ধর তুমি হঠাৎ করে একটা আলাদিনের চেরাগ পেলে। একটা দৈত্য বের হয়ে বলল, তোমার তিনটা ইচ্ছা পূরণ করতে চাই, তখন? হাসান ভ্রু কুঁচকে তাকাল। তারপরও কয়েক সেকেন্ড পর বলল, আমি তো আলাদিনের চেরাগে বিশ্বাসী নই। আলাদিনের চেরাগ বলে কিছু নেই। হাসান আরও কিছু বলত। কিন্তু সুমি বারুদের মতো ফাটল। কেন বিশ্বাস কর না? রূপকথা হোক আর যাই হোক বিশ্বাস করতে হবে। তিনটা বর তোমাকে অবশ্যই চাইতে হবে। যুক্তিবাদী হাসানের সেদিন রাহুর দশা চলছিল। তাই মুখ ফসকে বের হয়ে গেল, প্রথমেই আমি চাই, তুমি গলার ভলিউমটা একটু কমাও। দ্ব্বিতীয়ত... বাকি ঘটনা ইতিহাস। এক দিন হাসানের সঙ্গে দেখা হয়েছিল রাস্তায়। বাস্তববাদী হাসান এখনো বোঝার চেষ্টা করে চলছে, মাঝে মাঝে মেয়েদের আসলে হয় কি?

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর