সোমবার, ২৩ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা
পাঠকের লেখা

কলা নিয়ে ছলাকলা

কলা নিয়ে ছলাকলা

কথায় বা কাজে কিছু মানুষ প্রতিনিয়তই অহরহ ছলাকলা করে। ছলাকলায় মানুষকে ভুলিয়ে আপন স্বার্থসিদ্ধি করে। মিষ্টি কথার টানে কেউ না কেউ ফাঁদে আটকা পড়ে যায়। যে যাই বলুক, তাতে ছলনাকারীদের কিছু যায় আসে না। তবুও ছলাকলার শেষ হয় না। তেমনি একদিন ছলাকলার ফাঁদে পড়েছে বুলবুল।

কয়েক বছর আগের কথা। বুলবুল তখন নওগাঁ সরকারি কলেজের ছাত্র। পড়ত অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে। শহরের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে ছোট যমুনা নদী। বুলবুল থাকে বাঙ্গাবাড়িয়া কলেজপাড়ায়। মেস থেকে একটু হাঁটলেই নদীটি দেখা যায়। প্রায় প্রতিদিনই নদীর পাড়ে ঘুরতে বের হয়।

যথারীতি একদিন কয়েক বন্ধুসহ নদীর পাড়ে বেড়াতে আসে। কিছুক্ষণ পরে সবাই মেইন রোড সংলগ্ন বড় ব্রিজে পৌঁছে। ব্রিজের ওপর প্রতিদিনই একজন কলা বিক্রেতা কলা বিক্রি করেন। দোকানের আশপাশে লোকের জমজমাট ভিড় থাকে। ছোট বড় হরেক রকমের কলা পাওয়া যায়। কলা খেতে বুলবুলের খুব ভালো লাগে।

বিক্রেতা বললেন, ‘এই যে ভাই, টসটসে পাকা কলা। একটা খেয়ে দেখেন। দাম লাগবে না। না খেলে পস্তাবেন।’ বারবার তিনি একই কথা বলতে লাগলেন। অবশেষে বুলবুল কলা মুখে দিল। খেয়ে তো মুখ একদম নষ্ট। কলা না শক্ত কচু? বিক্রেতাকে অনেক ধমক দিল। বিক্রেতা বললেন, ‘ভাই, ওই কলাটাই শুধু কম পাকা ছিল। এবার একটা কলা দিচ্ছি মুখে দেন। প্রাণ ভরে খান।’ বুলবুলকে যে কেউ কলা খেতে বললে না বলতে পারে না। আগেই বলেছি, কলা খেতে বুলবুলের খুব ভালো লাগে।

অতঃপর বুলবুল আবারও একটা পাকা কলা মুখে দিল। এবারের কলাটা বেশ নরম। কিন্তু সেকি? খেতে ভয়ানক বিস্বাদ! বিষাক্ত পদার্থ দিয়ে কাঁচা কলা ম্যাজিকের মতো পাকানো হয়েছে। অনেকক্ষণ ধরে বিক্রেতার সঙ্গে বন্ধুসহ বুলবুলের তর্ক-বিতর্ক চললো। ঘটনাস্থলে অনেক লোক ছুটে এলো। কার কথা কে শোনে? তুমুল তর্ক-বিতর্ক শেষে বুলবুল চলে আসতে চাইছে। বিক্রেতা বললেন, ‘কলা না কিনলেও ভালো। এই কলাই অনেকে পায় না। আপনার কত ভাব বুঝেছি!’ দুই-দুইটা কলা খেয়েছেন। দাম দিয়ে যান। নইলে এক পা ফেলতে দেবো না।’ বুলবুল কী আর করবে? কলা খেয়েছে ফ্রি ফ্রি। সামলাতেই হবে বেগতিক অবস্থা। বুলবুলকে কলার সম্পূর্ণ দাম পরিশোধ করতে হলো। বেজায় অখুশি হয়ে মেসে ফিরছে। মনে মনে বলতে লাগল, ‘কলা নিয়ে একি ছলাকলা? তাও আবার আমার খুব ভালো লাগা ফল। যাই যাই ফিরে যাই। এখান থেকে যত তাড়াতাড়ি যেতে পারব, ততই নিরাপদে থাকব।’

 

লেখা : শফিকুল ইসলাম শফিক

কনইল, ভীমপুর, নওগাঁ

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর